Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

মুরগির খামারে মাথা গুঁজেছেন সায়রা

পাকা দেওয়ালের উপরে খড়ের চাল দেওয়া সুদৃশ্য সে সব কটেজ তৈরি করে পর্যটন শুরু হওয়ায় ভরসা পেয়েছিল দ্বীপভূমি।

মৌসুনি দ্বীপে নোনা জল মিশে হলুদ হয়ে গিয়েছে গাছের পাতা। নিজস্ব চিত্র

মৌসুনি দ্বীপে নোনা জল মিশে হলুদ হয়ে গিয়েছে গাছের পাতা। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
মৌসুনি দ্বীপ (নামখানা) শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৩:৫৩
Share: Save:

বছর তিনেক আগে কেরলে শ্রমিকের কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন তপন খামারু। এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে জেনেই এই সিদ্ধান্ত। ধারকর্জ করে টোটো কিনে ফেলেন। জানালেন, দিনে সাত-আটশো টাকা রোজগার হয়েই যেত। সে দিন কবে ফিরবে, আদৌ ফিরবে কি না, জানেন না তপন। কারণ, মৌসুনি দ্বীপে পর্যটকদের জন্য তৈরি গোটা তিরিশ কটেজ ভেঙেচুরে একসা।

পাকা দেওয়ালের উপরে খড়ের চাল দেওয়া সুদৃশ্য সে সব কটেজ তৈরি করে পর্যটন শুরু হওয়ায় ভরসা পেয়েছিল দ্বীপভূমি। কয়েকশো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। কেউ রান্না করতেন, কেউ হোটেলের কাজ পেয়েছিলেন। ছোটখাট দোকান দিয়েও সংসারের হাল ফিরেছিল অনেকের। কিন্তু আমপানের দাপটে পুরো এলাকাই ছারখার হয়ে গিয়েছে। সমুদ্রের ধারে যে ঝাউবনের আকর্ষণে আসতেন মানুষ, সেই ঝাউবন পুরো মিশে গিয়েছে মাটির সঙ্গে। যে-দিকে চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসের ছবি।

মুড়িগঙ্গা, চিনাই নদী এবং বঙ্গোপসাগর ঘিরে রেখেছে নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপকে। হাজার তিরিশ মানুষের বাস। পান, ধান, আনাজের চাষ হয়। হাঁস-মুরগি পালন করেও সংসার চালান অনেকে। কিন্তু এলাকার পুরো অর্থনীতিটাই এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

হাজার দেড়েক বরজ পুরোপুরি নষ্ট। বিঘের পর বিঘে চাষের জমি জলের তলায়। অসংখ্য গাছের শবদেহ পড়ে আছে রাস্তার দু’ধারে। যে ক’টি গাছ দাঁড়িয়ে আছে, তাদের অনেকগুলির পাতা হলুদ হয়ে এসেছে। বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, এগুলিও আসলে মারা গিয়েছে। ক’দিন বাদে ডালপালা, গুঁড়ি শুকিয়ে যাবে। এত ক্ষয়ক্ষতির জন্য গ্রামের মানুষ দায়ী করছেন দুর্বল বাঁধকেই। ঘূর্ণিঝড়ে, জলের তোড়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার মাটির বাঁধ ভেঙেছে নানা জায়গায়। আয়লার পরে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি শুরু হয়। কিন্তু কাজ বিশেষ এগোয়নি। এত দিনেও কেন পাকা বাঁধ তৈরি করা গেল না? পঞ্চায়েত প্রধান হাসনাবানু বিবি সে জন্য জমির সমস্যাকেই দুষছেন। কিন্তু সব আইনি জটিলতা বুঝতে চান না গ্রামের মানুষ। তাঁরা বোঝেন, পাকাপোক্ত বাঁধ থাকলে তাঁদের জীবনটা আরও একটু সুরক্ষিত থাকত।

অ্যাসবেস্টসের চাল উড়ে মাটির ঘরদোর ভেসে গিয়েছে সায়রা বিবিদের। স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সাত ফুটের মুরগির খামারে মাথা গুঁজে আছেন। বললেন, ‘‘রেশনের চাল শেষ। একটা শুধু ত্রিপল পেয়েছিলাম। এখন চেয়েচিন্তে খেয়ে আছি কোনও রকমে।’’ খাবার পেতে অসুবিধা হলে তাঁরা যেন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, জানাচ্ছেন নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র। গ্রামের লোকের বক্তব্য, ‘‘বারবার ঘরদোর ভেসে যাবে, আর চাল-ডাল চেয়ে খাব, এই কি তবে আমাদের ভবিষ্যৎ?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone Mousuni Island Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy