Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

বৃষ্টি কমলেও জলমগ্ন রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা, ডিভিসির ছাড়া জলে বাড়ছে দুই জেলায় আতঙ্ক

বৃষ্টি কমলেও জমা জল কমার লক্ষণ নেই। তার উপর শনিবার থেকে জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি। তার ফলে প্লাবনের আশঙ্কায় ভুগছেন বহু মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপর প্রশাসনও।

DVC release water and rain affected several district of West Bengal

জলমগ্ন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ১৫:২১
Share
Save

একে বৃষ্টিতে রক্ষে নেই, দোসর ডিভিসির ছাড়া জল! বৃষ্টি কমলেও জলমগ্ন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। কোথাও হাঁটুসমান জল, কোথাও আবার জল কোমর পর্যন্ত। অনেক নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়েছে গ্রামের মধ্যে। ভাসছে বাড়িঘর, চাষের জমি। তার উপর ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আসানসোল, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, বোলপুরের বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়ল একই ছবি।

বুধবার থেকেই অল্পবিস্তর বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তার পর বৃহস্পতি-শুক্রে গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে আরও বেড়েছে বৃষ্টি। শনিবার থেকে আবহাওয়া পাল্টাতে শুরু করে। ভারী বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। তবে বৃষ্টি কমলেও জমা জল কমার লক্ষণ নেই। তার উপর শনিবার থেকে জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি। তার ফলে প্লাবনের আশঙ্কায় ভুগছেন বহু মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপর প্রশাসনও।

বৃষ্টির জমা জলে নাজেহাল অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট পুরসভার। জানা গিয়েছে, এই পুরসভার ১৯ , ১৪ , ২১ ,২০ , ১০ নম্বর ওয়ার্ডগুলি জলমগ্ন। ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে জল। জমা জলের কারণে বেড়েছে সাপের উপদ্রবও। বসিরহাট পুরসভা এলাকার বাসিন্দা রিনা মণ্ডলের অভিযোগ, বৃষ্টির জল ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। সেই জমা জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপ। শনিবার পরিবারের এক সদস্যকে সাপে কামড়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর। সেই সঙ্গে রয়েছে মশা-মাছি-পোকামাকড়ের উপদ্রবও।

রেখা মণ্ডল নামে এক বাসিন্দার অভিযোগ, প্রতি বছরই বর্ষাকালে জল জমার সমস্যায় ভুগতে হয় বসিরহাট পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষকে। কাউন্সিলর থেকে পুর কর্তৃপক্ষ এসে শুধু আশ্বাস দেন, কিন্তু কোনও কাজ হয় না। সমস্যার সমাধানের কোনও বন্দোবস্ত করে না পৌরসভা, অভিযোগ এলাকাবাসীর। এই বিষয়ে বসিরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান অদিতি মিত্র বলেন, ‘‘এই সব এলাকায় প্রতি বছরই জল জমে। যে খাল দিয়ে জল সরবে, সেই খালগুলি রবিবার সকাল থেকে পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, দু’-একদিনের মধ্যে জল নেমে যাবে।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন জায়গাতেও জল জমার সমস্যা রয়েছে। তার উপর অমাবস্যায় ভরা কটালের কারণে আতঙ্কে ভুগছেন সাগরবাসী। কটালের জেরে বঙ্গোপসাগরে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। উঠেছে সমুদ্রের জলস্তর। এমনিতেই দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গঙ্গাসাগরের অনেক এলাকায়। কটালের কারণে জলস্তর বাড়তে থাকায় নদীর বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। ইতিমধ্যেই সাগর ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্লক অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখানে সমস্ত বিষয়ের উপর নজর রাখছে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের একটি বিশেষ দল। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। গঙ্গাসাগরের কপিলমুনির মন্দির সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী ব্যবসায়ী এবং পুণ্যার্থীদের জন্য চলছে মাইকিং। সমুদ্রে না নামার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে দফায় দফায়।

শনিবার ধসের ঘটনা ঘটেছে আসানসোলে। অন্ডাল থানার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার অন্তর্গত বহুলা বাদ্যকর এলাকায় পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির পাশেই ধসের ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়াও রানিগঞ্জ শহরের বাঁশরা গ্রামের ছুরিপারায় ধস নামায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ইসিএল কর্তৃপক্ষ কয়লা উত্তোলনের পর মাটির নীচে বালি দিয়ে ঠিকঠাক ভাবে ভরাট না করায় এই ধস নেমেছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানোর পরও মাটি ভরাটের কাজ শুরু না করার ফলে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের।

অন্য দিকে, শনিবার থেকেই ভারী বৃষ্টির কারণে জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি। রবিবার সকালেও কয়েক দফায় লক্ষাধিক কিউসেক জল ছেড়েছে। মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়। মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে ছাড়া জল দামোদরের দুর্গাপুর ব্যারাজে এসে জমা হয়। জলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় রবিবার সেখান থেকেও জল ছাড়া শুরু হয়েছে। সকাল ১১টা পর্যন্ত দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ৯৮ হাজার ৫২৫ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় মজুমদার।

ডিভিসি থেকে জল ছাড়ার কারণে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হতে পারে বলে শনিবারই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল নবান্ন। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ডিভিসি। যা রাজ্যের মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। হুগলির খানাকুলের বাসিন্দারা রবিবার সকাল থেকেই সেই আশঙ্কায় ভুগছেন। দামোদরের শাখা নদী মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে ডিভিসির ছাড়া জল আরামবাগ পুড়শুড়া হয়ে খানাকুলের পানসিউলিতে রূপনারায়ণে মিশেছে। রূপনারায়ণের জোয়ার এবং ডিভিসির জলের চাপে ক্রমশই খানাকুলে নদী এবং খালগুলো ফুলেফেঁপে উঠছে। এলাকার মানুষজনের আশঙ্কা, ডিভিসি যদি জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে, তা হলে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে খানাকুলে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গ্রামে খালবিল দিয়ে মুণ্ডেশ্বরী থেকে ডিভিসির ছাড়া জল ঢুকেছে।

হুগলি, হাওড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের সংযোগকারী দু’টি বাঁশের সেতু ইতিমধ্যেই জলের চাপে ভেঙে গিয়েছে। খানাকুলের জগৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের কিছু অংশে জল ঢুকছে। এ ছাড়াও নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে নাকুলের মাড়োখানা, সুন্দরপুর, বউবাজার, ঘাসুয়া এবং নন্দনপুর রাজহাটি এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে। শনিবারই আরামবাগের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন হুগলি জেলাশাসক মুক্তা আর্য। অন্য দিকে, শনিবার সন্ধ্যায় তারকেশ্বরের সন্তোষপুর এবং ধনিয়াখালির গোপীনগর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষণিকের টর্নেডোর দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে যায় কয়েকটি গ্রাম।

হুগলির পাশাপাশি ডিভিসির জলে প্লাবিত হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বেশ কিছু এলাকা। বাঁধ ভেঙে জল ঢোকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদুপুর এবং বাকুল এলাকার একমাত্র যাতায়াতের রাস্তাটির উপর দিয়ে জল বইছে। হাফেজপুর এবং নাইকুল যাওয়ার রাস্তাও ইতিমধ্যে ভাঙতে শুরু করেছে। শনিবারের পর রবিবারও ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা গ্রামবাসীদের।

বীরভূমের একাধিক এলাকা জলমগ্ন। শনিবারই কুয়ে নদীর বাঁধ মেরামতির কাজ করেছিল প্রশাসন। কিন্তু রবিবার ভোরে আচমকাই সেই বাঁধ ভেঙে যায়। বাঁধ ভাঙার কারণে হু হু করে জল ঢুকে পড়ে গ্রামে। লাভপুরের ঠিবা গ্রামের তালতলা মোড়ের কাছে বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বাঁধ ভাঙার কারণে লাভপুরের ঠিবা, লাগলহাটা, কাজীপাড়া-সহ অনেক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত। রবিবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপর প্রশাসন।

waterlogging dvc

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।