Advertisement
E-Paper

‘সংগঠন জানি, আন্দোলনও জানি, কিন্তু ভোট করাতে জানি না’! দলীয় বৈঠকে আবার বেফাঁস দিলীপ

লোকসভা ভোটের পর থেকে রাজ্যে নেতৃত্বের সঙ্গে দিলীপের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কারও নাম না করলেও তাঁর আক্রমণের তির ছিল রাজ্য নেতৃত্বের দিকেই।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৪ ২০:৩২
Share
Save

বিজেপির লোকেরা সংগঠন বোঝেন। আন্দোলনও করতে জানেন। কিন্তু ভোট করাতে জানেন না। একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাঁকুড়ায় বিজেপির জেলা কর্মসমিতির বৈঠকে এ কথাই বললেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির পর্যুদস্ত হওয়া এবং নিজেও বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে হারার পর থেকেই রাজ্য নেতৃত্বকে বিঁধেছেন প্রাক্তন সাংসদ। তার প্রেক্ষিতে দিলীপের এই মন্তব্যও কি রাজ্য নেতৃত্বকে নিশানা করেই? দলের অন্দরে সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে দিলীপ ও বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না শাসকদল তৃণমূল।

লোকসভা ভোটের পর থেকে রাজ্যে নেতৃত্বের সঙ্গে দিলীপের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কারও নাম না করলেও তাঁর আক্রমণের তির ছিল রাজ্য নেতৃত্বের দিকেই। ভোটের পর রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে পরবর্তী দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে কিছু না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশও করেছিলেন দিলীপ। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এ ভাবে চলতে থাকলে প্রয়োজনে রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন! তবে এ সবের মধ্যেও দিলীপ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছিলেন। দেখা করছিলেন বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। দলীয় কোনও নির্দেশ না থাকা সত্ত্বেও। সেখানে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে বিস্তর টানাপড়েনও চলেছে দলে। সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন দিলীপ। সেখানে অবশ্য কোনও বক্তৃতা করেননি। তার পর এই প্রথম বার দলীয় নির্দেশে বিষ্ণুপুরের যদুভট্ট মঞ্চে বিজেপির কার্যকারিণীর বৈঠকে গেলেন দিলীপ।

সেই বৈঠকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দিলীপ বলেন, ‘‘২০২১ সালের নির্বাচনে আমাদের ৭৭টি আসন পেয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, আমরা ১০০-র বেশি আসন পাব। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ ও সরকারি কর্মচারীরাও তা-ই ভেবেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, আমরা সংগঠন জানি। আন্দোলন করতে জানি। কিন্তু ভোট করাতে জানি না। প্রতিটি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভোট করাতে শিখতে হবে।’’ পদাধিকারীদের উদ্দেশেও দিলীপ বলেন, ‘‘দলে এসেছি, একটা পদ পেয়েছি, দল ডেকেছে তাই কর্মসূচিতে আসছি-যাচ্ছি। বিজেপিতে এ রকম করলে হবে না। বিজেপি একটা আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে চলে। প্রধানমন্ত্রী থেকে বিজেপির বুথ স্তর পর্যন্ত সকলেই সেই লক্ষ্য ও আদর্শের জন্য কাজ করে চলেছেন।’’

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে দিলীপের এই মন্তব্যে অস্বস্তিতেই পড়ার কথা নেতৃত্বের। দলের অন্দরে অনেকের মত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্য সভাপতি ছিলেন দিলীপ। সে বার রাজ্যে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এ বারের ভোটে বিজেপির ছ’টি আসন কমে গিয়েছে। মাত্র ১২টি আসনে জিতেছে পদ্মশিবির। আসলে বর্তমান নেতৃত্বের ‘দক্ষতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ। দলের অন্য একটি অংশের মত, দিলীপের কথা মতো যদি ধরে নেওয়া হয় যে, বর্তমান নেতৃত্ব ‘অদক্ষ’, তাই বিজেপির আসন কমেছে রাজ্যে, তা হলে দিলীপ নিজে কেন জিততে পারলেন না? তিনি তো রাজ্য সভাপতি ছিলেন। হাতের তালুর মতো চেনেন-জানেন সব কিছু। তার পরেও তিনি হারলেন কেন? দিলীপের মন্তব্য নিয়ে জেলার নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যে বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন না। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, ‘‘এই বক্তব্য দিলীপদার। তাই এটা নিয়ে আমি কী বলব? উনি দীর্ঘ দিনের রাজনীতিবিদ। কিসের প্রেক্ষিতে উনি এ কথা বলেছেন, তা আমি বলতে পারব না।’’

এ নিয়ে বিজেপি ও দিলীপকে কটাক্ষ করে বাঁকুড়ায় তৃণমূল সাংসদ তথা দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনেক দেরিতে দিলীপ ঘোষের বোধোদয় হয়েছে। ভোট করানো যদি শিখতে হয়, তা হলে বিজেপি নেতারা তৃণমূলের কাছে আসুক। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে এক লক্ষ ৭৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকার পরও কী ভাবে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে জেতা যায়, তা আমাদের দেখে শিখুন বিজেপি নেতারা।’’

Dilip Ghosh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}