Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2020

আজ মহাসপ্তমী, রাজ্যে পুজো শুরু, তবে ভিড় নয়

বোধন সন্ধ্যায় কলকাতার রাস্তা এমনই ফাঁকা ছিল যে, লালবাজার ভিড় সামলানোর দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীর সংখ্যা অর্ধেক করে দিয়েছে।

বাগবাজার সর্বজনীনের পূজামণ্ডপে সন্ধ্যারতি। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

বাগবাজার সর্বজনীনের পূজামণ্ডপে সন্ধ্যারতি। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৪০
Share: Save:

আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং বাদলা আবহাওয়া। দুইয়ে মিলে গোটা রাজ্যেই এ বারে ষষ্ঠীর দিন পুজো দেখার ঢল অনেক কম। কিছু ক্ষেত্রে উৎসাহী লোকজন মণ্ডপের কাছে ঘোরাঘুরি করলেও পুজো কমিটিগুলি তাদের দূরেই রেখেছে। কোথাও ১০ জনের বেশি লোককে একসঙ্গে মণ্ডপের সামনে জমতেও দেওয়া হয়নি। বোধন সন্ধ্যায় কলকাতার রাস্তা এমনই ফাঁকা ছিল যে, লালবাজার ভিড় সামলানোর দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীর সংখ্যা অর্ধেক করে দিয়েছে। পুলিশকর্তাদের ব্যাখ্যা, আদালতের নির্দেশের জেরে ভিড় একেবারেই কম। তাই অহেতুক কাজ না-করিয়ে কোভিড লড়াইয়ে ক্লান্ত বাহিনীকে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে।

অঞ্জলি দেওয়ার পরিচিত রীতিও এ বার বদলাচ্ছে। নিউ ব্যারাকপুরের শক্তি সঙ্ঘ ক্লাব এলাকার বাসিন্দাদের জানিয়েছে, এ বছর মণ্ডপে অঞ্জলির বদলে ভার্চুয়াল পুজোর লিঙ্কে ক্লিক করে অঞ্জলির সময় পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ শুনে মন্ত্র পাঠ করে অঞ্জলির ফুল বাড়িতে থাকা ঠাকুরের পায়ে দিতে হবে। কোনও কোনও ক্লাবে পুজোর সঙ্গে যুক্ত সদস্য বা তাঁদের পরিবারের কেউ ভিতরে থাকবেন। কোথাও আবার পাড়ার বাসিন্দাদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে ব্যারিকেডের বাইরে অঞ্জলি দেওয়া হবে। এক পুজো কমিটির কর্তার কথায়, “ব্যারিকেডের বাইরে দূরত্ববিধি মেনে মাইকে মন্ত্র শুনে ফুল ঝুড়িতে ফেলবেন। কমিটির এক সদস্য সেই ঝুড়ির ফুল এনে প্রতিমার পায়ে দিয়ে দেবেন।”

জনগণকে সচেতন করতে আগেই পথে নেমেছিল নাগরিক সমাজের একাংশ। তাদের তরফে নব দত্ত জানান, কলকাতার প্রায় ৩০টি মোড়ে ভিড় না করা ও দূরত্ববিধি মানার ব্যানার লাগিয়েছেন তাঁরা। বোধন সন্ধ্যায় সচেতনতার সেই ছবি দেখে নাগরিক সমাজের অনেকেই খুশি।

আরও পড়ুন: ভিড়ের দৌড়ে তবু ক্ষান্ত দিচ্ছেন না পুজোকর্তারা

জেলাতেও একই ছবি। নদিয়ার বেথুয়াডহরি, বাদকুল্লা, চাকদহ, কৃষ্ণগঞ্জ— সর্বত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মেদিনীপুর, খড়্গপুর, তমলুক, কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়ার মতো শহর তো বটেই, গ্রামীণ এলাকাতেও মণ্ডপে ভিড় ছিল না। ক্যানিং, বনগাঁ, ব্যারাকপুর, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবারে ছোট ছোট দলে দর্শনার্থীদের দেখা গিয়েছে। উলুবেড়িয়া, বাগনানের মতো হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার মণ্ডপ তো বটেই, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়াতেও ভিড়হীন পথঘাট। পশ্চিম বর্ধমানে দর্শনার্থীদের কথা ভেবেই খোলামেলা মণ্ডপ হয়েছে। তবে বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানে রাস্তায় উৎসাহীদের ভিড় নজরে এসেছে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারেও ভিড় উধাও! ব্যতিক্রম মুর্শিদাবাদ। ব্যারিকেড, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীরা মিলেও ষষ্ঠীর ভিড় পুরোপুরি সামলাতে পারেনি।

তবে এ সবের মাঝেই টুকটাক মণ্ডপ দর্শন সেরেছেন অনেকে। কেউ কেউ ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে মাস্ক সরিয়ে ঠোঁট উল্টোনো মুখ ধরেছেন নিজস্বীতে। আবার সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখলে মুখ ঢেকেছেন মাস্কে। লেকটাউনের ‘নিন্দিত’ বড় পুজোর স্বেচ্ছাসেবকেরাও সমানে মাস্ক পরার হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন।

দক্ষিণ কলকাতায় জনৈক মন্ত্রী তথা পুজো উদ্যোক্তা গাড়িতে এলাকায় ঘুরছিলেন। মুখ খুলতেই আফশোসের সুর, “ইস! এমন জনহীন পুজো ভাবা যায়!” তবে পুলিশকর্তাদের অনেকে বলছেন, “জনতা জল মাপছে না তো! অষ্টমী না-পেরোলে নিশ্চিন্ত হচ্ছি না।”

এ সব টানাপড়েনেও অটুট বাঙালির রসিকতা। সন্ধ্যায় টালায় হাজির গড়িয়ার কলেজ পড়ুয়াদের দলটার রোল উঠল, ‘‘মন্দ কী! আগে ছিল ঠেলাঠেলি করে এক পলকের একটু দেখা, এ বার দূর হতে তোমারেই দেখেছি!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 Maha Saptami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy