Advertisement
০৩ অক্টোবর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

কর্মবিরতি নিয়ে দ্বিমত ডাক্তারেরা

আন্দোলনকারীদের দুই মতেই আপাতত ঝুলে রয়েছে কর্মবিরতি প্রত্যাহার। দুর্গাপুজো শুরুর আগে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও মতামত জুনিয়র ডাক্তারেরা জানাবেন কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।

আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়ে কলজে স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল জুনিয়র চিকিৎসকদের।

আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়ে কলজে স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল জুনিয়র চিকিৎসকদের। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৫
Share: Save:

জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে মহালয়ার দুপুরে, শহরের রাজপথ ভাসল মহামিছিলে। এর পরে শহরের প্রাণকেন্দ্র, ধর্মতলা চত্বরে চলল সমাবেশ। তবে, লালবাজার কিংবা স্বাস্থ্য ভবনের মতো বুধবার থেকে অবস্থানে বসার পথে হাঁটেননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। পুলিশের নির্ধারিত সময়ের খানিক পরেই সমাবেশ শেষ করে, আর জি করের ঘটনায় ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন জারি থাকার কথা ঘোষণা করে তাঁরা ফিরে যান। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির বিষয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান বুধবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি।

এ দিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিট নাগাদ সমাবেশস্থলে এসে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। কারণ, মিছিল ও সমাবেশের জন্য দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলেই দাবি পুলিশের। পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পর মুহূর্তেই সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।

এরই মধ্যে এ দিন সাধারণ মানুষের স্বার্থে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির পথে না হেঁটে, আন্দোলন-প্রতিবাদের অন্য পথ বা পন্থা জুনিয়র ডাক্তারদের স্থির করার পরামর্শ দিচ্ছেন সিনিয়র চিকিৎসকদের অনেকেই। এ দিন রানি রাসমণি রোডের সমাবেশ মঞ্চ থেকেও আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘কারও চাপে বা ভয়ে নয়। কর্মবিরতি থেকে সরে এলে, তা করা হবে মানুষের কথা ভেবে।’’ কিন্তু সেটা কবে? জানা যাচ্ছে, আন্দোলনকারীদের দুই মতেই আপাতত ঝুলে রয়েছে কর্মবিরতি প্রত্যাহার। দুর্গাপুজো শুরুর আগে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও মতামত জুনিয়র ডাক্তারেরা জানাবেন কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।

পূর্ণ কর্মবিরতি না করার পরামর্শ এসেছে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারের কাছ থেকেও। এ দিন আর জি ঘটনার ন্যায় বিচারের দাবিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক কনভেনশনে তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ কর্মবিরতিতে কিন্তু মানুষের ক্ষতি হবে। তাতে জনসমর্থন নষ্ট হয়।’’ প্রয়োজনে আংশিক প্রতিবাদ চালানোর কথা বলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘অনেকে চাইবেন, ডাক্তাররা ভুল করুন। তা যেন না হয়।’’ ডাক্তারদের অনুঘটক বলে উল্লেখ করে জহর বলেন, ‘‘ওঁদের পাশে আমরা সকলে আছি।’’ একই সুর শোনা যায় চিকিৎসক কুণাল সরকারের গলাতেও। জুনিয়র ডাক্তারদের তিনি বলেন, ‘‘মাথা ঠান্ডা করে, বাস্তব পরিস্থিতি আপনারা বুঝে দেখুন। এই আন্দোলন কিন্তু মানুষের বিরুদ্ধে নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া কৃত্রিম সমাধান হলে ঝামেলা চলতেই থাকবে। জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়নের রূপ যেন না নেয়।’’ এ দিন সমাবেশ মঞ্চ থেকে ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-র আহ্বায়ক পুণ্যব্রত গুণও বলেন, ‘‘মানুষ যাতে আপনাদের সঙ্গে থাকেন, সেটা ভেবে সমস্ত রকমের সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-র ডাকে এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয় মিছিল। ‘আর কত দিন সময় চাই, জবাব দাও সিবিআই’-সহ বিভিন্ন স্লোগান তুলে মহাত্মা গান্ধী রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে সেই মিছিল গিয়ে পৌঁছয় রানি রাসমণি রোডে। এ দিনের মিছিলে সিনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে শুরু করে অনেক সংগঠনের সদস্য, সাধারণ মানুষও অংশ নেন। কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, কারও হাতে লাল, হলুদ কাপড়ের পতাকা। যাতে লেখা ছিল, ‘সুভাষ বসুর এই বাংলায়, ভয়ের রাজনীতির ঠাঁই নাই’। সারারাত জেগে, হলুদ কাপড়ে স্লোগান-সহ ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য’ লিখে, তা পিঠে বেঁধে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসক রাজদীপ সাউ।

এত দিন আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। সেই সময়েই পায়ে চোট পান। তবে এ দিন পায়ে প্লাস্টার ও হাতে লাঠি নিয়ে মিছিলে হাঁটলেন অমৃতা ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘পুরোপুরি কর্মবিরতি ঘোষণা করতেই সরকারি তড়িঘড়ি দু’টি কমিটির নির্দেশিকা জারি করল। কেন, এটা কী আগে করা যেত না?’’ আর জি করের ঘটনার ন্যায় বিচারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দাবির সঙ্গে শুধু তাঁরা নন, সাধারণ মানুষও জড়িত। সেই দাবি তুলে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের প্রতিনিধি অনিকেত মাহাতো দাবি করেন, তাঁদের আন্দোলন আজ নাগরিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আবার, এই আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখার বার্তা দিলেন ফ্রন্টের আর এক প্রতিনিধি কিঞ্জল নন্দ।

তবে, খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের ধীর গতিপ্রকৃতি, বিভিন্ন ধোঁয়াশা স্পষ্ট না হওয়া-সহ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে রাজ্যের সমস্ত কিছু বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রসঙ্গে এ দিন দেবাশিস বলেন, ‘‘আমরা কাউকেই ভরসা করতে পারছি না। তাই আন্দোলনের আগুন জিইয়ে রাখতে প্রয়োজনে দিল্লি যাব।’’ প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিকে তাঁদের ক্ষুদ্র স্বার্থ বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।

এ দিন সমাবেশ শেষে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ডাকে বাজে কদমতলা ঘাটে গঙ্গায় এক হাজার প্রদীপ ভাসানো কর্মসূচিতে অংশ নেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বললেন, ‘‘দেবীপক্ষের সূচনা লগ্নে প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে রাখলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital R G Kar Protest Doctor's Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE