৬৬ পল্লির পুজোর দায়িত্বে এই চার মহিলা পুরোহিত। নিজস্ব চিত্র
করোনা আবহে একের পর এক বড় পুজোর বাজেট কমছে। এমন অবস্থাতেই এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল দক্ষিণ কলকাতার ৬৬ পল্লির শারদোৎসব কমিটি। এবার তাঁদের পুজোয় পুরোহিতের ভুমিকায় দেখা যাবে চারজন মহিলা পুরোহিতকে। কলকাতা পুজোর ইতিহাসে এ এক বিপ্লবই বটে। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পার্বণের ইতিহাসে এমন ঘটনা নেই বললেই চলে। ২০২০ সালের শারদোৎসব শেষ হওয়ার পর দ্বাদশীর দিন প্রয়াত হন ৬৬ পল্লীর প্রধান পুরোহিত তরুণ ভট্টাচার্য। তিনি গত কয়েক দশক ধরেই এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শোকাহত কর্মকর্তারা তার পরেই নতুন পুরোহিতের সন্ধান শুরু করেন। ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবিটি দেখেছিলেন পুজো কমিটির কর্তারা। সেই সূত্র ধরেই যোগাযোগ হয় ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ প্রোডাকশনের সঙ্গে। তাঁদের থেকেই কর্তারা জানতে পারেন মহিলা পুরোহিতদের দল ‘শুভমস্তু’-র কথা। ‘শুভমস্তু’ দলটি চার জন মহিলা পুরোহিতকে নিয়ে তৈরি। নন্দিনী, রুমা, সেমন্তী ও পৌলমী রয়েছেন এই দলটিতে। আর এই দলের নন্দিনীর জীবন থেকেই তৈরি হয়েছে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবিটি।
উইন্ডোজ প্রোডাকশনের কাছ থেকেই ‘শুভমস্তু’-র সদস্যা নন্দিনীর খোঁজ পান কর্তারা। গত বছর ডিসেম্বর মাসেই নন্দিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে ৬৬ পল্লির দুর্গোৎসবে পৌরোহিত্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই মহিলা পুরোহিতরা বিয়ে, অন্নপ্রাশন, পারলৌকিক ক্রিয়া ও গৃহপ্রবেশের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতেন। তাই প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই তা ফিরিয়ে দেন মহিলা পুরোহিত নন্দিনী। কিন্তু নাছোড় পুজো কমিটির কর্তারা তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যান। এক সময় ‘শুভমস্তু’-র পক্ষ থেকে কর্তাদের জানানো হয়, দুর্গাপুজো নিয়ে শাস্ত্র বিষয়ক অধ্যয়নের পরেই তাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন। চলতি বছর মার্চ মাসেই ৬৬ পল্লির কর্মকর্তাদের পুজো করার বিষয়ে নিজেদের সম্মতির কথা জানিয়ে দেন নন্দিনী।
রক্ষণশীল বাঙালি সমাজ কী ভাবে দেখবে এমন দৃপ্ত পদক্ষেপকে? সেই ভাবনাকে সরিয়ে ৬৬ পল্লি পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শাস্ত্রের কোথাও লেখা নেই যে, মহিলা পুরোহিতরা পুজো করতে পারবেন না। আর মায়ের পুজোয় তো মহিলারা এখন মণ্ডপসজ্জা থেকে ঢাক বাজানো, সব রকম কাজই করেন। তাই পুজোয় যদি মহিলারা পৌরোহিত্য করেন, তাতে আপত্তি কোথায়?’’ আর নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মহিলা পুরোহিত নন্দিনী বলছেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, পুজো করার অধিকার আমাদের রয়েছে। আমাদের এমন প্রয়াসে মেয়েরা যেন একটু সাহস পায়। মেয়েরা এত বড় বড় চাকরি করছে, সব জায়গায় মেয়েরা কত এগিয়ে গিয়েছে। তারা পাহাড়ে উঠছে, বিমান চালাচ্ছে। কিন্তু নারী নির্যাতন কমছে না। সমাজ যাতে একটু হলেও বদলায়, আমরা আমাদের কাজ দিয়ে সেই বার্তাটাই দিতে চাই।’’ গত বছরের মতো এ বারও ৬৬ পল্লির পুজোর মঞ্চ সাজানোর দায়িত্বে শিল্পী দীপ দাশ ও ঈশিকা চন্দ্র। যে হেতু মহিলা পুরোহিতরা পুজোর দায়িত্বে, এবং অনেক নতুন পুজোর সামগ্রী তাঁরা ব্যবহার করবেন বলে জেনেছেন শিল্পীরা। তাই পুজোয় ব্যবহৃত সেই সব উপকরণ দিয়েই মণ্ডপসজ্জা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy