আপাতত আয়লা কেন্দ্রেই সংসার। নিজস্ব চিত্র
তিন মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করছিলেন মহিলা। তাঁকে ঘিরে আছেন আরও কয়েকজন। বড় হলঘরের এক প্রান্তে এক মধ্যবয়স্ক তখন খাট সারাতে ব্যস্ত। আয়লা কেন্দ্রে এত লোক দেখে মনে হতেই পারে, ঘূর্ণিঝড় আমপান- এর কোপ থেকে বাঁচতে আগে থেকেই এঁরা ভাগে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় নয়, লকডাউনের বহু আগে থেকেই আয়লা কেন্দ্রই তাঁদের ঠাঁই।
দিঘার সীমানা এলাকার কাছাকাছি রতনপুর আয়লা কেন্দ্রে এরকম বেশ কিছু পরিবার দীর্ঘদিন বাস করছেন। রামনগর-১ ব্লকের গোবিন্দবসান গ্রামের এক ব্যক্তির দাবি, ‘‘দিঘা শহরে রাস্তার ধারে সরকারি জমিতে ঝুপড়িতে থাকতাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে ওই ঝুপড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। তারপর থেকে আয়লা কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছি।’’ রতনপুর মৌজার এক বৃদ্ধা জানান, মেয়ে জামাইয়ের আস্তানা উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে আয়লা কেন্দ্রে রয়েছে। সেখানেই একই ঘরে কয়েক মাস ধরে রয়েছেন খাদালগোবরা গ্রামের এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের ভিটে বলতে কিছু নেই। কয়েকদিন আগেই প্রশাসনের লোক এসে বলে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে এখান থেকে চলে যেতে হবে। তখন কোথায় মাথা গুঁজবো বলতে পারেন।’’
আয়লা কেন্দ্রে ঠাঁই পাওয়া এমন অনেকেই জানালেন, কয়েকদিন আগে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন এসে বলে গিয়েছে ওখান চলে যেতে হবে। সরকারি আয়লা কেন্দ্রে বর্তমানে ৬টি পরিবার বাস করে। করোনা কী, তাঁদের জানা নেই। ফলে করোনা সতর্কতা মেনে থাকার বালাইও নেই। তাঁদের এখন একটাই চিন্তা, আমপান চলে গেলে নিশ্চিন্তের এই ঠাঁই ছেড়ে ছেলেপুলে নিয়ে কোথায় যাবেন? এঁদের কেউ রিকশা চালান, কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। লকডাউনে সে সবই বন্ধ। দু’বেলা দুমুঠো অন্ন জোগাড় করাটাই এখন তাঁদের কাছে যথেষ্ট কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে দিঘায় শিল্প সম্মেলনের উদ্বোধনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে সৈকত শহরে রাস্তার ধারে সরকারি জমিতে সমস্ত অস্থায়ী নির্মাণ ভেঙে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সেই সময় ঠাঁই হারায় খাদালগোবরা এবং গোবিন্দবসান গ্রামের ৫২ টি পরিবার। প্রশাসন বিকল্প বাসস্থান তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত রতনপুরে আয়লা কেন্দ্রে ওইসব পরিবার থাকতে পারবে বলে জানিয়েছিল প্রশাসন। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রের খবর, ওই পরিবারের বিকল্প বাসস্থানের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে যাঁদের আর্থিক ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের অনেকেই ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন।
আয়লা কেন্দ্রে বসবাসকারীদের বাসস্থান হারানোর আতঙ্ক প্রসঙ্গে রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘ওঁদের সমস্যার কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে প্রশাসন। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy