কলকাতা পুরসভার বাজেট ছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করেই যেন উৎসবমুখর হয়ে উঠল ছোট লালবাড়ি! সঙ্গে উপহার-উপঢৌকনের ছড়াছড়ি! সাধারণ মানুষ বাড়তি পুর পরিষেবা কতটা পেলেন, তা স্পষ্ট হওয়ার আগেই কাউন্সিলরদের হাতে হাতে পৌঁছে গেল ‘গিফট ভাউচার’!
বাম জমানা থেকেই পুর-বাজেট ঘিরে ছবিটা কমবেশি এমনই থাকে। কিন্তু আগের আমল থেকে চলে আসা এই প্রথায় যারপরনাই অখুশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের ঘটনাও তিনি ভাল ভাবে নেননি।
কেন? তৃণমূল সূত্রের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন মানুষের দেওয়া করের টাকায় এ ভাবে কাউন্সিলারদের উপহার দেওয়ার রীতি একেবারেই ঠিক নয়। পুর করের টাকা মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্যই খরচ হওয়া উচিত।
সামগ্রিক ভাবে এমনিতেই রাজ্যের কোষাগারে টানাটানি চলছে। তাই অযথা ব্যয় কমানোর ওপর এ বার জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর, দিদি মনে করেন পুরসভায় এ দিন যা হয়েছে তা নৈতিক ভাবেও ঠিক নয়। কারণ এ ধরনের উপহার দেওয়ার চল বিধানসভা বা সংসদে নেই। সাধারণত পাঁচ বছরে সাংসদ-বিধায়কদের কাজের সুবিধার জন্য কিছু উপহার দেওয়া হয়। কিন্তু কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলররা উপহার পান বছরে দু’বার। এক বার বাজেট পেশের সময়, আর এক বার পুজোর সময়।
এ দিনের ব্যাপারটা নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সবিস্তার জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। মেয়র তাঁকে জানান, এ ব্যবস্থা আসলে তিনি শুরু করেননি। আগে থেকেই চলছিল। তা বন্ধ করে দিলে সাত পাঁচ কী প্রতিক্রিয়া হবে ভেবে তিনি আর এগোননি। কলকাতা পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর রূপা বাগচিও মানছেন, ‘‘বাম আমলে মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সময় থেকেই কাউন্সিলরদের পুজোর সময় ‘গিফট ভাউচার’ দেওয়ার চল ছিল। এখন সেই ‘গিফট ভাউচারে’র আর্থিক পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।’’ বিরোধী কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় জানিয়েছেন, কাউন্সিলরদের উপহার দেওয়ার ব্যাপারটা আগেও ছিল।
এ বার পুজোর সময় একটি নামী জুতো কোম্পানির ‘গিফট ভাউচার’ তাঁরা পেয়েছেন।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মতে, আগে যা হয়েছে তা হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটানোই নীতি হওয়া উচিত। মনে করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর এই মনোভাবের পর পুরসভায় উপহারের চল অবধারিত ভাবেই এ বার উঠে যাবে। মেয়রকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কিছুই বলব না। তবে মমতাদির দেখানো পথেই আমি সব সময় চলি।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু এই ঘটনা নিয়েই নয়, দলের কিছু কাউন্সিলরের অনৈতিক কাজকর্ম নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছে। দলের এমন কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার মনোভাব নিয়ে চলেছেন নেত্রী। তা ছাড়া রাজ্যের বাকি পুরসভাগুলোতেও পরিষেবার মান বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দিতে চাইছেন তিনি। তাঁর নির্দেশে কাল, শনিবার তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাগুলির কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূল ভবনে বৈঠক করার কর্মসূচি রয়েছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। তৃণমূলের অন্দরের খবর, যে সব পুরসভা এলাকায় এ বার ভোটে ফল খারাপ হয়েছে সেখানকার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে কৈফিয়ত তলব করবেন ফিরহাদ। ওই বৈঠকের পর আগামী দিনে কিছু পুরসভায় চেয়ারম্যান বদলও করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy