শুনশান তাজপুর বন্দরের সাইট অফিস। ছবি: শুভেন্দু কামিলা।
গত বছর বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পরে গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে বুক বেঁধেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত এলাকা তাজপুর। রাজ্য সরকার ‘আগ্রহপত্র’ দেওয়ার পরে গৌতম আদানির সংস্থার প্রতিনিধিরা তাজপুরে ঘুরেও গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে দরপত্র চাওয়ার পরে সেই বন্দর নিয়ে সংশয় তৈরি হয়ে গেল।
এ বারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই তাজপুর বন্দরের দরপত্রে অংশ নিতে ইচ্ছুকদের আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি আদানিরা আর এই প্রকল্পের সঙ্গে নেই? আদানি বা রাজ্য সরকার, কোনও তরফেই স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। ফলে, সংশয় বাড়ছে তাজপুরের।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তাজপুরে আদৌ গভীর সমুদ্র বন্দর হবে কি না, সংশয় ছিল। কেন্দ্রকে বাদ দিয়ে শেষে একক ভাবে বন্দর গড়তে উদ্যোগী হয় রাজ্য। শেষে দীর্ঘদিনের জট কাটিয়ে আদানি গোষ্ঠীকে ‘আগ্রহপত্র’ দেন মমতা। তার পরে যে ঠিক কী হল, বুঝে উঠতে পারছে না সাগর পাড়ে মৎস্যজীবীদের এই গ্রাম।
তাজপুরে বন্দরের পরিকাঠামো তৈরির কোনও কাজই শুরু হয়নি। তবে ২০১৯ সালে রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের যৌথ উদ্যোগে শঙ্করপুরে তাজপুর বন্দরের একটি ‘সাইট’ অফিস খোলা হয়। সেটি এখনও আছে। তিন জন কর্মী সর্বক্ষণ থাকেন। তাঁদেরই অন্যতম গৌরশঙ্কর নায়ক বললেন, ‘‘গত বছর দুর্গাপুজোর আগে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদল ‘সাইট’ অফিসে এসেছিল। তাঁরা বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত কিছু এলাকা ঘুরেও দেখেন। তার পর আর কেউ আসেননি।’’
তাজপুর থেকে শঙ্করপুর— বিস্তীর্ণ এলাকায় কোথাও বন্দর তৈরির কিছুই নেই। দু’-এক জায়গায় কয়েক জন পর্যটকের দেখা মিলল শুধু। স্থানীয় যুবক কৌশিক মহাকুড় বলছিলেন, ‘‘২০১৯ সালে তাজপুর বন্দরের সাইট অফিস উদ্বোধনের পর থেকে প্রাথমিক কাজও শুরু হয়নি। আদৌ এখানে বন্দর হবে তো!’’ চন্দন বড়াই নামে আর এক যুবক বলেন, ‘‘বন্দর হলে তো খুব ভাল। কর্মসংস্থান হত। কিন্তু যদি সেই কাজ আদানির মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গোষ্ঠী না করে, তা হলে আদৌ হওয়াটা মুশকিল।’’ তাজপুরে সমুদ্র সৈকতের ধারে খাবারের দোকান চালান স্থানীয় জলধা গ্রামের প্রমীলা বেরা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর নতুন নতুন কথা শুনছি। শুধু পর্যটনের উপরে তো বেঁচে থাকা যায় না।’’
তাজপুরের অদূরে মন্দারমণি লাগোয়া দাদনপাত্র বাড়ে খাস জমিতেই গড়ে ওঠার কথা বন্দরের অনুসারী শিল্পের। হাজার একরের বেশি বিস্তীর্ণ সেই এলাকা এখন গোচারণভূমি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনবীর আফজল এ দিন ফোন ধরেননি। তবে, জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “ওড়িশার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাজার অনেক বড়। ফলে তাজপুরে বন্দরের সম্ভাবনা যথেষ্ট।”
গ্রিনফিল্ড প্রযুক্তিতে তাজপুরে বন্দর তৈরিতে ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াও পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ হবে আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে সড়ক এবং রেল যোগাযোগের উপর বন্দরের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করছে। প্রশাসনিক কর্তারা আগে দাবি করেছিলেন, সুগম যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা চলছে। তবে কোনও কিছুই স্পষ্ট নয় স্থানীয়দের কাছে। এ নিয়ে সরব বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিকের কটাক্ষ, ‘‘তাজপুরের বন্দর নিয়ে রাজ্য সরকার পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছে।’’ বিজেপির কাঁথি সংগঠনিক জেলার নেতা অসীম মিশ্রেরও দাবি, ‘‘সবটাই তৃণমূলের নাটক।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি অবশ্য বলেন, ‘‘বন্দর অবশ্যই হবে। তবে বিশ্ববাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু বলব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy