Advertisement
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রশ্ন-জুজুর ভয়ে শংসাপত্রে ডেঙ্গি লিখতে অনীহা

চিকিৎসকদের একাংশের পাল্টা অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবনের জানতে চাওয়ার প্রক্রিয়ায় অহেতুক বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৮
Share: Save:

রোগীর মৃত্যুর কারণ যেখানে স্পষ্টতই ডেঙ্গি, সেই সব ক্ষেত্রেও অনেক সময় ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ বা মৃত্যু শংসাপত্রে ডেঙ্গি লেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। কেন তা লেখা হচ্ছে না, এটা তথ্য গোপন করার চেষ্টা কি না, তা নিয়ে জল্পনা প্রবল। আসলে ডেঙ্গি লিখলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ওই রোগের ‘প্রোটোকল’ বা নিয়ম মেনে চিকিৎসা করেছেন কি না, তা জানতে চাইবে স্বাস্থ্য ভবন। সেই প্রশ্ন এড়াতে কিছু চিকিৎসক ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ ডেঙ্গি লিখছেন না বলে অভিযোগ উঠছে।

চিকিৎসকদের একাংশের পাল্টা অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবনের জানতে চাওয়ার প্রক্রিয়ায় অহেতুক বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এই ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়ার আগে ডেঙ্গির উপস্থিতি সম্পর্কে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে নিতে হচ্ছে। আইজিএম (ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম) পরীক্ষায় রিপোর্ট পজ়িটিভ হলে তবেই ডেঙ্গি লিখছেন তাঁরা। যদিও স্বাস্থ্য ভবনের খবর, এলাইজ়া পদ্ধতির রক্তপরীক্ষায় এনএসওয়ান (ডেঙ্গির জীবাণু) পজ়িটিভ হলে ডেঙ্গি লেখা যায়।

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব পাবলিক হেল্‌থ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির উল্লেখ না-করলে ভাল হয়, এমন একটা ধারণা চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে কাজ করছে। ‘‘ওই সব চিকিৎসক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এটা করে চলেছেন। আবার সিএমওএইচ, বিএমওএইচ স্তরেও চাপ থাকতে পারে,’’ বলছেন অনির্বাণবাবু।

বেসরকারি শিশু হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পাঁচ বছর আগেও ক্লিনিক্যাল ডেঙ্গি, কোয়ারি ডেঙ্গি শক সিনড্রোম লিখে ডায়াগনসিস করতাম। কিন্তু এখন আইজিএম রিপোর্ট ছাড়া ডেঙ্গি লিখলে প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হবে। সেই জন্য অনেকে ডেথ সার্টিফিকেট বা ডায়াগনসিস নথিতে ডেঙ্গির উল্লেখ করতে চাইছেন না।’’ একই সুরে রাজ্যের একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক হাউসস্টাফও বলেন, ‘‘ডেঙ্গি লিখলে সুপারের অফিস থেকে নোট আসছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে, কেন ডেঙ্গি লিখলাম।’’

চিকিৎসকদের মতে, প্রশ্নাবলির এমন ঝক্কি এড়াতেই ঘুরিয়ে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লেখার প্রবণতা বাড়ছে। কখনও লেখা হচ্ছে, ‘এনএসওয়ান পজ়িটিভ ফিভার উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া’! আবার কখনও মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ভাইরাল ফিভার ইনসিডেন্টাল এনএসওয়ান পজিটিভ’-এর কথা লেখা হচ্ছে সার্টিফিকেটে।

একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের একাংশ ভাবছেন, ডেঙ্গি সেরোলজি পজ়িটিভ না-হলে ডেঙ্গি নয়। এনএসওয়ান ২৪-৭২ ঘণ্টার মধ্যে পজ়িটিভ থাকে। কিন্তু জ্বরের পাঁচ-ছ’দিন পরে সেরোলজি পজ়িটিভিটি পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, ডব্লিউএইচও বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুস্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে, ডেঙ্গি-প্রবণ এলাকায় জ্বরের ক্ষেত্রে এনএসওয়ান পজ়িটিভ পাওয়া গেলে সেটা ডেঙ্গিই।’’ আর এক বেসরকারি হাসপাতালের
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে আইজিএম পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। কী কী উপসর্গ থাকলে ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি লেখা যাবে, তার একটা নির্দেশিকা থাকা উচিত।

ডেঙ্গিরোগীর ডেথ সার্টিফিকেটে নিত্যনতুন শব্দবন্ধের ব্যবহার যে হাস্যকর, স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশও তা মেনে নিচ্ছেন। তবে এর জন্য ‘ডেঙ্গি প্রোটোকল’-কে কাঠগড়ায় তোলা অনুচিত বলে মনে করেন তাঁরা।

‘‘প্রোটোকল মেনে নিজেদের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে নিশ্চিত হলে ভয় পাওয়ার কথা নয়। কাউকে হয়রান করার জন্য এই প্রোটোকল তৈরি করা হয়নি। ডেঙ্গিরোগীদের মৃত্যু ঠেকানোই আমাদের লক্ষ্য। সেটা সম্ভবও হয়েছে,’’ বলছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy