উৎসবের মরসুমে লাগামছাড়া উচ্ছাস চিন্তা বাড়িয়েছে ডাক্তারদের ছবি পিটিআই।
নিরন্তর আবেদন-নিবেদন, সতর্কতা-হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করাটা আদৌ কি ‘ভুল’ না নিজের পায়ে কুড়ুল মারা? সেই 'ভুল’ বা আপন আপন পায়ে কুঠারাঘাত কি চলতেই থাকবে?
অতিমারির তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে এই প্রশ্নই তুলতে শুরু করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্যে অশনি-সঙ্কেত: "এই সব ভুল কি চলতেই থাকবে, আর বাড়তেই থাকবে করোনা!"
ভুল বা অবিমৃশ্যকারিতা কোন সমুচ্চ পর্যায়ের হয়েছে, দুর্গাপুজোর শেষ কয়েক দিনে রাস্তার জনস্রোত সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আর তাতে যা হওয়ার, তা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ বার তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষের ভূমিকা নিয়ে। কারণ, পুজোর সময় তাঁরা লাগামছাড়া উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা পরীক্ষায় অনীহা। এক চিকিৎসক বলেন, "আর কত ভুল হবে, সেটাই ভাবছি। পুজোয় যথেচ্ছ ভিড় করা, পরীক্ষা না-করানোর মতো সব ভুল একত্রে যা দাঁড়াবে, তার মাসুল গুনতে গিয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হবে।" আরও বড় সর্বনাশের আগে ন্যূনতম উপসর্গ বা উপসর্গহীন অসুস্থতার ক্ষেত্রে অবিলম্বে পরীক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞেরা।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, এখন রোজ ঠিক ক’জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তার প্রকৃত হিসেব দিনের আলোয় আসছে না। এর একমাত্র কারণ পরীক্ষা কম হওয়া, পরীক্ষা না-করানো। এই প্রবণতা চোরাগোপ্তা ছুরি মারার মতো বিপদ ডেকে আনছে বলেই স্বাস্থ্য শিবিরের পর্যবেক্ষণ।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে। তাঁরা ভাবছেন, টিকার দু’টি ডোজ় তো নেওয়া হয়ে গিয়েছে, অতএব আর সংক্রমণ হবে না! তাই অল্প সর্দি, কাশি, গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলেও বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না। অনেকে নিজেরা চিকিৎসা করছেন। আবার যাঁরা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাতে নারাজ। মেডিসিনের এক চিকিৎসকের কথায়, "কাশি, সর্দি ও গা-হাত-পায়ের ব্যথা না-কমায় এক রোগী এসেছিলেন। করোনা পরীক্ষা করতে বলায় তিনি খুব বিরক্ত হলেন। পরে অবশ্য আর দেখাতে আসেননি।" একই ধরনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে অন্য চিকিৎসকদেরও। তাঁরা জানাচ্ছেন, টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরেও কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সে-সব ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গহীন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর সেটাই মারাত্মক ভয়ের।’’
সেটা ভয়ানক ভীতিপ্রদ কেন? চিকিৎসক শিবির জানাচ্ছে, এটা বেশি ভয়ের। কারণ, উপসর্গহীন হলে বোঝা সম্ভব নয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করোনায় সংক্রমিত কি না। মৃদু উপসর্গ দেখা দিলেও বেশির ভাগ মানুষ পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এক সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ বলেন, "উপসর্গহীন হোক বা মৃদু উপসর্গ, দুই ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা একই। এটা সকলের মনে রাখা প্রয়োজন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পরীক্ষা করানো জরুরি।" স্বাস্থ্য দফতরের রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৪ জন। মৃতের সংখ্যা ১৪। পজ়িটিভিটি রেট ২.৩০ শতাংশ। পরিস্থিতি দেখে চিকিৎসক থেকে সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত সকলে বলছেন, "সংক্রমণের পারদ কিন্তু চড়ছেই। এখন সময়ের অপেক্ষা। আচমকাই হয়তো এক দিন দেখা যাবে, বঙ্গের ময়দানে হাইজাম্প দিয়ে এক হাজারের ঘরে ঢুকে গিয়েছে করোনা।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy