রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল মনোজ মালবীয়। ফাইল চিত্র।
বাগুইআটির দুই কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার তদন্তে পুলিশি গাফিলতি এতটাই স্পষ্ট যে, তার অভিঘাত সামাল দিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি বৃহস্পতিবার তড়িঘড়ি ‘সমন্বয় বৈঠক’ ডেকেছিলেন। রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তা সেই বৈঠকে তাঁর অধস্তনদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, অপরাধের ঘটনা ঘটলে দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশকে সময়োচিত তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কাজ করতে হবে সংবেদনশীলতার সঙ্গে।
এতে আমজনতার ক্ষোভে উপশমের প্রলেপ পড়ার লক্ষণ তো নেই-ই, উপরন্তু জনান্তিকে মুখ টিপে হাসছেন পুলিশেরই একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে এত দিন পুলিশ কী করছিল? তৎপরতার সঙ্গে দুষ্কৃতীদের ধরাই তো তাদের কাজ!
বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) মনোজ মালবীয় জানিয়েছেন, বড় অপরাধ হলে সংবাদমাধ্যম সক্রিয় হবেই। কিন্তু পুলিশকে সংবেদনশীল হয়ে পেশাদারি পদ্ধতিতে সেই অপরাধের তদন্ত করতে হবে। জনগণ অসন্তষ্ট হয়, এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দিয়েছিন তিনি।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এত দিন কি রাজ্যের পুলিশ তা হলে সংবেদনশীল ছিল না? নাকি তাদের কাজকর্মে পেশাদারির অভাব ছিল?
পুলিশি সূত্রের খবর, কোনও অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহ উদ্ধারের পরে তা শনাক্ত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। তাতেও প্রশ্ন উঠছে, বাগুইআটির দুই কিশোরের দেহ উদ্ধারের পরে সেগুলি প্রায় দু’সপ্তাহ অপরিচয়ের অবহেলা নিয়ে মর্গে পড়ে থাকার পরেই কি তা হলে পুলিশের টনক নড়ল? পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং পুলিশকর্মীদের একাংশের গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই এ দিনের এই বৈঠক। সমন্বয় বাড়াতে সব জেলার পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি, আইজি-এডিজিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মনোজ। ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেটের সিপি-রাও যোগ দেন। সেখানেই পুলিশের মনোভাব নিয়ে কড়া অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন ডিজি।
নবান্ন সূত্রের খবর, বাগুইআটির মতো ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর কোনও ভাবেই না-ঘটে, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। জেলার এসপি, ডিআইজি-দের আবার বলা হয়েছে, থানাগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই এসপি, ডিআইজি-দের থানা পরিদর্শন করতেও বলেছেন ডিজি।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, কেউ নিখোঁজ থাকলে মামলা রুজু করে তদন্তে নামা নির্দেশ দিয়েছেন মনোজ। পুলিশি সূত্রের খবর, সামনেই উৎসবের মরসুম। পরিস্থিতি যাতে শান্তিপূর্ণ থাকে, তার জন্য বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় স্তরে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহের উপরেও জোর দিয়েছেন বাহিনীর সর্বময় কর্তা।
এত দিন পুলিশ কি তা হলে এই সব অবশ্যকর্তব্য পালন করছিল না? বৈঠকের পরেও থেকে গিয়েছে প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy