ফাইল চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রাথমিক ধাক্কা কেটেছে। এখন দুর্যোগ-পরবর্তী ধাক্কা এবং বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ভরা কটালকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মঙ্গল-বুধবার, টানা দেড় দিন নবান্নে থেকে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে বৈঠকে এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে শুক্র ও শনিবার দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর সফরে যাবেন মমতা। এ দিনই সেচ, ত্রাণ-পুনর্গঠন এবং ওষুধ-চিকিৎসা সংক্রান্ত তিনটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন তিনি।
বুলবুল ও আমপানের পরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, চলতি পরিস্থিতিতে সংঘাত নয়, কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব নিয়েই দুর্গতদের সাহায্য এবং বিপর্যস্ত পরিকাঠামোর পুনর্গঠন করতে চায় রাজ্য। মমতা বলেন, “এটা দুর্যোগের সময়। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত হিসেবে এটা দেখা উচিত নয়। কেন্দ্র শুধু ফোন করে খবর নেয়। সেটা করতে কত ক্ষণ লাগে! কেন্দ্র ও রাজ্যের সংস্থাগুলি একসঙ্গে কাজ করেছে, করবে। সকলে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে বলে মানুষকে বাঁচানো গিয়েছে। যাঁরা মারা গিয়েছেন, যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সব মিটে যাওয়ার পরে তাঁদের সাহায্য করবে সরকার। আমপানেও কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। তার পরেও আমরা কিছু পাইনি।”
মমতার নির্দেশে উপকূল এলাকা থেকে ১৫ লক্ষের বেশি মানুষকে সুরক্ষিত জায়গায় সরানো হয়েছে। এ দিন তিনি সংশ্লিষ্ট সব জেলাশাসককে ফোন করে পরিস্থিতির খোঁজ নেন। কাজে কিছুটা শ্লথগতি দেখে তৎক্ষণাৎ জেলাশাসকদের গতি বাড়াতে বলেন। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিরন্তর পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন। অভূতপূর্ব তৎপরতায় উদ্ধারকাজ হয়েছে। কোনও রোগীর অসুবিধা হয়নি।” তিনি জানান, টিকাকরণ চলবে। গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ড এবং কেন্দ্র এ রাজ্যের টিকাকরণ নীতির প্রশংসা করেছে। যে-ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্র বেছে নিয়ে রাজ্যে টিকাকরণ চলছে, তাকেই বিজ্ঞানসম্মত বলে মনে ধরা হচ্ছে।
এ দিনই বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ভরা কটাল ছিল। আজ, বৃহস্পতিবারেও ভরা কটাল থাকায় প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। মমতা বলেন, “পূর্ণিমা-অমাবস্যায় ভরা কটালে জলের তেজ বাড়ে। কালীঘাট, রাসবিহারী, চেতলা, রাসবিহারী, গঙ্গার আশপাশের এলাকা, দিঘা, মন্দারমণি, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনায় সকলকে বলব, কালকেও বান আসবে। যাঁরা নদী ও সমুদ্রের পাশে থাকেন, তাঁরা সতর্ক থাকবেন। কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে বলব, সব থানাকে সতর্ক করুন। কারও বাড়িতে জল ঢুকলে পাশে উঁচু জায়গা, বাড়ি বা ক্লাবে আশ্রয় নিন।”
সেচসচিব নবীন প্রকাশের কাছে মমতা জানতে চান, প্রতি বার বাঁধ তৈরির পরে একটা দুর্যোগেই তা নষ্ট হয়ে যায় কেন? তিনি বলেন, “কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করলে আর নষ্ট হয়ে গেল! এতে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়। কোথা থেকে টাকা আসবে? কেন্দ্র তো টাকা দেয় না।” স্থায়ী বাঁধ গড়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সেচ দফতরকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা।
ঝাড়খণ্ডে ভারী বৃষ্টির জেরে জলাধার থেকে জল ছাড়লে বাংলার পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এই বিষয়ে সেচ দফতরকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, নোনা জল ঢুকে চাষের যে-সব জমি নষ্ট হয়েছে, পাম্প করে সেখান থেকে দ্রুত জল বার করে দিতে হবে। যেখানে জল বার করা যাবে না, সেখানে নোনা-স্বর্ণধান এবং নোনা-মৎস্য চাষ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেচ, বন, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পরিবেশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে নিয়ে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গড়া হবে। ত্রাণ-পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টা পরে।
বিদ্যুৎ দফতরের কন্ট্রোল রুমে এ দিনেও দফায় দফায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও দফতরের কর্তারা। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, ‘‘অফিসারেরা এখন ফিল্ডেই রয়েছেন। যেখানে জল নামছে, সেখানকার কিছুটা রিপোর্ট পাচ্ছি। জল কমলে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করতে পারব।’’ কন্ট্রোল রুম আজ, বৃহস্পতিবারেও চালু থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy