Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dev

ঘাটালে হাসপাতাল-সহ তিন সরকারি কমিটির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সাংসদ দেব, ভোটে না লড়ার প্রস্তুতি কি?

দলীয় বৈঠকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেবকেই প্রার্থী করতে চান তিনি। নেত্রীর নির্দেশ থাকলে তিনিও যে ভোটে লড়তে প্রস্তুত, দেবও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব।

ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা ও ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৬
Share: Save:

দলীয় বৈঠকে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এ বারের লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেব (দীপক অধিকারী)-কেই প্রার্থী করতে চান তিনি। দলনেত্রীর নির্দেশ থাকলে তিনিও যে ভোটে লড়তে প্রস্তুত, অভিনেতা-সাংসদও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তার মাসখানেকের মধ্যেই, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব। শুধু তা-ই নয়, ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। এতেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, তিনটি সরকারি কমিটি থেকে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে কি ভোটে না লড়তে চাওয়ারই বার্তা দিলেন সাংসদ? এ ব্যাপারে দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তা কোনও ভাবেই সম্ভব হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-জানা কথা’য় ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেব বলেছিলেন, ‘‘যদি সম্ভব হয়, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে আর দাঁড়াতে চাই না।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দলের একাংশের বক্তব্য ছিল, ঘাটালের প্রাক্তন বি‌ধায়ক শঙ্কর দলুইয়ের সঙ্গে ‘বিবাদ’-এর জেরেই রাজনীতি নিয়ে ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে পড়েছিলেন দেব। যদিও সাংসদ সে কথা কখনওই নিজের মুখে স্বীকার করেননি। দলেরও কেউ এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।

আসন্ন লোকসভা ভোটে দেব প্রার্থী হবেন কি না, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় জল্পনার অবসান হয় গত জানুয়ারি মাসে কালীঘাটে দলনেত্রীর সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বৈঠকে। ওই বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেব আমাদের দলের সম্পদ। বেশ কিছু নেতা তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যার ফলে ওর অসুবিধা হচ্ছে। এমনটা কেন হবে? ও শিল্পী মানুষ। এটা তোমরা কী করছো?’’ মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই দেব-বিরোধী নেতারাই বৈঠকে খানিকটা চাপে পড়েছিলেন। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা নেতৃত্বের প্রতি মমতার এমন রুষ্ট হওয়ার ঘটনাতেই লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছেন উপস্থিত নেতারা।

মমতার কথায় দলীয় নেতারা বুঝেছিলেন, ঘাটালে দেবকেই আবার প্রার্থী করতে চাইছেন দলনেত্রী। আর দলনেত্রীর নির্দেশ থাকলে তাঁর যে ফের লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অসুবিধা নেই, পাল্টা সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দেবও। কিন্তু তার পরেও আচমকা কেন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইস্তফাপত্রেও কোনও কারণের উল্লেখ করেননি দেব। তাতেই জল্পনা আরও বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঘাটালে বাংলা সিনেমার সুপারস্টার দেবকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন মমতা। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্টের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে পরাজিত করে সাংসদ হন তিনি। ২০১৯ সালে প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে হারিয়ে দ্বিতীয় বার জয়ী হন দেব। কিন্তু ঘাটাল থেকে মাঝেমধ্যেই দেবের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের বিবাদের খবর প্রকাশ্যে আসে। তাই এ বার লোকসভা ভোটের অনেক আগেই ফের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মমতা বৈঠকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যে ভাবে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন, তাতে ঘাটাল লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী ফের হিসাবে তাঁকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ঘাটাল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে দেবের এ ভাবে ইস্তফায় আবারও তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

অন্য দিকে, ২০১৯ সালে দেবের সঙ্গেই আরও দুই অভিনেত্রী তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। যাদবপুরে মিমি চক্রবর্তী ও বসিরহাট থেকে সাংসদ হয়েছেন নুসরত জাহান। তাঁরা কি ফের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন? দেবের বিষয়টি নিয়ে জল্পনা বাড়তেই প্রশ্ন উঠছে তাঁদের নিয়েও।

তিনটি সরকারি কমিটি থেকে দেবের ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল। কারণ এতগুলো পদ নিয়ে বসে আছেন। চালাতে পারছেন না। এটা একটা কারণ হতে পারে। অন্য একটি কারণ, দীর্ঘদিন পর হয়তো বুঝতে পেরেছেন, তৃণমূল মানে চোর, আর চোর মানেই তৃণমূল। সে জায়গায় নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইছেন। এটা হয়তো হতে পারে, লোকসভা নির্বাচনে হয়তো আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বর্তমানে তিনি তৃণমূলকে হয়তো ঘৃণা করতে শুরু করেছেন। এক কথায় বলা যায়, তিনি এক জন অপদার্থ, দায়িত্ব নিয়ে সামলাতে পারছেন না। শেষ সময় বুঝতে পারছেন, বিজেপি আসছে, কৈফিয়ত দিতে হবে। বিজেপির ভয়ে আজ পদত্যাগ করছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dev TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy