Advertisement
E-Paper

‘পেশাদার বিপ্লবী ও সম্পদ’, ভারসাম্যের সঙ্কটে সিপিএম

সিপিএম বা কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, সর্বক্ষণের কর্মী না হলে দলের বা তার কোনও গণসংগঠনের নেতা হওয়া যায় না। লেনিনীয় দর্শনে যাঁদের বলা হয়েছে ‘পেশাদার বিপ্লবী’।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন চত্বর। ডানকুনিতে।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন চত্বর। ডানকুনিতে। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৪
Share
Save

‘লুটে খাওয়াদের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়া’ মানুষের লড়াইয়ের বার্তা উঠে আসছে। আবার নেতৃত্ব স্তরে আসার জন্য সর্বক্ষণের কর্মীর পুরনো শর্ত বহাল আছে। জট কাটাতে দলের কর্মী ও নেতৃত্ব সংক্রান্ত নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবনার দাবি উঠছে সিপিএমে।

সিপিএম বা কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, সর্বক্ষণের কর্মী না হলে দলের বা তার কোনও গণসংগঠনের নেতা হওয়া যায় না। লেনিনীয় দর্শনে যাঁদের বলা হয়েছে ‘পেশাদার বিপ্লবী’। বাম সরকার থাকাকালীন মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব সামলালেও অসীম দাশগুপ্ত, পার্থ দে’রা অগ্রণী নেতা হতে পারেননি, তাঁরা ‘পেশাদার বিপ্লবী’ হননি বলে। বর্তমান সময়ে সিপিএম যখন সর্বস্তরে নেতৃত্ব ও কর্মী সঙ্কটে ভুগছে, পুরনো নীতিকে যুগের প্রয়োজনে পুনর্বিবেচনার কথাও আসছে। দলের ২৭তম রাজ্য সম্মেলনেও নানা ভাবে প্রসঙ্গ উঠেছে। ‘পেশাদার বিপ্লবী’ আর ‘সম্পদে’র মধ্যে ভারসাম্যের প্রশ্ন উঠছে।আরও অনেক কিছুর মতো সিপিএমে সর্বক্ষণের কর্মীও বাড়ন্ত। রাজ্য সম্মেলনে পেশ হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলায় এখন সিপিএমের মোট সদস্যসংখ্যা এক লক্ষ ৫৮ হাজার। প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, রাজ্যে ২০২৪ সালের পুনর্নবীকরণ রিপোর্ট অনুযায়ী সর্বক্ষণের কর্মীর সংখ্যা ১৪২৮। বিগত রাজ্য সম্মেলনে ছিল ১৪৯৯। হ্রাস পেয়েছে ৭১। প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ‘প্রয়োজনের তুলনায় রাজ্যে এই সংখ্যা যথেষ্ট কম। এই সংখ্যা যদি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়, তা হলে তা উদ্বেগের। পার্টির সর্বস্তরে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা প্রয়োজন’।

সর্বক্ষণের কর্মী প্রসঙ্গে দলের অবস্থানও ব্যাখ্যা করা আছে ওই প্রতিবেদনেই। বলা হয়েছে: ‘পার্টির কাজে নিজেকে সর্বক্ষণের জন্য নিযুক্ত রেখেছেন, অন্য কোনও পেশায় নিজেকে যুক্ত করেননি বা পেশা থেকে বেরিয়ে এসে পার্টি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পার্টিতে সর্বসময়ের জন্য কাজে নিজেকে নিয়োগ করেছেন, তিনি বা তাঁরা সর্বক্ষণের কর্মী’। যাঁরা অন্য পেশা বা কাজ থেকে সময় বার করে দলের জন্য কাজ করেন, তাঁরা এই গোত্রীয় নন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘অবসর নিয়ে সর্বক্ষণ পার্টির কাজ যাঁরা করছেন, তাঁরা পার্টির সম্পদ। কিন্তু সর্বক্ষণের কর্মী নন’।

সিপিএমে সর্বক্ষণের কর্মীরা দলীয় তহবিল থেকে ভাতা পান। আর যাঁরা অন্য কাজ করেও দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁরা দলকে ‘লেভি’ দেন। সুতরাং, সহজ হিসেব হল, দলের তহবিলের জোর না-বাড়লে সর্বক্ষণের কর্মী বাড়ানো সম্ভব নয়। আবার অন্য দিক থেকে দেখলে, যাঁরা অন্যান্য পেশায় থেকেও সিপিএমের সদস্য হিসেবে দলকে চাঁদা বা ‘লেভি’ দেন, তাঁদের আর্থিক সহায়তায় সর্বক্ষণের কর্মীদের ভাতা চলে। এখানেই দলের একাংশের প্রশ্ন, শিক্ষক, আইনজীবী বা অন্য পেশায় যুক্ত যে সদস্যেরা মস্তিষ্ক ও সময় দিয়ে দলের কাজ করছেন এবং নিজেদের বেতনের অংশ থেকে দলকে টাকাও দিচ্ছেন, নেতৃত্বে তাঁরা সুযোগ পাবেন না কেন? দলের বিদায়ী রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যেরও বক্তব্য, ‘‘বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে, খোলা মনে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা দরকার। কেরল বা অন্যান্য কিছু রাজ্য সর্বক্ষণের কর্মী এবং নেতৃত্বে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক উদার।’’

রাজ্যে সিপিএম তার কর্মীদের পরিবারের জন্য কোনও ‘ব্যবস্থা’করে দেওয়ার ক্ষমতা যখন হারিয়ে ফেলেছে, সেই সময়ে সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে কাজ করছেন, এমন এক তরুণ নেতা আরও একটি বিষয়ে দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পারিবারিক সঙ্গতি আছে বলেই সর্বক্ষণের কর্মীর ভাতায় আমাদের চলে যাচ্ছে। কিন্তু এই ভাবে চললে শুধু সেই সঙ্গতিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই সর্বক্ষণের কর্মী হতে পারবেন। প্রকৃত খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব সেখানে থাকবে কী করে?’’

সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রাক্তন বিধায়ক রাজ্য সম্মেলনে সর্বক্ষণের কর্মীদের ‘প্রকারভেদ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, কিছু নেতা-কর্মী অন্য কোনও পথে না গিয়ে সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে থেকে গিয়েও বিশেষ গুরুত্ব পেলেন না। আবার কিছু লোক সময় বুঝে চাকরি ছেড়ে দলের নেতৃত্ব স্তরে চলে গেলেন! উত্তর ২৪ পরগনাতেই এমন গোটাকয়েক দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন জেলার নেতাদের একাংশ।

এর কি সুরাহা? উত্তর খুঁজছে সিপিএম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM Left

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}