হাতির দলের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে এ বার তাই ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনা হয়েছে মেদিনীপুরে। ফাইল ছবি
দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গল এলাকার মানুষজন বারো মাসই হাতির ভয়ে থাকেন। হাতির হানায় ফি বছর হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়, ঘরবাড়ি ভাঙে, হয় প্রাণহানিও। জঙ্গলমহলে হাতির হামলায় ক্ষয়ক্ষয়তির সার্বিক ছবিটা ভয়ানকই।
হাতির দলের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে এ বার তাই ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনা হয়েছে মেদিনীপুরে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এমন পরিকল্পনা বলে বন দফতরের এক সূত্রে খবর। আপাতত দু’টি ড্রোন আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ড্রোন পরীক্ষামূলক ভাবে ওড়ানোও হয়েছে চাঁদড়া বনাঞ্চলে। মেদিনীপুরের ডিএফও সন্দীপ বেরোয়াল বলছেন, ‘‘ড্রোন রয়েছে। প্রয়োজনে নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হবে।’’ এক বনকর্মীর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ড্রোন ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলি পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে হাতির দলের গতিবিধি। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’’
সম্প্রতি পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রোন উড়িয়ে ছবি তোলা হয়েছে। তাতে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে, হাতির দলের অবস্থান ঠিক কোথায়, কতগুলি হাতিই বা রয়েছে। মেদিনীপুর বন বিভাগের এলাকায় এখন ৭৮-৮২টি হাতি রয়েছে। মেদিনীপুর গ্রামীণ থেকে বেশিরভাগ হাতি চলে এসেছে শালবনির গ্রামীণ এলাকায়। বন দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার শালবনির পিঁড়াকাটা রেঞ্জে হাতির দু’টি বড় দল ঘুরে বেড়িয়েছে। একটি দলে ৩৩-৩৫টি হাতি ছিল। আরেকটি দলে ২৬-২৮টি হাতি ছিল। নয়াবসত রেঞ্জেও ১০-১২টি হাতির একটি দল ছিল। যে জঙ্গলে হাতি থাকছে, সেখানে ছাতু বা মাশরুম তুলতে যাবেন না— এই মর্মে স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে।।
জঙ্গলমহলে হাতি এখন ‘ত্রাস’। প্রায় সারা বছর ধরে কখনও পরিযায়ী দলমার হাতি, কখনও স্থায়ীভাবে থাকা ‘রেসিডেন্ট’ হাতিদের তাণ্ডবে জেরবার হন লাগোয়া গ্রামের মানুষজন। বছরের বড় সময় জুড়েই দলমার হাতির দল এখন জেলার বনাঞ্চলে থেকে যাচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের দলমায় হাতিদের থাকার অনুকূল পরিবেশ আর নেই। ফলে, দলমা থেকে আসা পরিযায়ী হাতিরা বেশিরভাগ সময়ে এ রাজ্যের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগে হাতির দল জঙ্গলমহলে মাস দুই-তিনেক কাটিয়ে খাবারের খোঁজে ওড়িশা চলে যেত। কিন্তু সেখানে সীমানা বরাবর খাল খনন করা হয়েছে। ফলে, হাতির দল ওড়িশায় ঢুকতে বাধা পাচ্ছে। তাই এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি। শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর ডিভিশনেই ২০১১ সালের মে মাসের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৬০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাতির হানা ঠেকাতে পরিখা খনন, বেড়া দেওয়া-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে সে সব ফলপ্রসূ হয়নি। এক সময়ে ময়ূরঝর্না প্রকল্পের পরিকল্পনা হয়েছিল। লোকালয়ে হাতির হানা ঠেকাতে এ বার ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরির ভাবনা চলছে। রয়েছে হাতির করিডর তৈরির প্রস্তাব। জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মেদিনীপুরের এক বনকর্তার মতে, ‘‘হাতিরা বাসভূমি হারাচ্ছে উন্নয়ন ও মানুষের বসতির দ্রুত বৃদ্ধির কারণে।’’ তবে লোকালয়ে হাতির গতিবিধি ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কমবে। সেই সূত্রেই ‘মাস্টার প্ল্যানে’র পরিকল্পনা। নজরদারিতে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারও সেই লক্ষ্যেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy