ফাইল চিত্র
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের আগেও অনেক রেল দুর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। নিয়মবিধি মেনে মৃতদের স্বজনকে দেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণ, চাকরিও। সেই সব ক্ষেত্রেও কি কারচুপি হয়েছিল? জীবিত থাকা সত্ত্বেও জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে অমৃতাভ চৌধুরীকে ‘মৃত’ দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং রেলে তাঁর বোনের চাকরি পাওয়ার ঘটনার পরে উঠছে এই প্রশ্নও। ফের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অমৃতাভকে বৃহস্পতিবার এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এর আগে সব দুর্ঘটনায় মৃতদের শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃতদের শনাক্ত করেছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজনই। সে-দিক থেকে জ্ঞানেশ্বরী খানিকটা ব্যতিক্রম।
প্রশ্ন তবু থাকছেই। জ্ঞানেশ্বরীর ক্ষেত্রে মৃতদের দাবিদার হিসেবে উঠে আসা নিকটাত্মীয়দের ডিএনএ-র নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনও কারচুপি হয়েছিল কি না, কোনও চক্র সক্রিয় ছিল কি না— এই সব প্রশ্নও ভাবাচ্ছে রেলকে। কারণ, ওই ঘটনার সঙ্গে রেলকর্মীদের একাংশের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের মতে, বাইরের লোকও এই দুর্নীতিতে জড়িত থাকতে পারে। এখানেই সন্দেহ দানা বাঁধছে, কোনও দুষ্টচক্র থেকে থাকলে তা তো শুধু জ্ঞানেশ্বরীর জন্য থাকবে না। অন্যান্য দুর্ঘটনায় মৃতদের আত্মীয়স্বজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সেই চক্র সক্রিয় থাকবে। সে-ক্ষেত্রে কোনও কারচুপি হয়ে থাকলে তা কী ভাবে হয়েছে, কত ব্যাপক তার আকার, সেই বিষয়ে তদন্তকারীরাও অন্ধকারে। রেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, জ্ঞানেশ্বরীর ক্ষেত্রে মৃতদের ডিএনএ রিপোর্ট তাঁদের হাতে আসেনি। বদলে পুলিশের কাছ থেকে ফলাফল জ্ঞাপক চিঠি এসেছিল। তার ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়া হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, ২০১০ সালে মে মাসে জ্ঞানেশ্বরীর দুর্ঘটনার দু’মাসের মধ্যে মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানা থেকে ডিএনএ রিপোর্ট সংক্রান্ত চিঠির সূত্র ধরেই তালিকায় নাম থাকা এ রাজ্যের তিন বাসিন্দার নিকটাত্মীয়েরা ক্ষতিপূরণ পান। সেই তালিকায় ছিল অমৃতাভের নামও। বাকি দু’জনের আত্মীয় চাকরি না-পেলেও অমৃতাভের বোন মহুয়া চৌধুরী পাঠক চাকরি পান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বদলে তাঁর চাকরি হয় পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে।
পূর্ব বর্ধমানের কালনার সিদ্ধেশ্বরী মোড় ও শ্যামরায়পাড়ায় বাস দুই মুখোপাধ্যায় পরিবারের। তাঁরা নিকটাত্মীয়। ২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে রৌরকেলায় এক আত্মীয়ের বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন দুই পরিবারের মোট পাঁচ জন। আর ফেরেননি তাঁরা। সিদ্ধেশ্বরী মোড় এলাকায় বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকেন ওই দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও মেয়েকে হারানো, ষাটোর্ধ্ব বিপ্লব মুখোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে বৃদ্ধা মা থাকায় আমি ওই অনুষ্ঠানে যেতে চাইনি। স্ত্রী আর পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে সেখানে যাচ্ছিল। আর ফেরেনি।’’ তিনি জানান, দুর্ঘটনার পরে রেল তাঁর ডিএনএ পরীক্ষার করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। চাকরি দেওয়া হয়েছিল কি? ‘‘তখন আমার যা বয়স ছিল, তাতে বেশি দিন চাকরি করতে পারতাম না। চেয়েছিলাম, আমার জায়গায় আমার ভাগ্নেকে চাকরি দেওয়া হোক। কিন্তু রেল-কর্তৃপক্ষ তা মানেননি,’’ বলেন বিপ্লববাবু। অমৃতাভ-কাণ্ড প্রসঙ্গে তাঁর সবিস্ময় খেদ, ‘‘আমার ভাগ্নে চাকরি পেল না। অথচ জীবিত থাকা সত্ত্বেও এক জনের পরিবারের সদস্য চাকরি পেয়ে গেল! ভাবতে অবাক লাগছে।’’
জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় ছোট ছেলে দেবযান, পুত্রবধূ অনন্যা এবং বছর চারেকের নাতি দেবায়নকে হারিয়েছেন শ্যামরায়পাড়ার বৃদ্ধা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর বড় ছেলে সন্দীপবাবু জানান, ডিএনএ পরীক্ষার পরে তাঁদের পরিবারও ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছে। চাকরির প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, তিনি নিজে রেলের কর্মী। চাকরি করার মতো আর কেউ ছিলেন না তাঁর পরিবারে। অমৃতাভ-কাণ্ড প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যদি সত্যি এমন কাজ করে থাকে, ভুল করেছে।’’
রেল সূত্রের খবর, জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় যে-সব যাত্রীকে শনাক্ত করা যায়নি, তাঁদের পরিচয় জানতে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য প্রশাসন। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না-মেলায় ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিতর্কের নিষ্পত্তি করা যায়নি, এমন অন্তত তেইশটি ঘটনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy