Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Abhijit Vinayak Banerjee

ভোটের মুখে খয়রাতির পক্ষে নন অভিজিৎ

দরিদ্রের অর্থনীতি তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণার বিষয়। অভিজিৎ স্পষ্টই বললেন, ভোটের আগে খয়রাতি গরিব মানুষকে সাহায্য করার সেরা পন্থা নয়। তবে খয়রাতি একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার কথাও তিনি বলেননি।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৭
Share: Save:

প্রাক-নির্বাচনী খয়রাতি গরিব মানুষকে সাহায্য করার সেরা পন্থা নয়, মন্তব্য করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। অতিমারি থেকে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গরিব মানুষের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন যিনি, তাঁর মুখে এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ নিঃসন্দেহে। প্রধানমন্ত্রী যাকে ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’ বলেছেন, শীর্ষ আদালতে যে খয়রাতির অধিকার/অনধিকার নিয়ে মামলা চলছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতেও অর্থনীতিবিদের এই পর্যবেক্ষণ আলাদা করে অর্থবহ হয়ে উঠছে।

শনিবার দিল্লিতে ‘ভাল অর্থনীতি, খারাপ অর্থনীতি’ শীর্ষক একটি আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন অভিজিৎ। দরিদ্রের অর্থনীতি তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণার বিষয়। অভিজিৎ সেখানে স্পষ্টই বললেন, ভোটের আগে খয়রাতি গরিব মানুষকে সাহায্য করার সেরা পন্থা নয়। তবে খয়রাতি একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার কথাও তিনি বলেননি। তাঁর মত হল, বিষয়টিতে একটা শৃঙ্খলা থাকা দরকার। কারণ এই মুহূর্তে এই রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে আসাও কঠিন। তা ছাড়া তাঁর বক্তব্য মূলত নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোট টানতে ঢালাও দানছত্রের রীতির বিরুদ্ধেই। যে কারণে তিনি নির্দিষ্ট করে ‘ভোটের আগে খয়রাতি’র কথাই বলেছেন এবং শৃঙ্খলার প্রয়োজনের কথা তুলেছেন। সুতরাং তিনি সার্বিক ভাবে এক বাক্যে খয়রাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, এমন ভাবা ঠিক হবে না বলেই মনে করছেন অর্থনীতির জগতের একাংশ। আবার প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট দাবিই ছিল, খয়রাতি সংস্কৃতি দেশের অর্থনীতির উপরে চাপ তৈরি করছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘ভাল অর্থনীতি, খারাপ অর্থনীতি’র প্রশ্নে খয়রাতির প্রসঙ্গ তুলে এবং তার সীমাবদ্ধতার কথা বলে অভিজিৎ এই বিতর্কে বাড়তি মাত্রা যোগ করলেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

খয়রাতিকে বাদ দিয়ে দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানো এবং সম্পদ পুনর্বণ্টনের উপায় তবে কী হতে পারে? অভিজিতের কথায়, দরিদ্রের ক্ষেত্রে ঋণ মকুব করার পদ্ধতি ছিল সবচেয়ে সাবেকি। বড় ঋণগ্রহীতারা কেউ দরিদ্র নন। ফলে এটা করাও সহজ ছিল। তবে কার্যকরী এবং উন্নততর উপায় হতে পারে ধনীর উপরে করের ভার বাড়ানো। সেই কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি তহবিল থেকে দরিদ্রের কাছে পৌঁছতে পারে। ‘‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অসাম্য কমানো এবং পুনর্বণ্টনের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট তহবিল তৈরি করা যেতে পারে।’’ শনিবারের আলোচনায় অভিজিৎ উন্নয়নের অর্থনীতি, অর্থনীতির বাস্তবোচিত মডেল, জীবনধারণের খরচবৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের বিষয়গুলিও ছুঁয়ে গিয়েছেন। ভারতে অর্থনৈতিক অসাম্য যে ক্রমবর্ধমান সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, ছোট গাড়ির বাজার কমছে এবং বিলাসবহুল গাড়ির বাজার বাড়ছে। বেকারত্বের প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। এ কথাও বলেন, উৎপাদনের ক্ষেত্রে চিনের কর্তৃত্বকে নড়ানো খুব মুশকিল। তাদের ‘সাপ্লাই চেন’ অত্যন্ত মজবুত। সরকারি চাকরির মোহও ভারতে বেকারত্বের একটা বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন অভিজিৎ। তাঁর কথায়, স্বপ্নের সরকারি চাকরির ধারণা ভারতের একটা বড় অংশের মানুষের মনে এত প্রবল, তার কারণে বহু প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে। ‘‘এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্যই হল সরকারি চাকরি। ৯৮ শতাংশই তা পায় না। তা থেকে বিপুল সংখ্যক বেকারের জন্ম হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Abhijit Vinayak Banerjee Election Poverty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy