—ফাইল ছবি
ভরা মাঘেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কাঁধে ছড়ানো গামছাটা দিয়ে মুখটা একবার মুছে নেয় অক্ষয়। তারপর হাঁক পাড়ে— ‘‘অ্যাই কেষ্টা, একটু ধর।’ খানিক দূরে টুলে বসে সরস্বতী ঠাকুরের চোখ আঁকছিল তার কর্মচারী কেষ্টা। ‘বাবু’কে উঠতে দেখে দ্রুত হাত মুছে নেয় সে। অক্ষয়ের একটা হাত নিজের কাঁধে জড়িয়ে নিয়ে তাকে একটু একটু করে তুলে ধরে কেষ্টা। অক্ষয়কে দেখে বড় কষ্ট হয় তার। মনে মনে সে ভাবে— ‘আশি ছুঁতে চলল। এখন কোথায় পায়ের ওপর পা তুলে আরামQকরবে তা না, হাড়ভাঙা খেটেই চলেছে বুড়ো’।
বেলডাঙার মহুলায় অক্ষয় পালের প্রতিমা তৈরির কারখানার এক সময় খুব নামডাক ছিল। মূলত অক্ষয়ের হাতের নিপুণ কাজের জন্য। ‘বাবু’র মুখে কেষ্টা শুনেছে, তখন আশপাশের জেলা থেকেও লোক ঠাকুর নিতে আসত। এখন অবশ্য সে দিন গিয়েছে। অক্ষয়ের দুই ছেলের কেউ-ই পৈতৃক ব্যবসায় পা বাড়ায়নি। তার বড় ছেলে কাঁচা আনাজের ব্যবসা করে। ছোট জন বহরমপুরে সওদাগরি অফিসে গ্রুপ ডি। কেষ্টা আর অক্ষয়— দু’জনে মিলেই টিমটিম করে বাঁচিয়ে রেখেছে কারখানাটাকে।
প্রায় ১৫ বছর অক্ষয়ের কারখানায় কাজ করছে কেষ্টা। প্রথম যখন এসেছিল, একশো টাকা মজুরি পেত। সঙ্গে দুপুরের খাওয়া। টাকাটা কম হলেও অক্ষয়ের কাছে কাজ শিখবে বলে সে রাজি হয়ে গিয়েছিল। ১৫ বছরে বার তিনেক মাইনে বেড়েছে তার। এখন রোজ আড়াইশো টাকা করে পায় সে। কেষ্টা জানে, বাজারের তুলনায় টাকাটা অনেক কম। তবু সে ছেড়ে চলে যায়নি। আসলে কারখানাটার সঙ্গে কেমন যেন একটা মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছে সে। এতদিনে অক্ষয়েরও তার ওপর একটা ভরসা তৈরি হয়েছে। কেষ্টা সেটাও বোঝে। কাজের ফাঁকে দু’জনের যে কত কথা হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তবে কয়েক দিন ধরে মনটা খারাপ ‘বাবু’র। দু’দিন ধরে সে লক্ষ্য করছে, ‘বাবু’ একটু যেন চুপচাপ। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর নিরিবিলিতে সে চেপে ধরে অক্ষয়কে। ‘‘তোমার কী হইচে বলো তো’’। খানিক ক্ষণ চুপ করে থাকার পর সে মুখ খোলে। দু’দিন আগে রাতে খেতে বসে অক্ষয়ের বড় ছেলে কথাটা পেড়েছিল। বাবাকে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘‘তোমার বয়স হচ্চে। কারখানার জমিটা এ বার বিক্রি করে দাও না!’’ চুপ করে গিয়েছিল অক্ষয়। কেষ্টাকে কথাগুলো বলে এখন হালকা বোধ করছে সে। হঠাৎ কেষ্টার হাতটা চেপে ধরে অক্ষয়— ‘হ্যাঁরে, আমি মরলে কারখানাটা বাঁচিয়ে রাখতে পারবি না!’’ফ্যাল ফ্যাল করে ‘বাবু’র পানে চেয়ে থাকে কেষ্টা। তারপর এক সময় অক্ষয়ের হাত দুটোয় আলতো চাপ দেয় । অস্ফূটে তার গলা থেকে বেরিয়ে আসে— ‘‘পারব গো বাবু’’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy