Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sudip Jain

বঙ্গে ভোট এপ্রিলে? ন্যূনতম ভুল হলেই শাস্তি, বার্তা জৈনের

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলে দু’-এক সপ্তাহের মধ্যে ‘অসমাপ্ত’ সব কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন সুদীপ জৈন।

পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন।  —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৩
Share: Save:

ফুল বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গে আসার আগেই নির্বাচন কমিশনের ‘কড়া’ মনোভাবের আঁচ পেলেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। বুধবার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, কমিশনারেটগুলির পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের সিইও বা মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বস্তরের অফিসারদের রীতিমতো ‘সতর্ক’ করে দিয়েছেন কমিশন-কর্তা। ন্যূনতম গাফিলতিতেও রেহাই মিলবে না, স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

আধিকারিক মহল জানাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা ভোট পরিচালনায় যুক্ত কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ থাকলে কমিশন আগে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলত। ন্যায্য উত্তর না-পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করত কমিশন। প্রত্যেকের উপরে নজর এ বার এতটাই তীক্ষ্ণ যে, গাফিলতি হলে কমিশন সরাসরিই সংশ্লিষ্ট অফিসারকে শাস্তি দিতে পারে বলে এ দিন ঠারেঠোরে সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন কমিশন-কর্তা।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলে দু’-এক সপ্তাহের মধ্যে ‘অসমাপ্ত’ সব কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন জৈন। জেলা প্রশাসনগুলি মনে করছে, উল্লিখিত সময়ের মধ্যেই রাজ্যে চলে আসতে পারে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, সাধারণত ফুল বেঞ্চ রাজ্যে ঘুরে যাওয়ার পরে ভোট ঘোষণায় খুব বেশি দেরি হয় না। কমিশন এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যে বিধানসভা ভোট পর্ব শেষ করতে চাইছে বলে ওই মহলের ধারণা।

আরও পড়ুন: ‘বিজয়’ যজ্ঞে ২২০ আসন প্রার্থনা করলেন বীরভূমের কেষ্ট

আরও পড়ুন: বামেদের সঙ্গে আসন রফা চূড়ান্ত করতে বাংলায় আসছেন এআইসিসি নেতারা

সূত্রের খবর, জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন জৈন। নির্দেশ দেন, দু’-এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই সব পরোয়ানা রূপায়ণ করতে হবে। বাতিলযোগ্য নাম ভোটার তালিকা থেকে দ্রুত বাদ দেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে। অতি স্পর্শকাতর, স্পর্শকাতর বুথের তালিকার তুল্যমূল্য যাচাই করেছেন জৈন। ২০১৬ এবং ২০১৯ সালের ভোটে হিংসার তথ্য তুলে ধরে হিংসায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন। পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনারদের উদ্দেশে জৈনের বার্তা, এ বারের ভোটে হিংসা নিয়ন্ত্রণের কাজে গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। হিংসা রুখে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে দরকারে কমিশন কড়া পদক্ষেপ করবে। প্রতি সপ্তাহে অপরাধ এবং আইনশৃঙ্খলার তথ্য তৈরির উপরে জোর দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনের দিক থেকে স্পর্শকাতর এলাকাগুলিকেও চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। ‘‘উৎসবের মতো করেই ভোট করাতে চাইছে কমিশন। উপ-নির্বাচন কমিশনার বুঝিয়ে দিয়েছেন, কমিশন এ ব্যাপারে ন্যূনতম ত্রুটিও সহ্য করবে না। পুলিশ-প্রশাসনের উপরে যথেষ্ট চাপ বেড়েছে,’’ বলেন এক অফিসার।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভোটে রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে পারে বলে কমিশনের তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কোভিড আবহে কমিশনের সিদ্ধান্ত, এ বার ভোটকেন্দ্রে সর্বাধিক ১০৫০ জন ভোটার থাকবেন। রাজ্যে ভোটকেন্দ্র ৭৮ হাজারের কিছু বেশি। প্রশাসনিক সূত্রের ধারণা, নতুন বিধিতে কমবেশি ২৮ হাজার বুথ বাড়বে। সেই অনুযায়ী বাড়বে ভোটকর্মী, নিরাপত্তাকর্মীও । আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কমিশনের কড়া মনোভাবও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে অনুঘটকের কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

ভোট-অফিসারেরা জানান, নতুন ও অতিরিক্ত ভোটকেন্দ্র বাছাইয়ে বাড়তি দায়িত্ব জেলাশাসকদের দিয়েছেন জৈন। করোনা-কালে ভোটারেরা যাতে শারীরিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে পারেন, ভোটকেন্দ্র নির্বাচনে তার পরিসরের উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সশরীরে গিয়ে দেখেশুনে স্থান নির্বাচন করতে হবে জেলাশাসকদের। ভোটের কাজে যুক্ত কোনও কর্মী-অফিসারদের গাফিলতি থাকলে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ করার নির্দেশও দিয়েছেন জৈন।

রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত অভিযোগ করেন, খসড়া ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা এবং মেদিনীপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুর, এন্টালি, রাজারহাট-নিউ টাউন এবং রাজারহাট-গোপালপুর কেন্দ্রে ভোটার বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। জৈনকে চিঠি দিয়ে ভোটার অডিটের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘১৪ ডিসেম্বর আমরা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে মৃত এবং বাড়ি বদলানো ভোটারদের নাম কাটার ক্ষেত্রে সমস্যা করছেন স্থানীয় আধিকারিকেরা। নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, এ-রকম পরিস্থিতি হলে নতুন ভোটারের অডিট করা হবে। সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত করার আর্জি জানিয়ে আমরা জৈনকে চিঠি দিয়েছি। যাঁরা নাগরিক নন, তাঁদের ভোটদান ঠেকাতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘এ-সব হচ্ছে অজ্ঞদের বিজ্ঞতা। বিজেপি নেতাদের জানা উচিত, ভোটার তালিকা রাজ্য সরকার বা তৃণমূল তৈরি করে না। তৈরি করে নির্বাচন কমিশন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy