Advertisement
E-Paper

হাওড়ার জঞ্জাল শিবপুরে ফেলা নিয়ে ‘আপত্তি’ মন্ত্রী মনোজের? ববি-বৈঠকের প্রসঙ্গ টানলেন সুজয়, আবার দ্বন্দ্বের আবহ?

বুধবার আড়ুপাড়ায় ময়লাবোঝাই গাড়ি ঢুকতেই রাস্তা আটকে দেন স্থানীয়েরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বিশাল পুলিশবাহিনীও। বাধ্য হয়ে কাজই বন্ধ করে দেয় পুরসভা। তার পরেই বসে জরুরি বৈঠক।

(বাঁ দিক থেকে) মনোজ তিওয়ারি, ফিরহাদ হাকিম এবং সুজয় চক্রবর্তী।

(বাঁ দিক থেকে) মনোজ তিওয়ারি, ফিরহাদ হাকিম এবং সুজয় চক্রবর্তী। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫ ১৯:২৮
Share
Save

রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বৈঠকে স্থির হয়েছিল, হাওড়া শহরের রোজকার জঞ্জাল শিবপুরের আড়ুপাড়ায় ফেলা হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে বুধবার বাধার মুখে পড়তে হয় প্রশাসনকে। ময়লার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয়েরা, যার জেরে বিপাকে পড়ে পুরপ্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে অনেকের প্রশ্ন, মন্ত্রী মনোজের ‘আপত্তি’র কারণেই কি আড়ুপাড়ায় কেএমডিএ-র পরিত্যক্ত জমিতে বুধবার ময়লা ফেলা গেল না? এই প্রশ্নের সূত্র ধরেই জল্পনা, গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কি আবার হাওড়ার পুরপ্রশাসক সুজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে মনোজের দ্বন্দ্বের আবহ তৈরি হল?

ধস-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে আপাতত ময়লা ফেলা হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। শহরের আবর্জনা তা হলে কোথায় ফেলা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতেই মঙ্গলবার হাওড়ার পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ফিরহাদ। ওই বৈঠকেই স্থির হয়েছিল, হাওড়ার শহরের আবর্জনা আড়ুপাড়ায় ফেলা হবে। যদিও মনোজের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে দাবি, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আড়ুপাড়ায় ময়লা ফেলা নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন মনোজ। শুধু তা-ই নয়, ময়লা ফেলার জন্য বিকল্প পাঁচ জায়গার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও কেন সেই আড়ুপাড়াতেই ময়লা ফেলা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মনোজের ঘনিষ্ঠ মহল।

সুজয়ের বক্তব্য, ‘‘ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক হয়েছিল। উনিই মনোজ তিওয়ারির সঙ্গে কথা বলে আড়ুপাড়ায় অস্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’’ এ ব্যাপারে মনোজের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। তাঁর বক্তব্য পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনে তা যুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে মনোজের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে দাবি, মন্ত্রীর আপত্তির কারণ, যে জায়গায় ময়লা ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে প্রচুর মানুষ বসবাস করেন। ওখানে সম্প্রতি একটি হিন্দি কলেজও তৈরি হয়েছে। সেই কারণে ওই পরিত্যক্ত জমিকে অস্থায়ী ভাগাড় বানানোর বিরোধিতা করেছিলেন মনোজ।

বস্তুত, বুধবার আড়ুপাড়ায় ময়লাবোঝাই গাড়ি ঢুকতেই রাস্তা আটকে দেন স্থানীয়েরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বিশাল পুলিশবাহিনীও। বাধ্য হয়ে কাজই বন্ধ করে দেয় পুরসভা। তার পরেই বসে জরুরি বৈঠক। ওই বৈঠকে স্থির হয়, আপাতত হাওড়ার ময়লা কলকাতা পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হবে। বৈঠকের পর সুজয় বলেন, ‘‘বেলগাছিয়ার বদলে আগামী এক মাসের জন্য আড়ুপাড়ায় ময়লা ফেলার জন্য জায়গা ঠিক করা হয়। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ওই নির্দেশ দেন। কিন্তু স্থানীয়েরা তা চাননি। তাই আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়েছে, আপাতত কলকাতা পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ময়লা ফেলা হবে।’’

গোটা ঘটনাপরম্পরায় মনোজ-সুজয়ের দ্বন্দ্বের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। অতীতেও বিবাদে জড়িয়েছেন দু’জন। তার মধ্যে অন্যতম হল ২০২৩ সালে হাওড়ায় ক্রিসমাস কার্নিভালের ঘটনা। পার্কিং থেকে ‘তোলা’ নেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে সুজয় এবং পুরকর্মীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন মনোজ এবং তাঁর অনুগামীরা। ঘটনার পর সেই রাতেই কার্নিভাল বন্ধের ঘোষণা করে দিয়েছিলেন সুজয়। পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের কার্নিভাল চালু করার নির্দেশ দিতে হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (মন্ত্রিসভায় মনোজ যাঁর ‘ডেপুটি’)-কে হাওড়ায় ছুটে যেতে হয়েছিল মধ্যস্থতা করতে। তাঁর সামনে সুজয়কে মনোজ ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়ে।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মনোজকে শিবপুর থেকে প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে মন্ত্রীও হন তিনি। তাঁকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী করা হয়। আর ওই বছরই হাওড়ার পুর কমিশনার হন সুজয়। মনোজের অনুগামীদের একাংশের দাবি, ভোটের পর থেকেই শিবপুরে নিজের মতো করে কাজ করেন পুর কমিশনার। বিধায়ককে কিছু জানানো হয় না। কোনও প্রকল্পের উদ্বোধনে বা কোনও সরকারি অনুষ্ঠানেও ডাকা হয় না মনোজকে। সুজয় এলাকায় এসে একক ভাবে প্রকল্পের ঘোষণা করে চলে যান! এ নিয়ে মনোজের মনে ক্ষোভ রয়েছে। জেলায় দলের একাংশের দাবি, সুজয় আবার হাওড়ার মধ্যর বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’। তাঁর সঙ্গেও মনোজের ‘শীতল’ সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। বিভিন্ন বিতর্কে সুজয়ের নেপথ্যে অরূপই বড় খুঁটির কাজ করেন বলে অভিযোগ মনোজের অনুগামীদের। অরূপের ঘনিষ্ঠমহল অবশ্য ওই দাবি অস্বীকার করে এসেছে বরাবর। অরূপের এক অনুগামীর কথায়, ‘‘দাদা নিজের কেন্দ্রেই থাকেন। উনিও মন্ত্রী। প্রশাসনিক এবং দলের প্রচুর কাজকর্ম থাকে তাঁর। দাদার এ সব ভাবার সময় নেই!’’

মনোজের সঙ্গে সুজয়ের দ্বন্দ্বের সম্পর্ক নিয়ে তৃণমূল আশঙ্কিতই। কারণ, এই দ্বন্দ্ব হল, দলের মধ্যে বাঙালি-অবাঙালি ভাবাবেগের দ্বন্দ্ব। কার্নিভাল বিতর্কের পর ওই বিবাদ আর প্রকাশ্যে আসেনি বটে। কিন্তু জঞ্জাল বিতর্কে চলে আসবে না তো? আশঙ্কা তৈরি হয়েছে শাসকদলের অন্দরে।

Howrah Garbage Crisis Manoj Tiwari FirhadHakim

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}