Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

কাল ফল, কয়েক দিনের ছুটি কাটালেন প্রার্থীরা

ভোটযুদ্ধ শেষ। মিটে গিয়েছে পুনর্নির্বাচনও। ফল কী হবে? তা নিয়েই এখন দলের কর্মীদের সঙ্গে চুলচেরা হিসেবে ব্যস্ত নেতারা। টানা বেশ কিছু দিন ঠা-ঠা রোদে মাইলের পর মাইল হেঁটে ঘাম ঝরানো আর বক্তৃতা দিয়ে গলা ধরানোর দিনগুলো এখন অতীত। প্রার্থীরা অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে। বিশেষ করে আরামবাগ কেন্দ্রে, যেখানে প্রায় একতরফা ভোট করার অভিযোগ রয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কে জিতছেন, কে হারছেন, তা এক রকম নিশ্চিত। কাজেই সব দলের প্রার্থীরাই কার্যত ছুটির মেজাজে। কেউ ফেসবুক করছেন। কেউ রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ স্রেফ ছোট ছেলেকে নিয়ে ঘরবন্দি।

ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূল প্রার্থী (বাঁদিকে)। ডানদিকে, নিজের কাজে ব্যস্ত কংগ্রেস প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র।

ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূল প্রার্থী (বাঁদিকে)। ডানদিকে, নিজের কাজে ব্যস্ত কংগ্রেস প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০২:০৩
Share: Save:

ভোটযুদ্ধ শেষ। মিটে গিয়েছে পুনর্নির্বাচনও।

ফল কী হবে?

তা নিয়েই এখন দলের কর্মীদের সঙ্গে চুলচেরা হিসেবে ব্যস্ত নেতারা। টানা বেশ কিছু দিন ঠা-ঠা রোদে মাইলের পর মাইল হেঁটে ঘাম ঝরানো আর বক্তৃতা দিয়ে গলা ধরানোর দিনগুলো এখন অতীত। প্রার্থীরা অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে।

বিশেষ করে আরামবাগ কেন্দ্রে, যেখানে প্রায় একতরফা ভোট করার অভিযোগ রয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কে জিতছেন, কে হারছেন, তা এক রকম নিশ্চিত। কাজেই সব দলের প্রার্থীরাই কার্যত ছুটির মেজাজে। কেউ ফেসবুক করছেন। কেউ রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ স্রেফ ছোট ছেলেকে নিয়ে ঘরবন্দি।

আরামবাগের সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক আপাতত খোসমেজাজে। ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই সকালে প্রচারের জন্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটোছুটি আর নেই। নেই ঘড়ি ধরে সভায় যাওয়ার ব্যস্ততা। তখন কোনও দিন একটু দেরি হলেই প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় কর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকতেন। রোজ ঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হত। আর এই তাড়াহুড়োর কারণে ভোটের প্রচারের দিনগুলোতে খাওয়া-দাওয়ারও নির্দিষ্ট সময় ছিল না। সারা দিন আউড়ে যেতে হত কেবল বামেদের ভোট দিলে প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ তালিকা। আর জনগণকে প্রতিটি সভায়, প্রচারে নিয়ম করে বোঝাতে হত রাজ্যের শাসকদলের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার দীর্ঘ ফিরিস্তি। কী ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা প্রতিটা দিন ভেঙে পড়ছে তার হালহকিকত।

সবই এখন অতীত। আপাতত সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়-পরিজন-কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা আর বিশ্রাম নেওয়ার পালা। প্রচারের ব্যাস্ততা না থাকলেও অবশ্য ভোরে ওঠার অভ্যাসটা রয়ে গিয়েছে। ভোটের আগে ঘুম থেকে উঠেই স্নান আর খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়তেন শক্তিমোহন। বাড়ি ফিরতেন একেবারে সেই রাতে। এখন সকালে বাড়িতে জলখাবার খেয়ে নিয়ম করে চলে যাচ্ছেন জোনাল অফিসে। কোনও গণ্ডগোলের খবর পেলে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে। দুপুরে বাড়ি ফিরে স্নান-খাওয়াদাওয়া করে ফের জোনাল অফিস। সেখান থেকে রাত ৯টার মধ্যে বাড়ি ফিরে টিভিতে খবর দেখা। রাতের খাওয়া সেরে ১১টার মধ্যে ঘুম।

পাটি অফিসে আড্ডায় সিপিএম প্রার্থী (বাঁদিকে)।
ডানদিকে, ফেসবুকে মগ্ন বিজেপি প্রার্থী।—নিজস্ব চিত্র।

ভোটের ময়দানে যতই লড়াই থাক, সিপিএমের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থীর কিন্তু বেজায় মিল পুরোনো রুটিনে ফিরে আসায়। মাঝে প্রচারের কাজে কিছু দিন ছন্দপতন হলেও ভোট শেষ হতেই বিজেপি প্রার্থী মধুসূদন বাগও ফিরেছেন নিজের ছন্দে। ভোটের আগে তিনি ভোরে স্নান সেরে মুড়ি, দই ও মিষ্টি খেয়ে বেড়িয়ে পড়তেন প্রচারে। দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খেয়েই ফের আবার প্রচারে। মাঝে-মধ্যে একেবারে রাতেই বাড়ি ফিরতেন প্রচারে রুটিন মেনে। আর এখন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে ভাত খেয়ে সোজা পার্টি অফিসে যাওয়া বা কর্মীদের সঙ্গে দেখা করা। দুপুর ১২টার মধ্যে বাড়ি ফিরে ফেসবুকে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে হাল্কা কিছু খেয়ে বিশ্রাম নেওয়া। আবার বিকেলে বেরিয়ে পরিচিত কিছু দোকানে আড্ডা। রাত ১০টার বাড়ি ফিরে ভাত খেয়ে, ফোনে নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়া। আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দার প্রচারের দিনগুলিতে ভীষণ ব্যস্ত থাকায় ছেলেকে একেবারেই সময় দিতে পারেননি। সকালে উঠে বেড়িয়ে পড়তেন আর যখন রাতে বাড়ি ফিরতেন চার বছরের শিশুপুত্র তখন ঘুমে। ছেলেকে একেবারে সময় দিতে না পারায় মনে-মনে একটা খারাপ লাগা ছিলই। তাই ভোট মিটতেই তিনি ছেলের সঙ্গে যতটা পারছেন সময় কাটাচ্ছেন।

চেনা ছন্দে পিরেছে কংগ্রেস প্রার্থী শম্ভুনাথ মালিকের দৈনন্দিন জীবনও। ভোটের আগে সকালে ঘুম থেকে উঠে হাল্কা কিছু খেয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়তেন। দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খেয়ে, কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার প্রচারে বেরিয়ে পড়া। রাতে বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুম। এখন তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান-খাওয়া সেরে ফোনে কর্মীদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। তার পেরে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে রবীন্দ্রনাথের গল্প বা কবিতার বই নিয়ে বসে পড়া। দুপুরে খাওয়া সেরে আবার বই। বিকেলে মাঝে-মধ্যে কর্মীদের বাড়ি যাওয়া। রাত ৯টায় বাড়ি ফিরে টিভিতে খবর দেখে খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়া।

ভোটের প্রচারে ভরা ব্যস্ততার পর এখন দীর্ঘ অবসর। একটাই কাজ, ভোট কাটাকাটির জটিল পাটিগণিতে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, তার উত্তর খোঁজা।

সেই কাজও ফুরোবে কাল। ছুটিও ফুরোবে।

অন্য বিষয়গুলি:

arambag relaxation of candidates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy