প্রচারে নেমে রোগী দেখতে ব্যস্ত তরুণ মণ্ডল (বাঁদিকে)। ‘কেমন আছেন’, ভোটারদের কাছে কি এটাই জানতে চাইছেন আবুল হাসনাত (ডানদিকে)? ছবি: সামসুল হুদা ও দিলীপ নস্কর।
নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই জোর কদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডল ও ডায়মন্ড হারবারের বামফ্রন্ট প্রার্থী আবুল হাসনাত। রাজনীতিতে বিপরীত মেরুর হলেও পেশায় মিলে গিয়েছেন দু’জনে। দু’জনেই চিকিৎসক। আর সেই পেশাকেই নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার করেছেন তাঁরা। সকাল হলেই গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন দুই প্রার্থী।
জয়নগরে হেভিওয়েট বামফ্রন্ট প্রার্থী রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী এবং আরএসপি নেতা সুভাষ নস্করের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করেছেন প্রাক্তন পেশায় চিকিৎসক তরুণ মণ্ডল। এই কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াইতে রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী অর্ণব রায় এবং তৃণমূলের প্রতিমা মণ্ডল। অন্যদিকে, ডায়মন্ড হারবারে তরুণতুর্কি তৃণমূল যুবার সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী আবুল হাসনাত।
অন্য নেতারা যান মানুষের কাছে। আর ডাক্তার গ্রামে হাজির হলেই ভিড় জমান রোগীরা। রোগী দেখা, ভোটের প্রচার দুই-ই চলছে। ইতিমধ্যেই নিজের কেন্দ্রের গোসাবা ব্লকে এ ভাবেই প্রচার করেছেন তরণবাবু। ঘুরেছেন বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতেও। কোথাও গাছের নীচে, কারও ঠাকুরদালানের আটচালায়, কোথাও মাদ্রাসার বারান্দাতেই চলছে রোগী দেখা। আর রোগী দেখা শেষ হলে তাঁদের বুঝিয়ে চলছে নির্বাচনী প্রচার। বিলি করা হচ্ছে নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের (গ্লাস) ছাপ দেওয়া প্রচারপত্র।
পেশায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তরুণবাবু সাংসদ থাকাকালীন নিয়ম করে নিজের সাতটি বিধানসভা এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছেন। সাংসদ কোটার বর্ধিত বেতন থেকে এই সব ক্যাম্পের আয়োজন করেন তিনি। পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে ওই সব কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা করেছেন দুঃস্থদের। তাই লোকসভা ভোটের প্রচারে তাঁর হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সকলের কাছে সে কথাই তুলে ধরছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা।
এ ভাবে প্রচারে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? প্রশ্নের উত্তরে তরুণবাবু বলেন, “সুন্দরবন এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবার প্রভূত ঘাটতি রয়েছে। ২০০৯ সালে সাংসদ হওয়ার পর থেকে আমি নিজের কেন্দ্রে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধ্যমত গরিব মানুষের চিকিৎসা করি। এটা আমার কর্তব্য বলেই মনে করেছি।”
অন্যদিকে, বাম প্রার্থী হাসনাত সাহেব ২০০৬ সালে মগরাহাট (পশ্চিম) কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। তবে জনতার রায়ে বিধায়ক নির্বাচিত হলেও বিধায়কের জনপ্রিয়তা হার মেনেছিল ৫০ টাকার ডাক্তারের জনপ্রিয়তার কাছে। বছর দুয়েক আগেও এই শল্য চিকিৎসক বিপিএল তালিকাভুক্ত রোগীদের বিনামূল্যে আর এপিএলদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে চিকিৎসা করেছেন। তবে দিনে দিনে চিকিৎসার খরচ বেড়েছে। তাই এখন এপিএলদের কাছ থেকে ৫০ টাকা নেন। তবে ভোটের বাজারে এখন সবাই ফ্রি। সকাল সকাল দুই ছেলে সাবির ও সৈকতকে নিয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন হাসনাত। নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ গ্রামেই চিকিৎসার দৌলতে মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে বলে দাবি করেন বামফ্রন্ট প্রার্থী। যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই দুপুর অথবা রাতে খাবার নিমন্ত্রণ পাচ্ছেন। বড় ছেলে সাবিরও চিকিৎসক। ছোট ছেলে সৈকতও সদ্য এমবিবিএস পাশ করেছেন। প্রচারে বাবার সঙ্গে সব সময় সঙ্গী দুই ভাইয়ের কোনও একজন।
বাবার সঙ্গে কেন? উত্তরে সৈকত বলেন, “বাবা যখন বিধায়ক হয়েছিলেন, তখন কাজের চাপে অনেকে গরিব মানুষের চিকিৎসা করতে পারেননি। তাই এখন থেকে বাবার সঙ্গে থেকে এলাকা পরিচিতির কাজটা সেরে ফেলছি। সাংসদ হয়ে গেলে বাবার অনুপস্থিতিতে আমি আর দাদা গরিব মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।”
এখন দেখার নিজেদের পেশাকে হাতিয়ার করে তরুণবাবুর ও হাসনাত সাহেবদের প্রচার ভোটের বাজারে কতটা ফায়দা তুলতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy