হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শনিবার দুপুর ১টায় হাজরা থেকে মিছিল শুরু করেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। — নিজস্ব চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে শনিবার কলকাতার রাজপথে মহামিছিল করলেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। তাঁদের আন্দোলন মঞ্চে এসে বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানেরা। অনুপস্থিত শুধু সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও দলের ছাত্র যুব সংগঠনের একাধিক প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন। এক সময় বাম প্রভাবিত কর্মী সংগঠন এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ একসঙ্গেই করছিল ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন। কিন্তু এই মুহূর্তে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে তারা। দূরত্ব কি বেড়েছে? সে কারণেই কি মহামিছিলের দিন বিরোধী নেতৃত্বের ঐক্য দেখা গেল না? উঠছে প্রশ্ন। বিজেপি এই মঞ্চের সঙ্গে সখ্যে 'এগিয়ে গিয়েছে' বলেই কি সিপিএম নেতৃত্ব একটু সতর্ক? এই প্রশ্নও ঘুরছে। যদিও বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের পাশ থেকে সরে আসার প্রশ্নই নেই।
ডিএ মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। শীর্ষ আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। ডিএ-র দাবিতে অতীতে কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। আবার ‘ডিজিটাল অসহযোহিতা’র পথেও হেঁটেছিলেন তাঁরা। এ বার কলকাতার রাজপথে মিছিল করছেন তাঁরা। ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারের নীচে অবস্থান করছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। সেই আন্দোলনের ১০০তম দিন ছিল শনিবার।
হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শনিবার দুপুর ১টায় হাজরা থেকে মিছিল শুরু করেন ডিএ আন্দোলনকারীরা। হরিশ মুখার্জি রোড ঘুরে হাজরা মোড়েই শেষ হয় মিছিল। মিছিল শেষে শহিদ মিনারে ডিএ আন্দোলনের মঞ্চে জড়ো হন বিরোধীরা। সেখানেই উপস্থিত হয়ে সরকারকে ‘টাইট’ দেওয়ার ‘কৌশল’ বাতলান শুভেন্দু।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে দিয়ে ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিল করার অনুমতি দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মিছিল থেকে কোনও কুমন্তব্য করা যাবে না। যদিও হরিশ মুখার্জি রোডে অভিষেকের বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় উঠল ‘চোর-চোর’ স্লোগান। শুধু অভিষেকের বাড়ির সামনেই নয়, হাজরা রোড ধরে যাওয়ার সময় অন্যত্রও এই স্লোগান শোনা গিয়েছে ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে। হরিশ মুখার্জি রোড ধরে মিছিল যাওয়া প্রসঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও বিতর্ক নেই। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে কোনও জায়গায় প্রতিবাদ জানানোর অধিকার থাকা উচিত।’’
মিছিল শেষে আন্দোলন মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারকে কড়া বার্তা দেন শুভেন্দু। ডিএ আদায়ের কিছু কৌশলও তিনি বলে দেন আন্দোলনকারীদের। তাঁর কথায়, “আপনারা মারপিট করার কোনও কর্মসূচি নেবেন না।” তার পরেই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, “এরা নিষ্ঠুর, এরা বর্বর, এরা যে কোনও সময় খুন করতে পারে। ট্রিগার হ্যাপি এরা।” ডিএ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। স্ত্রী-পুত্র, পরিবার, বাবা আছে। অনশন করে শরীর নষ্ট করা যাবে না।”
তার পরেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে ‘টাইট’ দেওয়ার উপায় জানিয়ে দেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর কথায়, “আপনাদের হাতে কলম আছে। কলমের খাপ বন্ধ করলেই টাইটটা হবে।” নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যায় শুভেন্দু জানান, সরকারের সঙ্গে লাগাতার অসহযোগের পথে হাঁটলে সরকার এমনিতেই সমস্ত দাবিদাওয়া মেনে নিতে বাধ্য থাকবে।
শুভেন্দু সরব হলেও ওই মঞ্চে দেখা যায়নি বামেদের। রাজনীতির বৃত্তে যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের একাংশ মনে করছেন, বিজেপি আন্দোলনের মঞ্চে রয়েছেন বলেই বামেরা অনুপস্থিত। অন্য একটা অংশের মতে, বাম প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠন কোঅর্ডিনেশনের সঙ্গে মতবিরোধ বেড়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের। আন্দোলনকারীদের দিল্লি যাত্রা থেকে সেই দূরত্ব স্পষ্ট হয়েছে। যদিও এই দূরত্বের কথা মানতে চাননি বাম নেতা সুজন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমর্থন সব সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রয়েছে। আগেও তাঁদের মঞ্চে গিয়ে সমর্থনের কথা জানিয়েছি। আবারও জানাব। আজ আমারই ওখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলীয় কাজে বীরভূমে রয়েছি বলে যেতে পারিনি।’’ সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের কেউ না গেলেও শনিবার ডিএ মঞ্চে গিয়েছিলেন দলের ছাত্র এবং যুব সংগঠনের একাধিক প্রতিনিধি। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেত্রী সোনালি গুহও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy