Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ফিকির দেখে অবাক পুলিশ

সোমবার সকালে দুবরাজপুরের খোঁয়াজ মহম্মদপুরের ধানমাঠে নিহতের ধড় উদ্ধার করতে পারলেও মাথা ও পা মিলছিল না। অভিযুক্তের বলে দেওয়া জায়গা, ইলামবাজারের জয়দেব ঘেঁষা অজয় নদে সোমবার বিকেলে ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চষে ফেলেছিলেন ডুবুরিরা।

মিলল দেহাংশ। খোঁয়াজ মহম্মদপুরের ধানমাঠে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

মিলল দেহাংশ। খোঁয়াজ মহম্মদপুরের ধানমাঠে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:৩৯
Share: Save:

ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করাই শুধু নয়, দেহ লোপাট করে পুলিশকে নাকানিচোবানি খাওয়ানোর জন্য এক সাধারণ খেটে খাওয়া চাষি কী কী করতে পারে, মঙ্গলবার নানুরের প্রাক্তন সিপিএম নেতা সুভাষচন্দ্র দে-র মাথা এবং দুই পা উদ্ধারের পরে তা বুঝে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশের।

সোমবার সকালে দুবরাজপুরের খোঁয়াজ মহম্মদপুরের ধানমাঠে নিহতের ধড় উদ্ধার করতে পারলেও মাথা ও পা মিলছিল না। অভিযুক্তের বলে দেওয়া জায়গা, ইলামবাজারের জয়দেব ঘেঁষা অজয় নদে সোমবার বিকেলে ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চষে ফেলেছিলেন ডুবুরিরা। খুঁজেছে পুলিশও। কিন্তু, সুভাষবাবুর দেহাংশ না মেলায় পুলিশ বুঝতে পারে, খুনের অভিযোগে ধৃত শেখ মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সোনালি বিবি মিথ্যা বলেছে। ফের জেরা করা হয় দু’জনকে। পুলিশকে মতিউর জানায়, প্রৌঢ় বাম নেতার সঙ্গে নিজের স্ত্রীর সম্পর্কের কথা জানার পর থেকেই তাঁকে খুনের সুযোগ খুঁজছিল সে। গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) স্ত্রীকে দিয়েই সুভাষবাবুকে বাড়িতে ডাকায় এবং খুন করে।

জটিল এই হত্যা-রহস্যের এত দ্রুত কিনারা করার জন্য তদন্তকারী অফিসার তথা নানুর থানার ওসি মনোজ সিংহ এবং দুবরাজপুর থানার ওসি শেখ মহম্মদ আলির প্রশংসা করেছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।

১৮ তারিখ সকালে বোলপুর জীবন বিমা অফিসে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন সুভাষবাবু। পরের দিন তাঁর বাইক পাওয়া যায় নানুরের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের কলেজের সামনে। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, নানুরে বাইক মিললেও, সুভাষবাবুর মোবাইল ফোনের শেষ টাওয়ার লোকেশন দেখাচ্ছিল খোঁয়াজ মহম্মদপুরে। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানে, ওই গ্রামে সুভাষবাবু বন্ধুর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। শুক্রবারও তিনি ওই যুবতীর শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। তদন্ত যত এগিয়েছে তত অবাক হয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। সেটা শুধু সুভাষবাবুর দেহের বাকি অংশ খোঁজা, বা পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে গল্প ফাঁদা নয় বরং তার আগের পরিকল্পনা দেখেও। পুলিশের দাবি, জেরায় তারা জেনেছে, স্ত্রীর সঙ্গে নিহতের সম্পর্ক জানার পর থেকেই মতিউর খেপে ওঠে। কেমন সম্পর্ক ছিল, সেটা জানার জন্য মাঝে মধ্যেই স্বামী বাড়ি নেই জানিয়ে সোনালিকে দিয়ে সুভাষবাবুকে ফোন করাতো মতিউর। এবং পাশে থেকে সব কথাই সে শুনত। সোনালির ইচ্ছে না থাকলেও তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে এই কাজ করতে বাধ্য করত মতিউর। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এ-ও এক ধরনের বিকৃত মানসিকতা। যত এ ভাবে ফোন হত, সুভাষবাবুর প্রতি অক্রোশ ততই বাড়ছিল।’’

তদন্তকারীদের আরও ধারণা, খুনের পরে ওই রাতেই প্রাক্তন সিপিএম নেতার বাইক তৃণমূলের নেতার কলেজের সামনে রেখে আসার পিছনে মতিউরের উদ্দেশ্য ছিল, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক রং দেওয়া। পুলিশ যথেষ্ট তৎপর না হলে সেই সম্ভাবনাই জোরাল হতো। তবে, সোনালিকে দিয়ে

সুভাষবাবুকে ডেকে আনিয়ে খুন করা হয়েছে, এখনই সেটা প্রকাশ্যে বলতে চাননি পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খুনি দেহ লোপাট ও পুলিশকে বিভ্রান্ত করার নানা ফন্দি এঁটেছিল ঠিকই। তবে এখনও তদন্ত চলছে। ফলে, এখনই সেটা বলার সময় আসেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Leader Murder Dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy