Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

১১ প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে বুলবুল, শক্তি খুইয়ে পরিণত গভীর নিম্নচাপে

ঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা। উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরেও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। বিপর্যয় সামলানোর ব্যাপারে এ দিন সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সম্বলটুকু বাঁচানোর চেষ্টা। বকখালিতে বুলবুলের দাপটের পর। ছবি: পিটিআই।

সম্বলটুকু বাঁচানোর চেষ্টা। বকখালিতে বুলবুলের দাপটের পর। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

বাংলাদেশে পাড়ি দিল ঠিকই। তবে তার আগে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ১১ জনের প্রাণ নিল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। সরকারি ভাবে সাত জনের প্রাণহানির কথা জানানো হলেও বেসরকারি ভাবে আরও চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে রবিবার।

ঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা। উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরেও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। বিপর্যয় সামলানোর ব্যাপারে এ দিন সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইট করে পশ্চিমবঙ্গকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি পরিদর্শকদলও পাঠানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যেরই সরকারি দল পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করবে।

বিপর্যয়ের জন্য উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি দেখতে আজ, সোমবার কাকদ্বীপ যাচ্ছেন তিনি। আকাশপথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পরে মমতা কাকদ্বীপেই উদ্ধার ও ত্রাণবণ্টন নিয়ে বৈঠক করবেন। বুধবার বসিরহাটে যেতে পারেন বলে টুইটারে জানান তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে লাগাতার ক্ষোভ প্রকাশের পরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বিপর্যয় সামলানোর ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ১০ জনের প্রাণ কাড়ল বুলবুল

দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় শুধু ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন! মাইলের পর মাইল খাঁ-খাঁ করছে রাস্তা। কিন্তু যাওয়ার উপায় নেই। এক-দেড় হাত অন্তর গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ। কোথাও কোথাও রাস্তার ধারের উপড়ে পড়া গাছের ডালে আটকে রয়েছে বাড়ির চাল। পাশেই তালগোল পাকিয়ে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বৃষ্টির জলে ভরে গিয়েছে চাষের খেত। চাষিরা বলছেন, বাঁচোয়া বলতে এটুকুই যে, এ বার আয়লার মতো বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢোকেনি খেতে। এ দিন সকালেই বাংলাদেশে ঢুকে ক্রমশ শক্তি খোয়াতে খোয়াতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বুলবুল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, গোসাবা ব্লকে লাহিড়ীপুরে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয় কমলা মণ্ডল (৬২) নামে এক প্রৌঢ়ার। মৌসুনি দ্বীপের কাছে নোঙর করা একটি ট্রলার উল্টে গিয়েছিল। তাতে এক মৎস্যজীবীর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। তাঁর আট জন সঙ্গী এখনও নিখোঁজ।

ক্ষতির খতিয়ান

মৃতের সংখ্যা ১১
• উত্তর ২৪ পরগনায় ৫
• দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২
• পূর্ব মেদিনীপুরে ৩
• কলকাতায় ১
• ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ: ৪.৬৫ লক্ষ
• ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি: ৬০ হাজার
• ত্রাণশিবির: ৪৭১
• ত্রাণশিবিরে আছেন: ১.৭৮ লক্ষ
• দুর্গতদের জন্য রান্নাঘর: ৩২৩
• ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন: ৬৬
• ক্ষতিগ্রস্ত মোবাইল টাওয়ার: ২০০০
• চাষের ক্ষতি বিপুল (এখনও হিসেব করা যায়নি)
তথ্য: রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া

সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় ধানখেতে অমূল্য মণ্ডল (৮০) নামে এক বৃদ্ধের দেহ পাওয়া গিয়েছে। পরিজনদের নিষেধ সত্ত্বেও ঝড়ের রাতে বেরিয়েছিলেন তিনি। দুর্যোগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান।

লন্ডভন্ড: বুলবুলের দাপটে ভেঙেছে মাটির বাড়ি, উড়েছে ছাদ। ভিটে ছাড়ার আগে সিলিং ফ্যানটা খুলে নিচ্ছেন প্রতিমা মণ্ডল।
রবিবার বকখালি-ফ্রেজারগঞ্জের অমরাবতী গ্রামে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

প্রশাসন জানাচ্ছে, পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন গ্রাম তছনছ হয়ে গিয়েছে। ভীষণ ক্ষতি হয়েছে ধান, পান ও আনাজের। সাগরদ্বীপ থেকে বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জের গৃহহীন বাসিন্দাদের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। আবহাওয়ার

উন্নতির পরে ভিটেমাটির অবস্থা দেখতে বেরিয়েছেন কেউ কেউ। সাগরদ্বীপের কাশতলা, শিবপুরের রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে বড় গাছ, উল্টে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বেশ কয়েকটি জায়গায় বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার।

উদ্ধার ও ত্রাণে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১০টি ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ছ’টি দল, কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী। উপকূল এলাকায় আছে ৯৪টি নৌকা। ঝড়বিধ্বস্ত এলাকায় ৩৪টি বিদ্যুতের সাবস্টেশন বিগড়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে ৩০টি মেরামত করা গিয়েছে। প্রায় ১০৫০টি মোবাইল টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত। টেলিকম সংস্থাগুলির দাবি, হাজারখানেক টাওয়ার সারানো হয়েছে। মারা গিয়েছে বেশ কিছু গবাদি পশু। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি নদীবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। বুলবুলের দাপটে উত্তর ২৪ পরগনায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হিঙ্গলগঞ্জ, দুই সন্দেশখালি, হাসনাবাদ ও বসিরহাট-১ ব্লক। এ দিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী। বারুইপুরের শঙ্করপুর ও ধবধবি ঘুরে দেখেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই ২৪ পরগনায় এ দিনেও ফেরি চলাচল শুরু হয়নি। অনেক এলাকা এখনও যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন। পূর্ব মেদিনীপুরেও ক্ষতি কম নয়। শনিবার রাতে জুনপুটে যান পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার সকালে খেজুরি ও নন্দীগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘কাঁথি, রামনগর, খেজুরি ও নন্দীগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy