ঝাড়গ্রামে গাছ ভেঙে বন্ধ যান চলাচল। —নিজস্ব চিত্র।
কালবৈশাখীর ঝড়ে গাছ পড়ে রাজ্যের দুই জেলায় এক কিশোর-সহ দু’জনের মৃত্যু হল। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। ঝড়ের তাণ্ডবে রাজ্যের কোনও জেলায় ট্রেন চলাচল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে। কোথাও বা ভেঙে পড়েছে মোবাইল টাওয়ার। পূর্ব বর্ধমান থেকে হুগলি, হাওড়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুর— রাজ্যের বহু জেলায় কালবৈশাখীর ঝড়ের প্রভাব পড়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার বিকেলে বর্ধমান শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাজারবাগান এলাকার শেখ আলিশান নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় শহরের একটি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা চায়ের দোকানে দু’জন কিশোরের সঙ্গে ক্যারাম খেলছিল আলিশান। ঝড়ের দাপটে ওই দোকানের উপরে একটি গাছ ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনাস্থলেই আলিশানের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি, আহত অন্য দুই কিশোর। তাদের উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিধায়ক খোকন দাস-সহ প্রশাসনের আধিকারিকেরা। অন্য দিকে, পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের পালার গ্রামে বাজ পড়ে মৃত্যৃ হয় মানিকচন্দ্র দাস (৬৫ বছর) নামে এক ব্যক্তির। স্থানীয় সূত্রের খবর, মাঠে গরু চড়াতে গিয়েছিলেন মানিক। সে সময় প্রবল ঝড় ওঠে। বাজ পড়ার শব্দ শুনে এলাকার বাসিন্দা ছুটে গিয়ে দেখেন, বাজ পড়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মারা গিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
বর্ধমানের পাশাপাশি হুগলিতেও প্রাণহানি হয়েছে। ওই জেলায় কালবৈশাখীর ঝড়ের সময় আম কুড়োতে গিয়ে গাছ পড়ে মারা যান এক যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম সুনীল নাথ (৩২)। শ্রীরামপুর ঘোড়ামারা পশ্চিমপাড়া মল্লিকপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুনীলের উপর একটি নারকেল গাছ ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় শ্রীরামপুর থানার পুলিশ।
শনিবারের ঝড়ে হুগলির বেশ কয়েকটি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। চুঁচুড়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পাঙ্খাটুলিতেও গাছ ভেঙে প়ড়েছে। সেই সঙ্গে ত্রিবেণী স্টেশন রোডে প্রবল ঝড়ে একটি দোকানের চাল উড়ে যায়।
ঝড়ের দাপটে বেশ কয়েকটি লাইনে ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। হুগলির শেওড়াফুলি স্টেশনে ১ নম্বর লাইনে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। ওই স্টেশনে ওভারহেড তার থেকে বিদ্যুতের ফুলকিতে আগুন ধরে যায়। অন্য দিকে, তারকেশ্বর ১ নম্বর লাইনেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হুগলিতে একটি মোবাইল টাওয়ার ভেঙেও বিপত্তি ঘটেছে। ঝড়বৃষ্টির সময় বৈদ্যবাটি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্গোপ পাড়ায় হঠাৎ ভেঙে দুমড়েমুচড়ে ভেঙে পড়ে একটি মোবাইল টাওয়ার। এর জেরে একই বাড়িতে দু’জন আটকে পড়েন। তাঁদের উদ্ধার করেন স্থানীয়েরা।
শনিবার বিকেল থেকে হাওড়া জুড়েও প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলেই যেন রাতের অন্ধকার নেমে আসে জেলায়। হাওড়া থেকে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। ঝড়ের দাপটে কোনা এক্সপ্রেস সংলগ্ন নারায়ণপল্লিতে কয়েকটি বাড়ির উপর বড় হোর্ডিং ভেঙে পড়ে।
ঝড়বৃষ্টির জেরে পশ্চিম মেদিনীরপুর জেলায়ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি শুরু হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুদীপ সরকার বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টিতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কোথাও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলে ব্লক এবং পুর প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
শনিবার ভোরেই কয়েক মিনিটের ঝড়ে এই জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সকাল থেকেই একাধিক গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। ঝড়ের জেরে চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বৈকণ্ঠপুর, পিয়ারডাঙ্গা, ছাত্রগঞ্জ-সহ বেশ কিছু গ্রামের কাঁচা বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, ব্যাপক ঝড়বৃষ্টিতে ঝাড়গ্রাম শহরের ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকটি গাছ। যার জেরে সাময়িক ভাবে যানজট হয়। পরে প্রশাসনের তৎপরতায় গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে বাইরে বেরিয়ে হাওড়ায় গাছ পড়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধার। মৃতের নাম বঙ্গবালা মাইতি (৭১)। বোটানিক্যাল গার্ডেন থানা এলাকার বাকসারা নবনারী তলায় তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা মেয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন। সন্ধ্যায় ঝড়ের সময় বাইরে বেরিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy