রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
গ্রেফতারের পর থেকে বার বার জেরা করা সত্ত্বেও রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কখনওই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা সরাসরি স্বীকার করেননি বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অভিযোগ। এই অবস্থায় আইনজীবী শিবিরের একাংশের অভিমত, বিচার ভবনের আদালতে মঙ্গলবার ভার্চুয়াল শুনানিতে পার্থ এবং তাঁর ‘বান্ধবী’ অর্পিতা নিজেদের অজানতেই তদন্তকারীদের হাতে মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। যে-ভাবে তাঁরা পরস্পরকে ইশারা-ইঙ্গিত করছিলেন, চোখে চোখে হাসি বিনিময়ে মেতে উঠেছিলেন, সেই খুনসুটি তাঁদের সম্পর্ক প্রমাণে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য সশরীরে হাজির থাকলেও পার্থ ও অর্পিতা ভার্চুয়াল শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানি চলাকালীন আদালত কক্ষে এলইডি মনিটরে পার্থ-অর্পিতাকে বার বার হাসাহাসি, খুনসুটি করতে দেখা যায়। বিষয়টি ধরা পড়ে উপস্থিত আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ ও বিচার বিভাগীয় কর্মীদের চোখে। কানাঘুষো শুরু হয় উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে। এক আইনজীবী বলেন, ‘‘বিষয়টি হয়তো বিচারকেরও নজরে পড়েছে। আদালতে উপস্থিত সকলেই বিষয়টি দেখেছেন। সে-ক্ষেত্রে বিচারকের নজরে পড়া স্বাভাবিক।’’
ইডি সূত্রের খবর, গত জুলাইয়ে অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি নগদ টাকা, সাড়ে চার কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা এবং প্রচুর গয়না বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পার্থকে গ্রেফতার করার পরে অর্পিতা সম্বন্ধে তাঁর বয়ান ছিল, তিনি অর্পিতাকে চেনেন না। ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। অর্পিতা অবশ্য নিজের বয়ানে জানিয়েছিলেন, তাঁর ফ্ল্যাটে রাখা টাকা ও গয়না পার্থের। ওই টাকা ও গয়নায় তাঁর কোনও অধিকার ছিল না। পার্থ ও অর্পিতার একাধিক যৌথ সংস্থা ও সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি। এমনকি পার্থই যে অর্পিতার জীবন বিমার নমিনি, সেই নথি তদন্তারীদের হাতে পৌঁছেছে। সে-ক্ষেত্রে পার্থ ও অর্পিতার সম্পর্ক স্ফটিকের মতো পরিষ্কার বলে কৌঁসুলি শিবিরের একাংশের মত।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, ভার্চুয়াল শুনানিতে দুই অভিযুক্তের খুনসুটি আদালতগ্রাহ্য জোরদার তথ্যপ্রমাণ নয়। কিন্তু পার্থ যে তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করার জন্য অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে আসছিলেন, সেটা প্রকাশ্য আদালতে প্রদর্শিত হয়ে গেল। ইডি-র এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, ওই সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশকর্মী এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা পুরো ঘটনার সাক্ষী রয়ে গেলেন। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন এই তথ্য তুলে ধরা হবে। প্রয়োজনে জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানিতেও ওই তথ্য ব্যবহার করা হতে পারে।
আইনজীবী শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, দুই অভিযুক্তের প্রকাশ্য খুনসুটি এই মামলায় তদন্তকারী সংস্থাকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। নিজেকে দুর্নীতি ও টাকা লুটের ঘটনা থেকে আড়াল করার জন্য পার্থ যে মিথ্যা বয়ান দিয়ে চলেছেন, তার প্রমাণ হিসেবে ওই ঘটনাকে ব্যবহার করতে পারেন তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে অর্পিতার বয়ান যে ঠিক, ওই ঘটনায় তা কার্যত প্রতিষ্ঠিত হল বলে মনে করছেন অনেক কৌঁসুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy