বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সতর্ক করা হল দিলীপ ঘোষকে। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দিলীপ ঘোষকে সতর্ক করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিলীপকে চিঠি পাঠিয়ে ‘সংবাদমাধ্যমের সামনে সংযত হওয়ার’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে দলের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ দিলীপকে চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব লাইভ ‘অ-জানাকথা’য় বেশ কিছু মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ। দলের একাংশের মতে তা ‘বিতর্কিত’।
মঙ্গলবার বিকেলে যে চিঠিটি দিলীপকে পাঠানো হয়েছে, তার ভাষা যথেষ্ট কড়া। সেই চিঠিতে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে সংযত থাকতে বলা হয়েছে দিলীপকে। চিঠিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ‘আগে অনেক বার আপনাকে সতর্ক করা হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। আপনার মন্তব্যে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আপাতত সংবাদমাধ্যমে আপনি মুখ খুলতে পারবেন না।’
দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার নির্দেশেই দিলীপকে চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে অরুণ লিখেছেন, ‘আপনার বেশ কিছু বিবৃতি এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্যে রাজ্য নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একই সঙ্গে বিড়ম্বনায় পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ‘অ-জানাকথা’য় দিলীপ যে বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন, তা রাজ্যে তাঁর বিভিন্ন সহকর্মী এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বিড়ম্বনায় ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। এমনিতেই দিলীপের সঙ্গে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা অংশের বনিবনা কম বলে বিজেপির অন্দরে সকলেই জানেন। কিন্তু দিলীপকে কখনও রোখা যায়নি। একাধিক বার তাঁকে মৌখিক ভাবে সতর্কও করা হয়েছে অতীতে। কিন্তু দিলীপ থেকে গিয়েছেন দিলীপেই। ঘটনাচক্রে, আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভের গায়ে-গায়েই গত শনিবার রাতে একটি চ্যানেলেও দিলীপ কিছু মন্তব্য করেছিলেন। সেগুলিও দলের পক্ষে খুব ‘স্বস্তিদায়ক’ ছিল না। তার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে দিলীপকে সতর্ক করা হল।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দিলীপকে বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। চলতি মে মাসে তাঁকে আটটি রাজ্যের সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার আগেই অবশ্য দিলীপ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন, তাঁর স্থালাভিষিক্ত-হওয়া সুকান্ত মুজমদারের অভিজ্ঞতা কম। আনন্দবাজার অনলাইনে প্রশ্নের জবাবেও দিলীপ তাঁর সেই বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। বরং বলেছিলেন, তিনি বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্তকে ‘আগলে রাখতেই’ ওই মন্তব্য করেছিলেন। এ-ও বলেছিলেন যে, ‘‘আমি যখন এসেছিলাম, তখন আমার অভিজ্ঞতাও কম ছিল।’’ তবে তাঁর ওই বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক হতে পারে, তা-ও প্রথম বারেই জানতেন দিলীপ। সে কারণে তিনি নড্ডাকে তাঁর বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপিং দেখিয়েছিলেন বলে ‘অ-জানাকথা’য় জানিয়েছিলেন মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ। বলেছিলেন, ‘‘নড্ডাজির স্ত্রী বাঙালি। ফলে নড্ডাজি বাংলা বোঝেন। আমি কী বলেছিলাম, তার ভিডিয়ো নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছিলাম।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও দিলীপের অবনিবনা নিয়ে অবহিত পদ্মশিবির। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় দিলীপ সাফ বলেছিলেন, শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর কোনওদিনই ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল না। যা রাজ্যের নেতাদের ‘ক্ষুব্ধ’ করার পক্ষে যথেষ্ট। পক্ষান্তরে, দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও চাঁছাছোলা ভাষায় নিজের বক্তব্য এবং মনোভাব জানিয়েছিলেন দিলীপ। তৃণমূল নেতাদের বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলে ফিরে-যাওয়া নিয়ে খানিকটা কটাক্ষের সুরেই বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা দিল্লিতে গিয়ে দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরাই আবার ফিরে যাচ্ছেন। দিল্লির হাওয়া-জল অনেকের সহ্য হয় না। তাই আমি বেশি দিল্লি যাই না।’’
এরই পাশাপাশি দিলীপ ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়েও প্রকারান্তরে ‘অসন্তোষ’ই জাহির করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘তদন্ত হোক। কিন্তু রেজাল্ট চাই!’’ অর্থাৎ, সিবিআই তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু ফল যেন পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের কারণ হিসেবেও তিনি নিজের দলের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘আমরা রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মানুষকে দিতে পারিনি। সেটা আমাদের অক্ষমতা।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy