Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal News

বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে তীব্র বিস্ফোরণ, নৈহাটি-চুঁচুড়া জুড়ে আতঙ্ক-উত্তেজনা

বিস্ফোরণের আওয়াজ এতটাই বেশি ছিল যে চুঁচুড়া পুরসভার গঙ্গার ধারে থাকা ১২,১৩, ২০ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়।

এ ভাবেই তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। —নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:২৯
Share: Save:

বেআইনি বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটল উত্তর চব্বিশ পরগনার নৈহাটিতে। কাঁপল হুগলির চুঁচুড়া পর্যন্ত। বিস্ফোরণের তীব্রতা ছিল এতই যে বাড়িতে ফাটল ধরে, জানলার কাচ ভেঙে আতঙ্ক ছড়াল গঙ্গার দু’ধারেই। কিন্তু বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উঠে এসেছে অন্য তত্ত্ব। বাজির মশলা নয়, মারাত্মক কিছু ছিল— দাবি করেছেন মুকুল রায়। এনআইএ তদন্তের দাবিও তুলতে শুরু করেছে বিজেপি।

কয়েক দিন আগে নৈহাটির দেবকে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৫ জন। এর পরই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট ওই এলাকায় বেআইনি বাজি কারখানাগুলিতে অভিযান চালানো শুরু করে। বাজেয়াপ্ত হয় কয়েক টন মালমশলা। সে সব নিষ্ক্রিয় করতে গিয়েই বিস্ফোরণ বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই গঙ্গার পূর্ব পাড়ে অর্থাৎ নৈহাটি এলাকায় পুলিশ বাজি এবং বাজির মালমশলা নিষ্ক্রিয় করতে বিস্ফোরক এক জায়গায় জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছিল। ফলে বিস্ফোরণ হচ্ছিল। যার আওয়াজ পৌঁছচ্ছিল ওপারে চুঁচুড়াতেও। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই বিস্ফোরণের আওয়াজ এতটাই বেশি ছিল যে, চুঁচুড়া পুরসভার গঙ্গার ধারে থাকা ১২, ১৩, ২০ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। বাণীব্রত সামন্ত নামে চুঁচুড়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরেই আওয়াজ হচ্ছিল। কিন্তু আজকেরটা আগের সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এত জোরে আওয়াজ হয় যে, গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। আমার বাড়ির জানলার বেশির ভাগ কাচ ওই বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে।”

এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ জানান অনেক পুরনো বাড়িতে ফাটলও দেখা দিয়েছে। চাল উড়ে গিয়েছে কয়েকটি কাঁচা বাড়ির। সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় নামে আরও এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ইমামবাড়া হাসপাতালের জানলার কাচ পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে থাকা রোগীদের মধ্যে অনেকেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই আওয়াজে।” গোটা ঘটনায় এতটাই আতঙ্ক ছড়ায় যে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির নিজে ঘটনাস্থলে যান। পৌঁছয় দমকলও। কারণ বেশ কয়েকটি পুরনো বাড়ির অংশ ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সপ্তর্ষিবাবু-সহ ওই এলাকার বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, এটা বাজি নিষ্ক্রিয় করার কী ধরনের পদ্ধতি, যাতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়? কারণ তাঁদের অভিযোগ, বহু মানুষ ওই আওয়াজে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গোটাটাই পুলিশ-প্রশাসনের গাফিলতি এবং বেপরোয়া মনোভাব বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা।

নৈহাটিতেও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। পুলিশ যে প্রক্রিয়ায় বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করছে, তা অবৈজ্ঞানিক বলে এলাকার অনেকেরই দাবি। ফলে ক্ষোভ ছিলই। এ দিন মবড়সড় বিস্ফোরণ ঘটায় ক্ষোভও তুঙ্গে ওঠে। স্থানীয় জনতার একাংশ পুলিশের দু’টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে জানা গিয়েছে।

গোটা বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। তবে, এক পুলিশ কর্তা স্বীকার করেন যে বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াডের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য ছাড়াই ফাটানো হয়েছে ওই বাজেয়াপ্ত বাজি।

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির এ দিন বলেন, ‘‘এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য আমরা কমিশনারেটের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখছি পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।”

পুলিশ যা-ই বলুক, বিতর্ক কিন্তু ক্রমশ বাড়ছে নৈহাটি বিস্ফোরণ নিয়ে। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় দাবি করেছেন, এটা কোনও সাধারণ বাজির মশলার বিস্ফোরণ নয়, আরও মারাত্মক কিছু ছিল। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘জনগণ বোকা নয়। যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা যে বাজি নয়, তা যে বোমা ছিল, যা নিষ্ক্রিয় করা আপনার পুলিশের পক্ষেও কঠিন হয়েছে, তা সবাই বুঝতে পারছেন।’’

মুকুলের এই টুইটের আগেই অবশ্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। পরে যান হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁরাও দাবি করেছেন, সাধারণ বাজির মশলায় এই বিস্ফোরণ ঘটেনি। এনআইএ তদন্তের দাবি তুলেছেন অর্জুন ও লকেট।

প্রায় একই প্রতিক্রিয়া এসেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসের তরফ থেকেও। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘গোটা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি এখন বোমা তৈরির কারখানা হয়ে উঠেছে। ধরা পড়লেই মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ওটা বাজি ছিল, ওটা তো আতসবাজির কারখানা ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয়েই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, ‘‘গ্রামে গ্রামে বোমা তৈরি হচ্ছে। বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ— সব জায়গায় বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করাকে তৃণমূল কুটিরশিল্পে পরিণত করেছে। সুতরাং নৈহাটির ঘটনা নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Naihati Chinsurah Cracker Blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE