পার্থ চট্টোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
গত এপ্রিলে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে এফআইআর করেছিল সিবিআই। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করে ইডি-ও। সূত্রের দাবি, তখন থেকেই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমান শিল্পমন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের উপর নজরদারি শুরু হয়। তখনই জানা যায়, টালিগঞ্জ করুণাময়ীতে ডায়মন্ড সিটি আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর। যাঁর বাড়িতে যেতেন, তাঁর সম্পর্কেও খোঁজ নিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
তাই শুক্রবার যখন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে এক মহিলার ছবি (লেখা ‘অর্পিতা ডায়মন্ড পার্ক’) পাওয়া যায়, তাঁকে চিনতে বেগ পেতে হয়নি তদন্তকারীদের। ইডি সূত্রের দাবি, মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত, অভিনেত্রী-মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ছবি ছিল সেখানে এবং ছবি দেখে মন্ত্রীর দাবি, ‘‘আমার দলীয় সহকর্মী। কাছাকাছি থাকেন।’’
ইডি সূত্রের দাবি, পার্থের বাড়ির অফিসে তল্লাশিতে একাধিক সাদা কাগজ পাওয়া গিয়েছে, যাতে অর্পিতার নাম লেখা। নামের পাশে কোথাও ‘ওয়ান-সিআর’ আবার কোনও কাগজে ‘ফোর-সিআর’ লেখা। পাশে লেখা তারিখ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই কাগজ দেখেই তাঁরা অনুমান করেছিলেন যে অর্পিতার কাছে কত টাকা রাখা আছে, তার সাঙ্কেতিক হিসাব রয়েছে ওই কাগজগুলিতে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘কাগজে লেখা ‘সিআর’ দেখেই আমরাঅনুমান করেছিলাম, সেটা আদতে কোটি লেখা। খেলাটা কোটি কোটি টাকার।’’
এর পরেই অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির বাড়িতে হানা দিয়ে সাড়ে ২২ কোটি টাকা, দেড় কেজি সোনার গয়না এবং লক্ষাধিক ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। অর্পিতার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি সম্পত্তির দলিল উদ্ধার হয়েছে। সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা, দাবি করছেন তদন্তকারীরা। তবে, এ সবই মোট অঙ্কের অংশমাত্র বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রের দাবি, যাঁরা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে কয়েকশো কোটি টাকার হিসাব পাওয়া গিয়েছে। অফিসারদের অনুমান, ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ আরও অনেকের কাছে টাকা আছে এবং কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পার্থের একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়িতে তল্লাশি করলে ওই টাকা পাওয়া যেতে পারে। পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ শান্তিনিকেতনের এক শিক্ষিকার সম্পত্তির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলেও ইডি সূত্র জানিয়েছে।
পার্থ ও অর্পিতাকে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে ইডি সূত্রের অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিতে আরও ‘প্রভাবশালী’রা জড়িত এবং তাঁদের কাছ থেকেও বেআইনি ভাবে নিয়োগের জন্য পার্থের কাছে সুপারিশ এসেছিল।
তদন্তকারীদের দাবি, পার্থের বাড়ি থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে এবং তা যাচাই করে নামে-বেনামে বেশ কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস মিলতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতির আর্থিক লেনদেনের লভ্যাংশের টাকায় পার্থ নামে-বেনামে সম্পত্তি কিনেছেন এবং তার অধিকাংশ গত ছয় বছরে কেনা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পার্থ যে সব বিনিয়োগ করেছেন, তা তাঁর আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক দাবি। ডায়মন্ড পার্কের ফ্ল্যাটে বছর তিনেক রয়েছেন অর্পিতা। সেখানেও পার্থের ফ্ল্যাট থাকতে পারে বলে দাবি ইডি-র। তবে এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পার্থের আইনজীবী দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘কোনও সমন ছাড়াই সত্তর বছর বয়সি এক জন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ পার্থের বাড়ি থেকে কয়েকটি দলিল ছাড়া কোনও টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।’’
তদন্তকারীদের দাবি, শুক্রবার সারা দিন বাগ কমিটির রিপোর্ট, এসএসসি-র উপদেষ্টা, শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব ও একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষাকর্তাদের কাছ থেকে নেওয়া বয়ান সামনে রেখে পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কিন্তু কোনও প্রশ্নের তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। দুপুরে অর্পিতার বাড়ি থেকে নগদ টাকা, গয়না উদ্ধার হওয়ার পরে দিল্লির কর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন কলকাতার কর্তারা। পার্থ তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে জানানো হয়। দিল্লি থেকে রাতে অতিরিক্ত ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসার এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অভিযোগ, তখনও পার্থের তরফে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এর পরেই দিল্লির কর্তাদের সঙ্গে ‘ভয়েস কল’-এ বৈঠক করে পার্থকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy