প্রতীকী ছবি।
পুজোয় যত না ভিড় হয়েছে, তার থেকে অনেক জায়গাতেই বেশি ভিড় হল বিসর্জনে। আলিপুরদুয়ার থেকে মালদহ, উত্তরপাড়া থেকে কাঁথি—বিধি ভাঙার ছবি প্রায় সর্বত্র এক।
আলিপুরদুয়ারে গ্রামের দিকে শুক্রবার, দশমীর রাতে বিসর্জনের ভিড় ছিল কার্যত ‘বাঁধনহারা’। জলপাইগুড়ির রাজবাড়িতে পুলিশ অফিসারদের সামনেই জমায়েত হয়েছে। প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রাও হয়েছে। প্রায় কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। দক্ষিণ দিনাজপুরে ভিড় নিয়ন্ত্রণের অভাব থেকে শুরু করে ডিজে বাজানোর মতো নানা অভিযোগ উঠেছে। মালদহে পুরসভা থেকে ‘লাইভ’ বিসর্জন দেখানোর ব্যবস্থা হলেও, ভিড় হয়েছিল মিশন ঘাটে। জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয়, তার কোনও কসুর প্রচারে বাকি রাখা হয়নি।”
প্রশ্ন উঠেছে, প্রচারের পাশাপাশি নজরদারি কোথায় ছিল? আলিপুরদুয়ারের জেলা পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডের দাবি, “নজরদারি থেকে শুরু করে যা-যা পদক্ষেপ করার, সবই করা হয়েছে।”
ঠাকুর দেখার ভিড়ে পুজোর ক’দিনে কোভিড-বিধি উপেক্ষিত হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপের অনেক পুজোয়। অষ্টমী-নবমীতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। ওই দু’দিন কার্যত কোভিড-বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ। সে ধারা বজায় ছিল বিসর্জন-পর্বেও। পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক জায়গায় বিধি ভাঙার ছবি মিলেছে পুজোর চার দিন। তার রেশ ছিল বিসর্জনেও। হুগলির বহু পুজো কমিটি খোলামেলা মণ্ডপ করায় বাইরে থেকেই প্রতিমা দেখা গেলেও ঘেরাটোপের বাইরে, রাস্তার ভিড় আটকানো যায়নি। শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়ার কয়েকটি মণ্ডপের সামনে লাইন পড়েছিল। তবে পুলিশের তা নিয়ে ‘মাথাব্যথা’ ছিল না বলে অভিযোগ।
সিঁদুর খেলা থেকে বিসর্জনের ঘাটে জমায়েত—কোভিড-বিধি উড়িয়েই পুজোর শেষ পর্ব মেটে হুগলির বিভিন্ন শহরে। আলোকসজ্জা-সহ শোভাযাত্রা না হলেও, প্রতিমার সঙ্গে বিসর্জনে যাওয়া ভিড়ে শিশু-মহিলাদেরও দেখা গিয়েছে। জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি-র প্রতিক্রিয়া, ‘‘যতটা সম্ভব জন-সচেতনতা প্রচার করেছি। পুজো কমিটিগুলিও নিজেদের মতো চেষ্টা করেছে।’’
বীরভূমের দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরের শ্মশানকালীর ভাসানে শনিবার কার্যত ‘উধাও’ হয়েছে যাবতীয় কোভিড-বিধি। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় মাস্ক ছাড়া, প্রতিমা বরণ ও সিঁদুর খেলায় মহিলাদের দেখা গিয়েছে। ডিজে বাজিয়ে থানার সামনে নাচানাচিও হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে করোনা-বিধি ভেঙে দর্শনার্থীরা যেমন ভিড় করেন ভাসানে, তেমনই সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বড় পুকুর এবং জলাশয়গুলিতে হয়েছে বিসর্জন। কাঁথি শহরের রাজাবাজার ও ক্যানালপাড়ে বিসর্জনে শোভাযাত্রায় দেদার ডিজে বক্সও বাজে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর শহরে বহু পুজো কমিটি বিসর্জনের শোভাযাত্রা করেছে। অনেকেরই মুখে মাস্ক ছিল না। সেন্ট্রাল মালঞ্চ পুজোর এক কর্মকর্তার দাবি, “অল্পবয়সিরা একটু আনন্দ করেছে।”
এমন ঝুঁকি নেওয়া কেন?
পূর্ব বর্ধমানের কালনায় শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া পূর্ণিমা ঘোষ, মধুসূদন মুখোপাধ্যায়দের বক্তব্য, ‘‘টিকার দু’টি ডোজ় নিয়েছি। তাই চুটিয়ে আনন্দ করছি।’’ যদিও রাজ্যের কোভিড মনিটারিং কমিটির পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, “কোভিডে এই মুহূর্তে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের উপরে। ফলে, ‘আমার টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে’, এমন মনোভাব নিয়ে চললে, বাড়ির শিশুটিকে নিয়ে সব থেকে বেশি আশঙ্কা থাকছে।”
কড়া হাতে বিধি রক্ষার চেষ্টা হয়েছে বলে দাবি করেছেন একাধিক জেলার পুলিশ সুপার। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘করোনা-বিধি ভাঙার অভিযোগে পুজোর চার দিনে প্রায় ১,২০০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ নদিয়ার কৃষ্ণনগরের কদমতলার ঘাটে শুক্রবার রাতে প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে দু’পক্ষের ঝামেলা হয়। পুলিশ লাঠিও চালায় বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ তা মানেনি। হাওড়া, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় অবশ্য বিধিভঙ্গের অভিযোগ তেমন মেলেনি বলে দাবি প্রশাসনের।
জলপাইগুড়ির রাজবাড়িতে উপস্থিত এক পুলিশ-কর্তার দাবি, “ভিড় না করার কোনও অনুরোধ কেউ শোনেননি। ভিড় সরাতে লাঠি চালাতে হত। দশমীর দিন সেটা কাম্য ছিল না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy