Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Election Violence

ভোট-তাণ্ডবে ‘মৃত’ আবদুল্লা ফিরলেন গুজব কাটিয়ে

প্রায় ১৫ দিন পরে হাসপাতাল থেকে ফিরলেন মহম্মদ আবদুল্লা। আপাতত বিপদ কাটলেও আগামী দু’বছর চিকিৎসকদের নজরদারিতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

An image of violence

আত্মীয়ের বাড়িতে আবদুল্লা। সোমবার।  ছবি: সুদীপ ঘোষ।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ০৮:১৯
Share: Save:

ভোটের সকালে তাঁর ‘মৃত্যুর’ গুজবে উত্তাল হয়েছিল এলাকা। দফায় দফায় ভাঙচুর, অবরোধের জেরে এলাকার বুথে ভোট শুরু হয়েছিল দেরিতে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, বেলার দিকে এলাকায় গিয়েছিলেন খোদ রাজ্যপালও। সেই ঘটনার প্রায় ১৫ দিন পরে হাসপাতাল থেকে ফিরলেন ‘মৃত’ মহম্মদ আবদুল্লা। আপাতত বিপদ কাটলেও আগামী দু’বছর চিকিৎসকদের নজরদারিতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

ঘটনার সূত্রপাত ভোটের আগের রাতে। নির্দল-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বারাসত-১ ব্লকের পীরগাছা। নির্বাচনের আগের দিন এলাকা সাজাতে ব্যস্ত নির্দল প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। লাঠি, লোহার রড, বাঁশ দিয়ে নির্দল সমর্থক আবদুল্লা-সহ একাধিক জনকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রাতেই সঙ্কটজনক অবস্থায় পাঁচ জনকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর পরেই ভোরে এলাকায় ‘খবর’ আসে, হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বছর ৪৬-এর আবদুল্লার। সেই গুজবের জেরে ভোটের দিন সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পীরগাছা। মৃত্যুর প্রতিবাদে দফায় দফায় অবরোধ, ভাঙচুর করেন নির্দল কর্মী-সমর্থকেরা। পরিস্থিতি এমন হয় যে, ভোট শুরুর আগেই কার্যত ‘তৃণমূলশূন্য’ হয়ে যায় গোটা এলাকা।

ভোটের সকাল থেকে গোলমালের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে বেলার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এলাকা ঘুরে সরাসরি হাসপাতালে চলে যান তিনি। আবদুল্লার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। যদিও এর পরেই সামনে আসে যে, আবদুল্লা মারা যাননি। বরং, তিনি সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দ্রুত তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলেও জানা যায়। সেই বিকেলে বারাসত থেকে সঙ্কটজনক অবস্থায় আবদুল্লাকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এর পরে সপ্তাহখানেক সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলে। আবদুল্লার পরিবারের সদস্য মহম্মদ রফিক বলেন, ‘‘সপ্তাহখানেক আর জি করে ভর্তি ছিলেন আবদুল্লা। তার পরে তাঁকে বিমানবন্দরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর মাথায় বড় অস্ত্রোপচারও হয়। রবিবার বিকেলে সেখান থেকে ছুটি করিয়ে আনা হয়েছে।’’ তবে ঝুঁকি এড়াতে আপাতত আবদুল্লাকে তাঁর পীরগাছার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাঁকে রাখা হয়েছে মুড়াগাছার মল্লিকপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে। রফিক বলেন, ‘‘হাসপাতালের খরচ চালাতে জমি বিক্রি করতে হয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আর টানতে পারছি না। বাধ্য হয়েই ছুটি করিয়ে এনেছি।’’

জানা গিয়েছে, মাথার খুলির হাড় কয়েক টুকরো হয়েছে আবদুল্লার। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও আপাতত চলাফেরা করার শক্তি নেই তাঁর। বিশেষ কথাও বলতে পারছেন না। দু’বছর চিকিৎসকের কড়া নজরে থাকতে হবে বলেও হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে। কোনও ভারী কাজ করাও আপাতত বারণ। তাঁর এক আত্মীয় শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে রাজু বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বলেই দিয়েছেন, আঘাত এতটাই বড় যে অস্ত্রোপচার করা হলেও ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। খিঁচুনি দেখা দেওয়া-সহ শরীরের এক দিক অসাড় পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। কয়েকটা দিন না গেলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’

সোমবার মুড়াগাছায় আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দোতলার ঘরে শুয়ে আবদুল্লা। মাথায় একাধিক সেলাইয়ের চিহ্ন। ডাকাডাকির পরেও সাড়া নেই। আবদুল্লার স্ত্রী সাহানারা বিবি বলেন, ‘‘সে সময়ে অনেকেই সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল রাজ্যপালের তরফেও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাহায্য মেলেনি। আমাদের লড়াই, একাই লড়তে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE