গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক জঙ্গি ধরা পড়েছে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে। মাস চারেক আগেও অসম পুলিশের হাতে ওই জেলা থেকেই ধরা পড়েছে জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লা বাংলা টিমের পাঁচ সদস্য। তার পরেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, মুর্শিদাবাদের একটি অংশের নাগরিকদের প্রভাবিত করে জঙ্গিরা স্লিপার সেল তৈরি করেছে সেখানে।
এ বার মুর্শিদাবাদে শমসেরগঞ্জের একাধিক জায়গায় ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল গত ১১ এপ্রিল থেকে, তার পিছনে ওই জঙ্গি যোগের সম্ভাবনা খারিজ করে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, যেভাবে ওই কয়েক দিন কিশোর এবং যুবকদের হাতে লাঠি অস্ত্র নিয়ে মারমুখী মেজাজে দেখা গিয়েছে, তাতে কেউ যে তাদের ওই কাজে ব্যবহার করছে সেটা পরিষ্কার। আর তা থেকেই গোয়েন্দারা মনে করছেন, পিছন থেকে কলকাঠি নেড়ে থাকতে পারে জঙ্গি সংগঠন গুলি। এক গোয়েন্দা কর্তা জানান, কয়েক বছর আগে বিহারের বুদ্ধগয়াতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ধুলিয়ান থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি-র কয়েক জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই সম্ভাবনা কতটা রয়েছে তা যেমন খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তেমন ভাবে একটি রাজনৈতিক সংগঠন এবং বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকাও তাঁদের নজরে রয়েছে। ওই রাজনৈতিক সংগঠনটির সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। রাজনৈতিক সংগঠনটি রাজ্যের বিভিন্ন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করেছে মূলত ধর্মীয় উগ্র মনোভাব দেখিয়ে। আর তাদের সেই কাজে সাহায্য করেছে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
গোয়েন্দাদের দাবি, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলিই বিভিন্ন ধর্মীয় জলসার আয়োজন করেছিল মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায়। সেখান থেকেই ভাষণ দিয়ে মানুষকে উস্কানি দেওয়া হত। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলির নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে গোয়েন্দাদের তরফে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাদের ভূমিকা।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করেছেন ওই বিষয়ে। আসরে নেমেছেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। শমসেরগঞ্জের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনায় দায়ের হওয়া ৬০টি মামলার তদন্ত রাজ্য পুলিশের সিট করছে। এখনও পর্যন্ত ২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)