দলে নতুন করে ‘গুরুত্ব’ পেতে শুরু করে পুরোপুরি স্বমহিমায় দিলীপ ঘোষ! এ বার ‘চায়ে পে চর্চা’য় নদিয়ার গাংনাপুরে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা নেত্রী ও কর্মীদের ‘হিড়িম্বা’, ‘পুতনা’, ‘শূর্পণখা’ আখ্যা দিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। ফুরফুরা শরিফে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একই সুরে কটাক্ষ করেছেন দিলীপ। যার জবাবে তৃণমূল পাল্টা বলেছে, বিজেপি নারীদের সম্মান দিতে জানেই না।
কয়েক দিন আগেই খড়্গপুরে দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন দিলীপ। কয়েক জন মহিলা তাঁর গাড়ির পথ আটকে বসে পড়েন। এর পিছনে তৃণমূল ছিল বলে দাবি করে তাঁদের সম্পর্কে ‘কুকথা’ বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দিলীপ। গাংনাপুরে গিয়ে বুধবার তিনি আবার বলেছেন, “আমি সে দিন ক’টা পুতনাকে তাড়া করেছিলাম! বলেছিলাম, গাড়ি চালিয়ে দেব বুকের উপর দিয়ে!”
রমজ়ান চলাকালীন সম্প্রতি ফুরফুরা শরিফে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই প্রসঙ্গ তুলে দিলীপের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “উনি ফুরফুরা শরিফে ধর্না দিচ্ছেন, আবার দেখাচ্ছেন এখানে (দিঘা) জগন্নাথ মন্দির তৈরি করেছেন। ..গরু মেরে জুতো দান হচ্ছে?” এর পরেই তিনি বলেন, “এই যারা ভেকধারী— কেউ হিড়িম্বা, কেউ পুতনা— ভাববেন না মা হয়ে দুধ খাওয়াতে এসেছে। ...এত দরদ ভাল নয়। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি!”
মহিলাদের সম্পর্কে দিলীপের এই ধরনের মন্তব্য অবশ্য নতুন কিছু নয় এবং খড়্গপুরের ঘটনা নিয়েও ইতিমধ্যে যথেষ্ট শোরগোল হয়েছে। তবে দিলীপের বক্তব্য, “আমরা মা সীতা, মা দ্রৌপদী, এদের মায়ের আসনে বসিয়েছি। শূর্পণখা আর পুতনাকে কখনও বসাব না। তাদের বুকের উপর দিয়ে গাড়িই চালাব!” পুতনা-প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “যে মহিলাকে বধ করেছে, আমরা তাকে মালা দিই, তার ছবি রাখি— আর এটা ভারতবর্ষের সংস্কৃতি।”
রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পাল্টা বলেছেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ ভুলে গিয়েছেন, তিনি ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে থেকে রাজনীতি করছেন। সংবিধান নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান ও স্বীকৃতির কথা বলছে। দিলীপবাবু প্রমাণ করেছেন, বিজেপি তা মানে না।’’
উদ্বাস্তু অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে দেশভাগ ও দাঙ্গার স্মৃতি উসকে দিয়ে কার্যত সশস্ত্র হিন্দুত্বের পক্ষেও সওয়াল করেছেন দিলীপ। তাঁর হুঁশিয়ারি, “যাঁরা ইদ-ইফতার করছেন, নিজেদের ধর্ম পালন করুন। কিন্তু আমাদের ধর্মকর্ম, মেলা-অনুষ্ঠানে কোনও বাধা যেন না আসে। তা হলে সুদর্শন চক্রও বেরোবে, তির-ধনুকও বেরোবে।” তাঁর মতে, “আমাদের ধর্ম শিখিয়েছে— শাস্ত্রও চাই, শস্ত্রও চাই। রামনবমী আসছে। খোল করতাল নিয়ে, ত্রিশূল নিয়ে বেরোন। বুঝিয়ে দিন, হিন্দু জেগেছে।” বিজেপির সাম্প্রতিক সমীকরণ মেনে দিলীপের এই মন্তব্যকে কার্যত সমর্থন করে এ দিন মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দফতরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘উনি যা বলেছেন, এক জন হিন্দু হিসেবে আমি সমর্থন করি। রামনবমীর যা রীতি-রেওয়াজ আছে, সেই অনুযায়ী মিছিল হবে।’’ যার প্রেক্ষিতে পরে দিলীপের বক্তব্য, ‘‘দিলীপ ঘোষ তো নিজের জন্য বলেনি। দলের ভালর জন্য বলেছে। আমরা তো একসঙ্গেই লড়াই করছি।’’
কলকাতা প্রেস ক্লাবে এ দিনই রামনবমী উদযাপন কমিটি রামনবমীর মিছিলে ৪৩ জায়গায় হামলার আশঙ্কা করেছে। এই বিষয়ে তৃণমূলের জয়প্রকাশের দাবি, ‘‘ইচ্ছা করে অশান্তি তৈরি চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)