এসএসকেএম হাসপাতালে বাবার কোলে অপেক্ষায় গুরুতর জখম নুর হোসেন। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
ভাঙা পা নিয়ে বুধবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালের অস্থি বিভাগের সামনে বসে ছিলেন মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাসিন্দা সালাম মণ্ডল। তিনি জানান, বহরমপুরের সরকারি হাসপাতাল তাঁকে এসএসকেএমে ‘রেফার’ করেছে। সাড়ে ছ’হাজার টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে ভোরে আত্মীয় নিজাম মণ্ডলের সঙ্গে কলকাতায় পৌঁছন তিনি। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টাতেও চিকিৎসকের দেখা না-মেলায় তাঁকে ওই ভাবেই অপেক্ষা করতে হয়েছে।
ডাক্তারদের চিকিৎসা বন্ধের কর্মসূচির জেরে রোগীরা পরিষেবা থেকে কী ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, সালামের ভোগান্তি তার প্রতীক। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি) বিলের বিরোধিতায় এ দিন কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। সেই কর্মসূচির দরুন কলকাতার পাশাপাশি জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে। ছবিটা মিশ্র হলেও দুর্ভোগের ভাগই বেশি। বঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণে দেখা গিয়েছে হয়রানির ছবি। কোথাও কম, কোথাও বেশি। আইএমএ-র কর্মবিরতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ডিএসও-র ডাকা ছাত্র ধর্মঘট। দুপুরে নীলরতন সরকার হাসপাতালে একটি মিছিলও হয়।
নীলরতন সরকার হাসপাতালে ডাক্তার-নিগ্রহের পরে রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা অচল ছিল কয়েক দিন। এ দিন ডাক্তারদেরই কর্মসূচিতে ফের ভুগতে হল রোগীদের। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের অভিযোগ, বহির্বিভাগ খোলা ছিল, কিন্তু কোনও ডাক্তার রোগী দেখেননি। অন্তত দু’হাজার রোগী ফিরে গিয়েছেন। দুপুরে রোগী এবং তাঁদের পরিজনের একাংশ বহির্বিভাগের সিস্টার ইনচার্জ কল্যাণী পালকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। জলপাইগুড়ির সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকেও ফিরে গিয়েছেন বহু রোগী। টিকিট কেটেও ডাক্তার দেখাতে না-পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেউ কেউ। আর জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগই বহির্বিভাগের চেহারা নিয়েছিল। সেখানেই আলাদা আলাদা ভাবে রোগী দেখেছেন সব বিভাগের চিকিৎসকেরা। আলিপুরদুয়ারের ছবি কিছুটা উজ্জ্বল। সেখানকার জেলা হাসপাতাল, ফালাকাটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহির্বিভাগে পরিষেবা মিলেছে। জেলায় চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারও খোলা ছিল।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে শিশু ও সার্জারি বিভাগের বহির্বিভাগ খোলা ছিল মাত্র ঘণ্টা তিনেক। অন্য বিভাগে তা-ও ছিল না বলে ওই কলেজ সূত্রের খবর। কয়েক হাজার রোগী দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার পরে বহির্বিভাগে গিয়ে দেখেন, চিকিৎসক নেই! তাতে অশান্তি বাড়ে। রোগীদের প্রশ্ন, কর্মবিরতির কথা আগে জানানো হল না কেন? সুপার দেবদাস সাহার দাবি, ‘‘বহির্বিভাগে কর্মবিরতির কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে অন্য পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।’’
চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালেও ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা রোগীরা ফিরে যান। কলকাতার এনআরএসের মতো উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসকেরা কালো ব্যাজ পরে রোগী দেখেন। মেডিক্যাল বিল বাতিলের দাবিতে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কালো ব্যাজ পরে সুপারের অফিসের সামনে কিছু ক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। বাঁকুড়ায় বহির্বিভাগ খোলা থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন না বলে অভিযোগ। তবে অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানের দাবি, ‘‘চিকিৎসকেরা কাজ করেই আন্দোলনে পাশে রয়েছেন।’’
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা পরে বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার খোলা হয়। আইএমএ-র কর্মসূচির কোনও প্রভাব পড়েনি বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ, সিউড়ি জেলা হাসপাতালে।
‘‘যা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও বেশি সাড়া পেয়েছি। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এনএমসি বিল পেশ করার কথা। প্রস্তাব অনুযায়ী বিল যদি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো না-হয়, তা হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন তো করবই। তার পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও যাব,’’ বলেন আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy