ধর্মতলায় তৈরি হচ্ছে চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চ। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
দু’মাসের ব্যবধানে আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে আবারও ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে শুরু হল চিকিৎসকদের অবস্থান-বিক্ষোভ। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সদস্যরা। যদিও এ বারের কর্মসূচির জন্য অনুমতি নিতে হয়েছে আদালত থেকে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’ এবং ‘অভয়া মঞ্চের’ তরফে সংগঠিত ওই অবস্থান-বিক্ষোভ চলবে ২৬ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত। তবে সাত দিনের ওই কর্মসূচির জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এর আগে গত ৫ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ওই জায়গাতেই অনশন আন্দোলন করেছিল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট।
৯০ দিন পেরিয়ে গেলেও শিয়ালদহ আদালতে সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা না দেওয়ায় আর জি করে তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়া খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় জামিন পেয়েছেন সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল। সেই প্রেক্ষিতে সিবিআইকে অবিলম্বে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা এবং সন্দীপের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশে রাজ্যকে দ্রুত সম্মতি দেওয়ার দাবিতে ধর্মতলায় অবস্থান করতে চেয়ে কলকাতার নগরপালকে দিন কয়েক আগে ইমেল পাঠিয়েছিল চিকিৎসকদের ওই যৌথ মঞ্চ। কিন্তু বড়দিন ও নতুন বছরে ওই কর্মসূচিতে যানজট এবং আইনশৃঙ্খলার সমস্যার আশঙ্কার কারণ দেখিয়ে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এর পরেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট অবস্থান-বিক্ষোভের অনুমতি দেয়।
কিন্তু বছর শেষের উৎসবে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে লোকজনের ভিড় ও সেখানে অবস্থান-বিক্ষোভ মঞ্চের পরিধি নিয়ে শুক্রবার আদালতে আপত্তি জানায় কলকাতা পুলিশ। কিন্তু অবস্থান-বিক্ষোভ এবং তার জন্য অস্থায়ী মঞ্চ তৈরিতে অনুমতি দেন হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ডোরিনা ক্রসিং থেকে ৫০ ফুট ছেড়ে, এ দিন থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিবারাত্রি কর্মসূচি করা যাবে। ৪০ ফুট লম্বা ও ২৩ ফুট চওড়া জায়গার মধ্যে মঞ্চ ও জমায়েত করতে হবে। একসঙ্গে ২০০-২৫০ জনের বেশি সদস্য বা সাধারণ মানুষের জমায়েত করা যাবে না। পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে ও পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। জমায়েত বেশি হলে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং কারও উদ্দেশ্যে কোনও রকম প্ররোচনামূলক মন্তব্য করা যাবে না।
এ দিন ওই অবস্থান-বিক্ষোভের মামলার শুনানি চলাকালীন ডোরিনা ক্রসিংয়ে অন্যান্য সংগঠনকে কর্মসূচি পালনে পুলিশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। মামলাকারী সংগঠনের আইনজীবী শামিম আহমেদের অভিযোগ, ওই একই জায়গায় অন্যান্য সংগঠনকে অনেক বেশি সময় ধরে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। বিচারপতিও জানান কিছুদিন আগেই তিনি দেখেন ওই একই জায়গায় অন্য সংগঠন কর্মসূচি করছে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কাউকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে একই জায়গায় আপত্তি করছে পুলিশ। পুলিশ ও প্রশাসনের এই দ্বিচারিতা সমর্থনযোগ্য নয় বলেও জানান বিচারপতি।
চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের তরফে উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনেই আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চালাব। সাধারণ মানুষকেও তাতে শামিল হতে আহ্বান জানাচ্ছি। আর জি করকে এই উৎসবের মরসুমে দয়া করে ভুলে থাকবেন না।’’
শেষ দুই-তিন দিন ধরেই ডোরিনা ক্রসিংয়ে যে জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে সার দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স, বড় গাড়ি রেখে দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু দুপুরে আদালতের মৌখিক নির্দেশ আসার পরে সেই সমস্ত যানবাহন সরিয়ে নেয় পুলিশ। পাশাপাশি, জায়গার মাপজোক করেন পুলিশ অফিসারেরা। ঘিরে দেওয়া হয় আদালতের নির্দিষ্ট করে দেওয়া জায়গা। দুপুর চারটের পরে আয়োজকদের তরফে ডেকরেটার্সের লোকজন এসে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করেন। আনা হয় রাত্রিযাপনের জন্য তোষক, চাদর।
এ দিন সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায় সিনিয়র চিকিৎসকেরা সেই কাজের তদারকি করছেন। রাতে ছাউনি দেওয়া মঞ্চ তৈরির পরে সেখানে অবস্থানে বসেন চিকিৎসক ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সদস্যরা। তবে আদালতের নির্দেশ লিখিত ভাবে হাতে না পাওয়া পর্যন্ত জেনারেটর দিয়েই আলো জ্বালানো হয়েছে। অবস্থানের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া জায়গা থেকেই শহরের প্রাণ কেন্দ্রে আবারও ছড়িয়ে পড়ছে স্লোগান, ‘তোমার স্বর, আমার স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy