এই বাইক নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
একটি মোটরবাইকের সামনে লেখা, ‘মসিবুর রহমান লস্কর।’ লাল রঙের অন্য বাইকটি নম্বরপ্লেটহীন।
জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে খুন করতে সোমবার এই দু’টি বাইকে চেপেই কয়েক জন দুষ্কৃতী এসেছিল বলে অভিযোগ উঠতে শুরু থেকে। আততায়ী সন্দেহে এক জনকে ধরে ফেলে পিটিয়ে মেরেছে জনতা। গ্রেফতার হয়েছে অন্য জন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, একটি দুর্ঘটনার পরে জনতা তাড়া করলে বাইক দু’টি ফেলে রেখে পালায় বাকি দুষ্কৃতীরা। বাইক দু’টি এখন রয়েছে পুলিশের হেফাজতে। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মসিবুর রহমান লস্করের বাড়ি বামনগাছি পঞ্চায়েতের দলুয়াখাকি গ্রামে। বাঙালবুড়ি গ্রামে সইফুদ্দিন খুন হওয়ার পরে দলুয়াখাকি গ্রামে গিয়ে সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট চালায় লোকজন। আগুনও লাগানো হয়। তখনই মসিবুর-সহ গ্রামের পুরুষেরা পালিয়ে যান বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁরা অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের কার্যালয়ে। তাঁদের মধ্যে আছেন মসিবুরের স্ত্রী মাসুদা লস্করও। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই প্রয়োজনে ওই বাইকটা চালাত। কে কখন নিয়ে গিয়েছিল, বলতে পারব না।’’ মসিবুর অবশ্য পলাতক।
খুনের ঘটনায় আনিসুর রহমান নামে যে সিপিএম নেতার নামে অভিযোগ দায়ের
হয়েছে থানায়, তাঁর বাড়িতেও ঘটনার দিন ভাঙচুর চলেছে। আনিসুরও পলাতক। তিনি মসিবুরের পরিচিত বলেও স্থানীয় সূত্রের খবর। আনিসুরের স্ত্রী মঞ্জিলার দাবি, “স্বামী বাইক চালাতে পারেন না। আমার ছেলের একটি লাল বাইক আছে।” নম্বরপ্লেটবিহীন অন্য বাইকের রং-ও লাল। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে এই বাইকটি কি আনিসুরের ছেলেরই? মসিবুরের নাম লেখা বাইক কি তিনিই চালাচ্ছিলেন? তদন্তের ক্ষেত্রে বাইকের বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ খোলেননি পুলিশ কর্তারা। বারুইপুর পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, অপরাধীদের খুঁজতে প্রায় দশটি দল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গিয়েছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বলেন, “তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজ করা হচ্ছে।”
সিপিএমের দাবি, বাইকের বিষয়টি পুলিশের সাজানো। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সে দিন দলুয়াখাকিতে লুটপাট চালায় পুলিশ ও তৃণমূলের লোকজন। বাইক লুট করা হয়। সেই লুটের বাইকই দু’দিন পরে হঠাৎ কায়দা করে সামনে আনা হয়েছে।’’ যদিও খুনের দিন ঘটনাস্থলের কাছে ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজে দু’টি বাইক চালিয়ে কয়েক জনকে সইফুদ্দিনের পিছনে যেতে দেখা গিয়েছে। তবে সাদা-কালো ফুটেজে বাইকের রং জানা যায়নি। মসিবুর প্রসঙ্গে সুজন বলেন, ‘‘কোন কর্মীর কথা বলা হচ্ছে জানি না, তবে বড় করে নাম লেখা বাইক নিয়ে কেউ খুন করতে যায়?”
ধৃত শাহারুল শেখ ‘নাসির’ ও ‘বড় ভাই’ বলে যে দু’জনের নাম নিয়েছিল, তাদের বাড়ি ডায়মন্ড হারবারের টেকপাঁজায় বলে জানিয়েছিল সে। তাদের খোঁজ কত দূর এগোলো, সে ব্যাপারে মুখ খোলেনি পুলিশ। সুজন বলেন, “টেকপাঁজার যে বড় ভাইয়ের নাম সামনে আসছে, তাঁকে তো অনেকেই চেনেন। তৃণমূলের দুষ্কৃতী এরা। আমি নিজেও নাম শুনেছি। যিনি গণপিটুনিতে মারা গেলেন, তিনিও তৃণমূলের লোক। পর পর তৃণমূলের নাম সামনে আসায় পুলিশ এখন সিপিএমের দিকে তদন্ত ঘোরাতে চাইছে।” সিপিএমের বিরুদ্ধে অবশ্য অভিযোগে অনড় শাসক দল। জয়নগরের তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দার বলেন, “সিপিএম ৩৪ বছর ধরে খুনের রাজনীতি করেছে। আবার সেই কাজ করছে। বড় নেতারা এই
ঘটনায় জড়িত।”
মসিবুর বা আনিসুরকে তাঁরা চেনেন না বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। জয়নগর কেন্দ্রে গত বিধানসভায় সিপিএমের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন স্বপন নস্কর। তিনি বলেন, “ওই এলাকার কয়েক জন নেতা-কর্মীকে চিনলেও আনিসুরের সঙ্গে পরিচয় নেই।” মসিবুরের নামও তিনি শোনেননি বলে দাবি। যদিও তৃণমূলের একাংশের দাবি, আনিসুর এক সময়ে সিপিএমের এক বড় নেতার ছত্রচ্ছায়ায় একাধিক দুষ্কর্ম করেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় খুনখারাপি, তোলাবাজিতে জড়িত ছিল। সুজনের দাবি, “আনিসুরের সঙ্গে আমারও পরিচয় ছিল না। তবে উনি আমাদের কর্মী। ওঁকে তো টাকার বিনিময়ে দলে টানতে চেয়েছিল তৃণমূল।’’ এ কথা অবশ্য মানেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy