Advertisement
E-Paper

৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হওয়ার পর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বৈঠকে দেব, শিলান্যাস কবে?

বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। তার চার দিন পর নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বৈঠক করলেন দেব।

—ফাইল ছবি।

—ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:০০
Share
Save

বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। তার চার দিন পর নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বৈঠক করলেন দেব। বৈঠকের পর জানিয়েও দিলেন শিলান্যাস কবে হতে পারে।

গত বুধবার বাজেট ঘোষণার দিনই ঘাটালে মাস্টার প্ল্যানের সাব কমিটির বৈঠক ছিল। রবিবার ঘাটালের টাউন হলে বৈঠক করল ‘মনিটরিং কমিটি’। তাতেই যোগ দেন সাংসদ দেব। ছিলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও। বৈঠকের পর দেব বলেন, ‘‘আজ ঘাটালের মানুষ বুঝতে পারছেন, আমি ২০২৪-এ কেন ভোটে দাঁড়ালাম। একটাই শর্ত ছিল, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করা। দিদি আমাকে কথা দিয়েছিলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান করে দেবেন। এক বছরও হয়নি, মাস্টার প্ল্যানের এক-তৃতীয়াংশ দিয়েছেন। টেন্ডারের কাজ শুরু হচ্ছে।’’

সাংসদের সংযোজন, ‘‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ১৫০০-২০০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট। এটা একা রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু উনি কথা দিয়েছিলেন এবং কথা রেখেছেন। আপনারা তিন দিন আগে জেনেছেন। আমি আগেই জেনে গিয়েছিলাম। দিদির সঙ্গে যখনই দেখা হয়, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়েই কথা হয়।’’

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের নজরদারির জন্য মাস দেড়েক আগেই ‘মনিটরিং কমিটি’ গঠিত হয়েছে ঘাটালে। ইতিমধ্যে ‘পারচেজ কমিটি’ গঠন এবং তার বৈঠকও সেরে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে জমি কেনা নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের লিখিত সম্মতি নেওয়ার পরেই জমি কিনবে প্রশাসন। কিন্তু প্রকল্পের শিলান্যাস কবে হবে, তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে ঘাটালে। দেব বলেন, ‘‘দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-র সঙ্গে কথা বলার পরেই শিলান্যাসের দিনক্ষণ ঠিক হবে।’’

গত লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে ‘নারাজ’ ছিলেন দেব। নিজেই প্রকাশ্যে সে কথা বলেছিলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে অসন্তুষ্ট হয়েই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা এবং দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই তিনি মত বদলান। তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতা-অভিষেকের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় শুধু গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা নয়, কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত না-হওয়া নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই সময়েই তাঁকে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পরে ভোটের প্রচারেও মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেব আর জুন জিতলে মেদিনীপুরকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান উপহার দেব।’’ এ-ও বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্র টাকা না-দিলে টাকা দেবে রাজ্য। দিদি ভাইকে তো ফেরাতে পারে না।’’

তা-ই হল। ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের’ জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতার ঘোষণার পরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্ততি শুরু হয়ে গিয়েছিল। গত বছর থেকেই চলছিল প্রকল্পের চূড়ান্ত ডিপিআর (ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরির কাজ। তার পাশাপাশি, প্রকল্প রূপায়ণে কোথায় কত জমি প্রয়োজন, কতটা সরকারি জমি রয়েছে তার পরিদর্শন শুরু হয়েছিল। জমির মাপজোকের কাজও সারা।

২০১৪ এবং ২০১৯ সালের মতো গত লোকসভা ভোটেও ঘাটালে শাসকদল তৃণমূলের তুরুপের তাস ছিল ‘মাস্টার প্ল্যান।’ সেই ১৯৫৯ সালে মান সিংহ কমিটির রিপোর্টে প্রথম ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা বলা হয়। এই প্রকল্পে সম্মতি দিতে যোজনা কমিশনের ২০ বছর লাগে। তার পর প্রকল্পের সলতে পাকিয়েছিল বামেরা। বাম আমলে টাকা বরাদ্দের পর ঘটা করে প্রকল্পের উদ্বোধনও হয়েছিল। তবে মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে টাকা বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টালবাহানায় আটকে ছিল গোটা প্রকল্প। এই প্রকল্প নিয়ে এত টানাহ্যাঁচড়া দেখে হতবাক ঘাটালবাসী।

ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, ওই প্রকল্প রাজ্য সরকার একাই কার্যকর করবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই লোকসভা ভোটের প্রচারের কেন্দ্রে থেকেছে এই মাস্টার প্ল্যান। শাসকদল বিভিন্ন সভা, রোড-শোয়ে মাস্টার প্ল্যানকে প্রচারে টেনে এনেছিল। পিছিয়ে ছিল না বিজেপিও। মাস্টার প্ল্যানের সুফল পেতে তেড়েফুঁড়ে নেমেছিল তারাও। ভোটে জিতলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টাকাতেই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হবে, এই বলে প্রচার করেছিল বিজেপিও। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। দেবেই ভরসা রেখেছিলেন ঘাটালবাসী।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে দাসপুরে চন্দ্রেশ্বর খালের ছয় কিলোমিটার নতুন করে খনন করে শিলাবতীর সঙ্গে সংযোগ করা হবে। তার পাশাপাশি ঘাটাল শহরে শিলাবতী নদীর পশ্চিম পারে নদীর ভিতর থেকে উঁচু পাঁচিল তৈরি হবে। এর সঙ্গেই ঘাটাল শহরে দু’টি পাম্প হাউস তৈরি হবে। দাসপুর-২ ব্লকে চারটি এবং ঘাটাল শহরে একটি স্লুইস গেট তৈরি হবে। এ ছাড়াও মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প এলাকায় একাধিক নদী ও খাল সংস্কারও হবে। একই সঙ্গে চলবে এই সব কাজ।

Ghatal Master Plan Dev Mamata Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}