সেহগাল হোসেন। ফাইল চিত্র।
গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকে সাত দিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করতে পারবে ইডি। এ দিন দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, রোজই সেহগালের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে।
সেহগাল তদন্তে অসহযোগিতা করছেন— ওই যুক্তিতে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দিল্লিতে জেরা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইডি। সেই মতো তাঁকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত কাল বিকেলে আসানসোল থেকে ট্রেনে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়। আজ সকালে ৯টায় ওই ট্রেনটির পুরানো দিল্লি স্টেশনে আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ট্রেনটি দিল্লি পৌঁছয়। দিল্লি নেমেই সেহগালকে নিয়ে বেলা সাড়ে বারোটার মধ্যে রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকেরা। কিন্তু সে সময়ে সেহগালের আইনজীবী ক্ষিতীজ কুমার আদালতে উপস্থিত না থাকায় বেলা দু’টোর পর ওই মামলার শুনানি হবে বলে জানান বিচারপতি।
পরে শুনানি শুরু হলে ইডি-র আইনজীবী নীতীশ রাণা কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ তুলে দাবি করেন, আজ থেকেই সেহগালের ইডি হেফাজত শুরু হওয়ার কথা। তিনি আগামী ১৪ দিন সেহগালকে ইডি-র হেফাজতে রাখার আবেদন জানান। বিচারক তখন কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের কোন অংশে ওই নির্দেশ রয়েছে, তা জানতে চান। নীতীশ তা দেখাতে ব্যর্থ হলে ক্ষুব্ধ বিচারক সাময়িক বিরতির ডাক দিয়ে বলেন, দশ মিনিটের বিরতির পরে ইডি ওই নির্দেশ না দেখাতে পারলে সায়গলকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেবে আদালত।
সাময়িক বিরতির পরে আদালত বসলে ইডি-র আইনজীবী কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের ওই অংশটি বিচারপতিকে দেখান। পাল্টা যুক্তিতে সেহগালের আইনজীবী বলেন, মামলায় মূল যে অভিযুক্ত, তাঁর দেহরক্ষী ছিলেন সেহগাল। তাঁর সঙ্গে দুর্নীতির সরাসরি কোনও যোগ নেই। তাই তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হোক। ইডির পক্ষে তখন বলা হয়, গরু পাচারের টাকা কী ভাবে এক হাত থেকে অন্য হাতে গিয়েছে, কার কাছে ওই টাকা গিয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন ইডি আধিকারিকেরা। সেই টাকার গতিপথ বোঝার জন্য সেহগালকে হেফাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন রয়েছে। তাঁদের এ-ও দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের হয়ে এনামুল হক, সতীশ কুমার, আব্দুল লতিফদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন সেহগাল। তাই পাচারকাণ্ডের সামগ্রিক ছবিটি বুঝতে সেহগালকে দু’সপ্তাহের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানান ইডি আইনজীবী। পাল্টা আবেদনে সেহগালের আইনজীবী বলেন, ইডি ইতিমধ্যেই আসানসোল সংশোধনাগারে গিয়ে সেহগালকে জেরা করেছে। নতুন করে জেরার কেন প্রয়োজন, তার কোনও যুক্তি দেখাতে ব্যর্থ ইডি।
দু’পক্ষের শুনানির পরে সেহগালকে সাত দিনের জন্য দিল্লিতে ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু ওই সাত দিনই সেহগালের শারীরিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর পরেই বিকেলে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে সেহগালের শারীরিক পরীক্ষা হয়। ইডি সূত্রের মতে, রাত থেকেই শুরু হতে পারে জেরা-পর্ব। শুনানি পর্ব চলাকালীন সেহগালের আইনজীবী আবেদন করেন, তাঁর মক্কেল ফোন করে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। সেই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
সেহগালকে ইডি-র দিল্লি নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এ দিন বীরভূমের সিউড়িতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টে ১৫-২০ লক্ষ টাকা সাম্মানিক নেওয়া আইনজীবী সেহগালদের পক্ষে সওয়াল করেছেন। এর পরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পাওয়া কোনও কনস্টেবলের পক্ষে এই আইনজীবীদের টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এটা বুঝতে হবে, সেহগাল হোসেন যাতে দিল্লি না যান, তার জন্য অর্থ খরচ, তার পিছনে বড় মাথারা আছে।’’ তৃণমূল নেতা তাপস রায় পাল্টা বলেন, ‘‘তদন্তের ভার তো তদন্ত সংস্থার হাতে, শুভেন্দুর হাতে নয়। প্রত্যেক দিন একবার করে তিনি সেই দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছেন বলেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy