ইয়াসের ত্রাণ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ মমতার। —ফাইল চিত্র।
আমপানের পর এ বার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ক্ষতিপূরণ নিয়ে ফের সরাসরি সঙ্ঘাতে কেন্দ্র এবং রাজ্য। ক্ষতিপূরণ বাবদ অগ্রিম বরাদ্দ নিয়ে বাংলার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে এ বার অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির জন্য যেখানে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র, সেখানে বাংলার জন্য মোটে ৪০০ কোটি। মমতার দাবি, ওই দুই রাজ্যের তুলনায় বাংলার আয়তন এবং জনঘনত্ব বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে তীব্র গতিতে বাংলা-ওড়িশায় মধ্যবর্তী কোনও অঞ্চলে আছড়ে পড়ার কথা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের। তার জন্য বঙ্গোপসাগরবর্তী বাংলা, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে আগাম তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকও করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানেই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি আঁচ করে প্রত্যেক রাজ্যের বিপর্যয় খাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ বরাদ্দ করেন তিনি। বাংলার জন্য সেই বরাদ্দের পরিমাণ নিয়েই আপত্তি তুলেছেন মমতা।
অমিতের সঙ্গে বৈঠক সেরেই সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে ইয়াস প্রতিরোধে রাজ্যের পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘বাংলা, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে নিয়ে আজ একটা বৈঠক করেছেন অমিত শাহ বাবু। সহযোগিতা করবেন বলেছেন। ঘোষণা করেছেন, ওড়িশা ৬০০ কোটির উপর টাকা পাবে। অন্ধ্রপ্রদেশও পাবে ৬০০ কোটির বেশি টাকা। বাংলাকে দেওয়া হবে ৪০০ কোটির সামান্য বেশি। আমি বলেছি, ওড়িশা, অন্ধ্রের থেকে বাংলা অনেক বড় রাজ্য। আমাদের জনঘনত্ব এবং জেলাও অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও বার বার কেন বঞ্চিত আমরা?’’
মমতা জানিয়েছেন, ওড়িশা এবং অন্ধ্রের বেশি টাকা পাওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি নেই। আপত্তি বাংলাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করায়। কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদুত্তর দিতে পারেননি। মমতার কথায়, ‘‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই বৈষম্য কেন? ওড়িশা এবং অন্ধ্রও উপকূলবর্তী রাজ্য। তাদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই আমার। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে পুদুচেরির তুলনা চলে কি? আয়তন, জনঘনত্ব, ভৌগলিক অবস্থান দেখতে হয়। আমি আমার কথা তুলে ধরি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘মমতাজি আমরা পরে কথা বলব। বৈজ্ঞানিক ভাবে সব কিছু ঠিক হয়েছে’। এর পর আর কিছু বলিনি আমি। কারণ আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভালই বুঝি। কিন্তু এই বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান কম।’’
এর আগে গত বছর ঘূর্ণিঝড় আমপানের সময়ও বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর সরকার। নীলবাড়ির লড়াইয়ে মাস খানেক আগে পর্যন্তও সেই সঙ্ঘাতের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। বিভিন্ন সভা-মিছিলে বক্তৃতা করতে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমপানের টাকা লুঠ করার অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আগেই যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কেন্দ্র কোনও সাহায্যই করেনি বলে দাবি তাঁদের। সোমবার ফের এক বার সেই কথাই শোনা গেল মমতার মুখে। তিনি বলেন, ‘‘আমপানের সময় বলেছিল টাকা দেবে। কেন্দ্রীয় দল এসে ঘুরেও গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু হল না। রাজ্যের খাতে মজুত টাকা থেকেই ১০০০ কোটি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ মাছের তেলেই মাছ ভাজা হয়েছিল। বুলবুলের সময়ও টাকা পাইনি, আমপানের সময়ও নয়, কোভিডেও নয়। এখন আবার আর একটা ঝড় আসছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy