ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার পরিস্থিতি। ফাইল চিত্র।
স্কুলের ক্ষেত্রে যেমন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, একই ভাবে সরকারি অফিসকাছারির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার আজ, সোমবার ও কাল, মঙ্গলবার প্রস্তাবিত কর্মবিরতির মোকাবিলায় কড়া অবস্থান নিয়েছে। তার জেরে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবি কেন্দ্রিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছে। কারণ বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীরা কার্যত সরকারের দিকে আইনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
আন্দোলন ও অনশনরত কর্মীরা আজ ও কাল যে-কর্মবিরতি পালনের ডাক দিয়েছেন, তার মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কড়া অবস্থান নিয়েছে। নোটিস দিয়ে তারা জানিয়েছে, এই দু’দিন সব সরকারি অফিস খোলা থাকবে এবং ‘জরুরি’ কারণ ছাড়া কোনও ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। তা সত্ত্বেও কেউ ছুটি নিলে বেতন কাটা যাবে, এমনকি কর্মজীবন থেকে বাদ যাবে একটি দিন। কর্মীদের একাংশের দাবি, তাঁরা তো ‘ছুটি’ নেওয়ার কথা বলেননি। তাঁরা কর্মবিরতি পালন করবেন অফিসে গিয়ে। এটা নবান্নের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার অর্থ দফতরের জারি করা কড়া নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ আইনি নোটিস পাঠিয়েছে অর্থসচিব মনোজ পন্থের কাছে। মঞ্চের সদস্য নির্ঝর কুণ্ডু রবিবার বলেন, ‘‘আইনি নোটিস দিয়ে আমরা জানিয়েছি, কর্মবিরতি নিয়ে সরকার তাদের অবস্থান না-পাল্টালে আমরাও আইনি ব্যবস্থা নেব।’’ নির্ঝর জানান, তাঁদের সমর্থন করেছেন আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও। সরকারি নোটিসে যে-‘সার্ভিস ব্রেকের’ কথা বলেছে, সেই প্রসঙ্গে বিকাশ তাঁদের জানিয়েছেন, সরকার এমন নোটিস আগেও দিয়েছে। কারও চাকরি যায়নি। ধর্মঘট সমর্থন করে কেউ অফিসে না-গেলে সরকার বেতন কাটতে পারে। তার বাইরে কিছু করার ক্ষমতা সরকারের নেই। ধর্মঘট করলে কারও চাকরি যায় না।
মঞ্চের আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মিত্রের দাবি, আজ, সোমবার সকালের মধ্যে সরকারকে নোটিস প্রত্যাহার করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আদালতের নির্দেশে এখানে বসেছি। সরকারি কর্মীরা ছুটি নিয়েই এই অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছেন। সরকার ভয় পেয়েছে। তাই এই নোটিস।’’
শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র বীরভূম জেলা সম্পাদক আশিস বিশ্বাস জানান, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা ভেবে কর্মবিরতির সব দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকলেও তাঁরা কর্মবিরতিতে যোগ দিচ্ছেন না। তবে রাজ্য জুড়ে সংগঠনের সদস্যেরা কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানাবেন। পশ্চিমবঙ্গ আদালত কর্মচারী সমিতির যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ জানিয়েছে, আগামী দু’দিন সরকারি নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই চলবে তাদের কর্মবিরতি।
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি শুধু মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করবে বলে জানিয়েছেন ওই কমিটির বীরভূম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে। আমরা দফতরে আসব, শুধু কাজ করব না। এতে কোনও ভাবেই সার্ভিস রুল ভাঙা হয় না।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘‘সার্ভিস ব্রেক এ ভাবে হয় না। কোর্টে গেলে রাজ্য সরকারকে থাপ্পড় দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। এর আগেও বন্ধ নিয়ে ওই ধরনের নির্দেশ জারি করে রাজ্য সরকারের মুখ পুড়েছিল।’’ সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে এসইউসি(সি)-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সাধারণ ধর্মঘট দমনে যে-পদক্ষেপ করে, এ ক্ষেত্রে তা করে স্বৈরাচারেরই প্রমাণ দিল।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কিছু না-বুঝেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে। ধর্মঘট আর কর্মবিরতি এক নয়। ধর্মঘটের সময় ‘নন-ডায়াস’ করে দেওয়ার কথা বলে সরকার, এখানে তো কর্মচারীরা তাঁদের দফতরে হাজিরা দেবেন।’’ সুজনের বক্তব্য, ‘ন্যায্য’ দাবির আন্দোলনকে এ ভাবে দমানো যায় না। রাজ্য সরকার মেলা-খেলায় টাকা খরচ করবে, রাজ্য জুড়ে লুট চলবে আর কর্মচারীদের প্রাপ্য ডিএ মিলবে না, এটা চলতে পারে না।
কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার দমনপীড়নের পথ নিয়েছে। ডিএ-র ন্যায্য দাবিতে সরকারি কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপরে দমনপীড়নের নীতি সমর্থনযোগ্য নয় কোনও ভাবেই।’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আদালত বা যেখানে ইচ্ছে যাক! সাধারণ মানুষের পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলন রাজ্য সরকার মেনে নেবে না। বাম আমলের তুলনায় পরিষেবার হাল ও মান এখন অনেক উন্নত। বাম আমলের অপসংস্কৃতি ফেরানোর চেষ্টায় শামিল হচ্ছেন এক শ্রেণির কর্মচারী, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ তাঁর বক্তব্য, ডিএ-র দাবি নিশ্চয়ই উঠতে পারে। কিন্তু যাঁরা সেই দাবি করছেন, তাঁরা একই সঙ্গে বলুন, কেন্দ্রীয় সরকার যেন বকেয়া পাওনা রাজ্যকে দেয়। তা হলেই অনেক সমস্যা মিটে যায়। তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সংবেদনশীল। তিন শতাংশ ডিএ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি অফিসে কাজ বন্ধ রাখা মানে বাংলার মানুষের বিরোধিতা করা।’’ তাঁর অভিযোগ, সিপিএম পিছন থেকে এই খেলা খেলছে। সাহায্য করছে বিজেপি ও কংগ্রেস। আন্দোলনকারী কর্মচারীরা কি এটা মনে রেখেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যের প্রাপ্য হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে?
রবিবার সকালে মঞ্চে অনশনরত দু’জন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগেও অনশনরত চার জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy