Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

মেয়েদের ক্রিকেট দেখে মাঠে গলা ফাটালেন মায়েরা

সেখালিপাড়ার মানোয়ারা বিবি কাজে বেরোননি। আর বিলাসপুরের ময়না বিবি ভোরে উঠে সেরে ফেলেছিলেন গেরস্তালির কাজ। দু’জনকেই দেখা গেল ডোমকল ক্রিকেট মাঠে। এই রোদে-গরমে ক্রিকেট খেলা কী মুখের কথা! তাই দিলরুবা খাতুন আবার মাঠে আসার সময় বাড়ি থেকে ননদের জন্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন কচি ডাব। শুক্রবার ডোমকল ক্রিকেট মাঠে এভাবেই ভিড় করেছিলেন আশপাশের গ্রামের বহু মহিলা।

ম্যাচ জমজমাট। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।

ম্যাচ জমজমাট। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪২
Share: Save:

সেখালিপাড়ার মানোয়ারা বিবি কাজে বেরোননি। আর বিলাসপুরের ময়না বিবি ভোরে উঠে সেরে ফেলেছিলেন গেরস্তালির কাজ। দু’জনকেই দেখা গেল ডোমকল ক্রিকেট মাঠে।

এই রোদে-গরমে ক্রিকেট খেলা কী মুখের কথা! তাই দিলরুবা খাতুন আবার মাঠে আসার সময় বাড়ি থেকে ননদের জন্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন কচি ডাব।

শুক্রবার ডোমকল ক্রিকেট মাঠে এভাবেই ভিড় করেছিলেন আশপাশের গ্রামের বহু মহিলা। যাঁদের অনেকেই এদিন প্রথম মাঠে বসে ক্রিকেট খেলা দেখলেন। বাউন্ডারির বাইরে বসে মেয়ে, ননদ কিংবা বোনঝিদের হয়ে গলাও ফাটালেন।

মাস পাঁচেক আগে স্থানীয় এক যুবকের উদ্যোগে বিলাশপুরে শুরু হয়েছিল মেয়েদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ। ডোমকলের মতো এলাকায় ক্রিকেট খেলবে মেয়েরা? অবাক হওয়ার পাশাপাশি বাধাও যে আসেনি এমন নয়। তবে সেসব প্রতিবন্ধকতাকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে এগিয়ে এসেছিল বিএসএমএম হাই মাদ্রাসার জনা দশেক ছাত্রী। স্কুল ছুটির পর বিলাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়মিত চলত অনুশীলনও। ওই ছাত্রীদের আগ্রহ ও অধ্যাবসায় দেখে এগিয়ে এসেছিলেন ডোমকল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা থেকে শুরু করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, চিকিৎসক, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীরাও। তাঁরাই কিনে দেন জুতো, পোশাক ও খেলার সরঞ্জাম।

ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়। বেশ কয়েক মাস অনুশীলনের পর শুক্রবার ডোমকল একাদশের ওই ছাত্রীদের সঙ্গে বহরমপুর একাদশের প্রীতি ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে ওই ক্রীড়া সংস্থা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বহরমপুর একাদশ ১৫ ওভারে ১২৫ রান তোলে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে সব উইকেট খুইয়ে ১০৮ রান সংগ্রহ করে ডোমকল একাদশ।

মাত্র ১৭ রানে হেরে গিয়ে ডোমকল একাদশের অনেকেরই যখন চোখ ছলছল করছে তখন তাদের সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল তাদের মা, কাকিমাদেরই। দিলরুবা বলছেন, “ননদ যে কত কষ্ট করে এই খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছে সে তো আমি নিজের চোখে দেখছি। তাই ও যখন বলল, ‘চাচি, আমার প্রথম ম্যাচে তুমি কিন্তু মাঠে থাকবে’। তখন আর না করতে পারিনি। খেলা মানে হার-জিত তো থাকেই। তবে প্রথম খেলতে নেমে ওরা ভালই খেলেছে।”

মানোয়ারা বলেন, “আমি বাপু ক্রিকেটের ক-ও বুঝি না। কিন্তু মেয়ের খেলা নিয়ে কত লোক কত কথা বলেছে। আজ যখন সেই মেয়ে এত লোকের সামনে খেলতে নামছে, তখন আর না এসে পারলাম না।” তিনি বলেন, “খেলাপাগল মেয়েটাকে আমিও রেগে গিয়ে অনেক বকেছি। কতবার বলেছি যে, এসব ছেলেদের মানায়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমার কথা না শুনে ও ঠিকই করেছে।”

ডোমকল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ধীমান দাস বলেন, “বহরমপুরের ওই মেয়েরা দীর্ঘদিন ধরে খেলছে। ওদের অভিজ্ঞতাও বেশি। আমাদের মেয়েরাও ভাল লড়াই দিয়েছে। তবে প্রথম ম্যাচ বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ভুল হওয়াতেই ওরা হেরে গেল। তবে এই নিয়ে আফশোস করার কিছু নেই। এতে ওদের অভিজ্ঞতা বাড়ল।” তিনি বলেন, “ডোমকলের খেলাধূলার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। তবে এদিন ডোমকলের মাঠে যা হয়ে গেল তা কোনওদিন ভুলব না। মেয়েদের পর এবার তাদের বাড়ির মহিলারাও নজির তৈরি করলেন। মাঠের ৭৫ শতাংশ আসনই এদিন ছিল মহিলাদের দখলে। মেয়েদের খেলা দেখতে প্রত্যন্ত গ্রামের ওই মহিলারা যে এতটা পথ উজিয়ে মাঠে আসবেন, এটা আমরা ভাবতেই পারিনি।”

খেলা দেখতে এসে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহও। তিনি বলছেন, “এদিন মাঠে না এলে অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতাম। ডোমকলের মহিলাদের এই ‘স্পিরিট’ সত্যিই কুর্নিশ করার মতো।”

বহরমপুর থেকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি করে মেয়েদের নিয়ে এসেছিলেন শর্মিলা দাস ও বিদিশা দাসেরা। ক্রিকেট নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা অবশ্য ডোমকলের মহিলাদের মতো নয়। শিক্ষিকা শর্মিলাদেবীর কথায়, ‘‘ডোমকলের মায়েদের দেখে আজ একটা নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

cricket domkol sujauddin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy