পটুয়া পাড়ার মাত্র জনা পাঁচেক শিল্পী কলকাতার মণ্ডপে কাজ পেয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
পুজোর আগে ফাঁকা হয়ে যেত পটুয়া পাড়া। পাড়ার পুজোয় কাজের লোক পাওয়া যেত না। কলকাতার মণ্ডপ সাজানোর বরাত নিয়ে পাড়া ছাড়তেন পটুয়ারা।
এ বার উৎসবের মরসুমে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়ায় অন্য ছবি। পটুয়া পাড়ার মাত্র জনা পাঁচেক শিল্পী কলকাতার মণ্ডপে কাজ পেয়েছেন। করোনায় দু’বছর পটুয়াদের বাজার ছিল মন্দা। এ বার পুজোয় কাজের আশায় ছিলেন রহিম, মনোরঞ্জন, মণিমালা চিত্রকরেরা। আশা এ বারের মতো শেষ।
তা হলে কি পুজোর সাজে পটচিত্রের কদর কমেছে? মণ্ডপ আর সাজছে না দুর্গা, মাছের বিয়ে, সাঁওতাল রমণী, রাধাকৃষ্ণের নানা পটে? পটুয়া পাড়া জানাচ্ছে, বেশি করেই হচ্ছে। নগর ছাড়িয়ে পটের কাজ হচ্ছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। কিন্তু কাজে বদল এসেছে। পিংলার নামী পটশিল্পী বাহাদুর চিত্রকর বলছেন, ‘‘পুজো মণ্ডপের বরাত পাওয়া শিল্পীরা পটের ছবি কলকাতার উঠতি শিল্পীদের দিয়ে আঁকিয়ে নিচ্ছেন। ইন্টারনেটের যুগে নামী পটচিত্র পাওয়া সহজ। এতে খরচ বাঁচছে।’’ ব্যয় সঙ্কোচের নয়া কৌশলে পটুয়া পাড়ায় আশঙ্কার মেঘ। কয়েক পুরুষ ধরে পট এঁকে জীবন চালিয়েছেন পটুয়ারা। ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তাঁদের। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে মেধাস্বত্বের অধিকার। উদাহরণ দিলেন শিল্পীরাই। সাঁওতাল রমণী বা আদিবাসী জীবনের পট আঁকতে হলে অভিজ্ঞতা দরকার। না হলে পটে প্রাণ আসবে না। কিন্তু উঠতি শিল্পীরা পটুয়াদের কোনও ছবি অনুকরণ করে এঁকে দিলে এত ঝক্কি পোহাতে হয় না। ভাবনার সময়টাও বাঁচে। নয়ার পটুয়ারা জানাচ্ছেন, শুধু পুজোর মণ্ডপ নয়, সরকারি, বেসরকারি নানা বিজ্ঞাপনে পটের ছবি ব্যবহার হচ্ছে। জানতেই পারছেন না পটুয়ারা। কিছুদিন আগে লোকাল ট্রেনে পট আঁকা হয়েছে। তাও কোনও পটুয়ার আঁকা নয়।
২০১৮ সালে পিংলার পট জিআই (জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন) পেয়েছে। বর্তমানে, পটশিল্পের বিপণন এবং সেই পরিকল্পনার মধ্যে জিআই-এর ভূমিকা নিরূপণের কাজ চলেছে। আপাতত আইনের দিক থেকে মেধাস্বত্ব রক্ষার বিষয়ে কিছু করার নেই পটুয়াদের। নিজের আঁকা ছবির আইনগত অধিকার কী ভাবে বজায় রাখতে হয় তা পটুয়াদের কেউই জানেন না। ব্যাপারটা সময় সাপেক্ষও বটে। এক সরকারি সূত্রের মতে, প্রতিটি ছবি কার আঁকা, কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে, তা হিসেব রেখে বিধির বাঁধনে বাঁধা সত্যি সমস্যার। কেউ কেউ বলছেন, গান বা সিনেমার ক্ষেত্রে কপিরাইট-এর বিধি থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যাচ্ছে না। পটের ক্ষেত্রে তা কী করে করা যাবে! সমস্যার জলদি সমাধান নেই। বাহাদুর বা আনোয়ার চিত্রকরের আক্ষেপ, ‘‘অনেক চিন্তা ভাবনা করে যে পট আঁকা হয় তা এক মুহূর্তে তা কপি হয়ে যাচ্ছে।’’
বছর ১৫ আগেও পটুয়াপাড়ায় বছরের ক’মাস জল দাঁড়িয়ে থাকত। সেখানে এখন পাকা বাড়ি, বাঁধানো রাস্তা। বিশ্বব্যাপী পরিচয় পটুয়া পাড়ার। সে আলো ফিকে হয়ে যাবে না তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy