Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
উত্তরপ্রদেশে দুর্ঘটনায় মৃত উপরবাটারির আরও দু’জন
Death

এক সঙ্গেই ফিরছে ছয় শ্রমিকের দেহ

গত জানুয়ারির শেষে, সরস্বতী পুজোর সময়ে উপরবাটারির চার যুবক রাজস্থানের মার্বেল কারখানায় কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন।

শূন্যতা: দুর্ঘটনায় মৃত ধীরেন মাহাতোর বাবা মলিন্দ্র মাহাতো। রবিবার কোটশিলার উপরবাটারি গ্রামের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

শূন্যতা: দুর্ঘটনায় মৃত ধীরেন মাহাতোর বাবা মলিন্দ্র মাহাতো। রবিবার কোটশিলার উপরবাটারি গ্রামের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০৫:৫৩
Share: Save:

দমবন্ধ করা একটা দিন পার করে পুরুলিয়ার কোটশিলার উপরবাটারি গ্রামের দু’টি পরিবার জানতে পারল, তাদের দুই ছেলেও আর নেই। শনিবার ভোরে উত্তরপ্রদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই গ্রামের স্বপন রাজোয়াড় (২২) ও ধীরেন মাহাতোর (২১)।

গত জানুয়ারির শেষে, সরস্বতী পুজোর সময়ে উপরবাটারির চার যুবক রাজস্থানের মার্বেল কারখানায় কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন। আটকে পড়েন ‘লকডাউন’-এ। পরিজনেরা জানতেন, সবাই এক সঙ্গে পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছে। পথে পুলিশ তুলে দিয়েছে পাটনা যাওয়ার একটি ট্রাকে। শনিবার সকালে খবর আসে, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পুরুলিয়ার চার জনের। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উপরবাটারি গ্রামের অজিত মাহাতো। শোনা ইস্তক ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল বাকি তিন জনের পরিবার। কিন্তু মোবাইল ছিল বন্ধ। শনিবার বিকেলে গোপাল মাহাতো ফোন করেন বাবা ঝাবু মাহাতোকে জানান, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। রাতভর ঘুমোতে পারেনি অন্য দু’টি পরিবার। রবিবার সকালে পুলিশ এসে জানিয়ে যায়, স্বপন রাজোয়াড় এবং ধীরেন মাহাতোরও মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার দুর্ঘটনায় মৃত মোট ছ’জন শ্রমিকের বাড়িতেই যান পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। সরকারি ক্ষতিপূরণের চেক এবং পারলৌকিক কাজের জন্য ‘সমব্যথী প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসেন। বাড়ির সামনে প্রশাসনের কর্তাদের গাড়ি থামতে আড়াই বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসেন স্বপনের স্ত্রী আরতি। বলেন, ‘‘ছেলেটার কথা ভেবেই বাইরে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এখন ওকে আমি কী করে মানুষ করব?’’ বাড়িতে রয়েছেন স্বপনের বাবা, মা, ভাই, স্ত্রী ও ছেলে। বাবা সুন্দর রাজোয়াড় প্রান্তিক চাষি। ভাই সুরেশ দিনমজুরি করেন। স্বপন নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। আরতি জানান, ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন স্বপনের মা সাধনাদেবী। সকাল থেকে কিছু মুখে তোলেননি।

ধীরেনের বাবা মলিন্দ্র মাহাতোও প্রান্তিক চাষি। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা শিবানীদেবী। ধীরেনের দাদা বীরেন হায়দরাবাদে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। অন্যদের সঙ্গে বাস ভাড়া করে শনিবারই গ্রামে ফিরেছেন তিনি। তার পরেই এসেছে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ। বীরেন জানান, হাদরাবাদ থেকে বেরনোর আগে শেষ কথা হয়েছিল ভাইয়ের সঙ্গে। ধীরেন জানিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই হেঁটেই রওনা হচ্ছেন। দাদাকে বলেছিলেন, ‘‘তুই যা, আমিও আসছি।’’

তিনি গেলে ভাই বাড়ি ফিরবেন বলে ঠিক ছিল। দু’জনেই রাজস্থানের মার্বেল কারখানায় কাজ করতেন। ‘লকডাউন’-এ দু’জায়গায় আটকে পড়েন। শনিবার ভাই মিলন বাদ্যকরের মৃত্যুর খবর পেয়ে কোনও রকমে নিজেকে ধরে রেখেছিলেন পুরুলিয়া মফস্সল থানার দুমদুমি গ্রামের দেবাশিস। এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ছেলেকে সামলাচ্ছিলেন বাবা অমৃত বাদ্যকর। ক্ষতিপূরণের চেক হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিলনের মা সুবাসীদেবী। ওই গ্রামেরই মৃত শ্রমিক চন্দন রাজোয়াড়ের বাড়িতে এ দিন সকালে চলে এসেছেন তাঁর দুই দিদি চায়না ও শিবানী। থমথমে পরিবেশ। সকাল থেকে হাঁড়ি চাপেনি।

কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন উপরবাটারির অজিত মাহাতোর স্ত্রী ঊর্মিলাও। নাবালক ছেলে-মেয়েকে কী করে বড় করবেন, সেই প্রশ্ন করেন জেলাশাসক এবং মন্ত্রীকে। পাশে থাকার আশ্বাস দেন তাঁরা। ঝালমামড়া গ্রামের গণেশ রাজোয়াড় শৈশব থেকে পুরুলিয়া মফস্সল থানার বোঙাবাড়িতে মামার কাছে মানুষ হয়েছেন। তার পরে কাজ নিয়ে যান রাজস্থানে। ছেলে ফেরার ট্রাকে উঠেছে শুনে অধীর অপেক্ষায় ছিলেন গণেশের বাবা তারাপদ রাজোয়াড়। পরিজনেরা জানান, রোজ খেতে বসে ছেলের কথা বলতেন তিনি। ভাল রান্না যা হওয়ার, গণেশ ফেরার পরে করতে বলতেন। রবিবার কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না ওই বাড়ির কেউই।

শনিবার রাতেই অজিত, মিলন, চন্দন ও গণেশের পরিবারের প্রতিনিধিদের দু’টি গাড়িতে উত্তরপ্রদেশ রওনা করিয়েছে জেলা প্রশাসন। দু’টি বাতানুকুল অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সঙ্গে গিয়েছে পুলিশও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, সোমবার ছ’জনের দেহ পুরুলিয়ায় ফেরার কথা।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Coronavirus Lockdown Migrant Labourer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy