Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Saraswati Puja

হাতটা ধরে কেষ্টা বলল, ‘পারব গো বাবু’

ভরা মাঘেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কাঁধে ছড়ানো গামছাটা দিয়ে মুখটা একবার মুছে নেয় অক্ষয়। তারপর হাঁক পাড়ে— ‘‘অ্যাই কেষ্টা, একটু ধর।’

—ফাইল ছবি

—ফাইল ছবি

ছন্দক বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:১৩
Share: Save:

ভরা মাঘেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কাঁধে ছড়ানো গামছাটা দিয়ে মুখটা একবার মুছে নেয় অক্ষয়। তারপর হাঁক পাড়ে— ‘‘অ্যাই কেষ্টা, একটু ধর।’ খানিক দূরে টুলে বসে সরস্বতী ঠাকুরের চোখ আঁকছিল তার কর্মচারী কেষ্টা। ‘বাবু’কে উঠতে দেখে দ্রুত হাত মুছে নেয় সে। অক্ষয়ের একটা হাত নিজের কাঁধে জড়িয়ে নিয়ে তাকে একটু একটু করে তুলে ধরে কেষ্টা। অক্ষয়কে দেখে বড় কষ্ট হয় তার। মনে মনে সে ভাবে— ‘আশি ছুঁতে চলল। এখন কোথায় পায়ের ওপর পা তুলে আরামQকরবে তা না, হাড়ভাঙা খেটেই চলেছে বুড়ো’।

বেলডাঙার মহুলায় অক্ষয় পালের প্রতিমা তৈরির কারখানার এক সময় খুব নামডাক ছিল। মূলত অক্ষয়ের হাতের নিপুণ কাজের জন্য। ‘বাবু’র মুখে কেষ্টা শুনেছে, তখন আশপাশের জেলা থেকেও লোক ঠাকুর নিতে আসত। এখন অবশ্য সে দিন গিয়েছে। অক্ষয়ের দুই ছেলের কেউ-ই পৈতৃক ব্যবসায় পা বাড়ায়নি। তার বড় ছেলে কাঁচা আনাজের ব্যবসা করে। ছোট জন বহরমপুরে সওদাগরি অফিসে গ্রুপ ডি। কেষ্টা আর অক্ষয়— দু’জনে মিলেই টিমটিম করে বাঁচিয়ে রেখেছে কারখানাটাকে।

প্রায় ১৫ বছর অক্ষয়ের কারখানায় কাজ করছে কেষ্টা। প্রথম যখন এসেছিল, একশো টাকা মজুরি পেত। সঙ্গে দুপুরের খাওয়া। টাকাটা কম হলেও অক্ষয়ের কাছে কাজ শিখবে বলে সে রাজি হয়ে গিয়েছিল। ১৫ বছরে বার তিনেক মাইনে বেড়েছে তার। এখন রোজ আড়াইশো টাকা করে পায় সে। কেষ্টা জানে, বাজারের তুলনায় টাকাটা অনেক কম। তবু সে ছেড়ে চলে যায়নি। আসলে কারখানাটার সঙ্গে কেমন যেন একটা মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছে সে। এতদিনে অক্ষয়েরও তার ওপর একটা ভরসা তৈরি হয়েছে। কেষ্টা সেটাও বোঝে। কাজের ফাঁকে দু’জনের যে কত কথা হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তবে কয়েক দিন ধরে মনটা খারাপ ‘বাবু’র। দু’দিন ধরে সে লক্ষ্য করছে, ‘বাবু’ একটু যেন চুপচাপ। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর নিরিবিলিতে সে চেপে ধরে অক্ষয়কে। ‘‘তোমার কী হইচে বলো তো’’। খানিক ক্ষণ চুপ করে থাকার পর সে মুখ খোলে। দু’দিন আগে রাতে খেতে বসে অক্ষয়ের বড় ছেলে কথাটা পেড়েছিল। বাবাকে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘‘তোমার বয়স হচ্চে। কারখানার জমিটা এ বার বিক্রি করে দাও না!’’ চুপ করে গিয়েছিল অক্ষয়। কেষ্টাকে কথাগুলো বলে এখন হালকা বোধ করছে সে। হঠাৎ কেষ্টার হাতটা চেপে ধরে অক্ষয়— ‘হ্যাঁরে, আমি মরলে কারখানাটা বাঁচিয়ে রাখতে পারবি না!’’ফ্যাল ফ্যাল করে ‘বাবু’র পানে চেয়ে থাকে কেষ্টা। তারপর এক সময় অক্ষয়ের হাত দুটোয় আলতো চাপ দেয় । অস্ফূটে তার গলা থেকে বেরিয়ে আসে— ‘‘পারব গো বাবু’’।

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Puja Potter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy