Advertisement
E-Paper

ঠিকানা রেখে ঝড়ে ছিন্নমূল বট-অশ্বত্থেরা

বারাসতের হেলা বটতলা, শালবাগান, বামনগাছির বড় বটতলা বলে ঠিকানা দিলেই পৌঁছে যায় চিঠি।

ভূপতিত: বারাসতের হেলা বটতলায় উল্টে পড়া বটগাছ। নিজস্ব চিত্র

ভূপতিত: বারাসতের হেলা বটতলায় উল্টে পড়া বটগাছ। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০২:৩৭
Share
Save

রাজাই শুধু নেই। দশক তো বটেই, শতক পার করেও রাজার মতো দাঁড়িয়েছিল বড় বড় গাছগুলি। কোনওটির নীচে পথিক ছায়া পেত। কোনওটির নীচে বসত পঞ্চায়েতের বৈঠক। সেই সব গাছের নামেই দশকের পর দশক ধরে পরিচিত হয়েছিল বিভিন্ন এলাকা। বারাসত, দেগঙ্গা, দত্তপুকুরের মতো জায়গায় বহু এলাকায় আমপানের দাপটে এক সন্ধ্যায় সেই সব গাছ শিকড় থেকে উপড়ে গিয়েছে। বিরাট চেহারা আর চওড়া গুঁড়ি নিয়ে কোনও কোনও গাছ এখনও পড়ে রয়েছে রাস্তায়। কোনওটি ইতিমধ্যে কেটে ফেলাও হয়েছে।

বারাসতের হেলা বটতলা, শালবাগান, বামনগাছির বড় বটতলা বলে ঠিকানা দিলেই পৌঁছে যায় চিঠি। দত্তপুকুর স্টেশনে নেমে জামতলা কিংবা শাসনের চৌমহা গিয়ে অশ্বত্থতলা যাওয়ার কথা বললে অটো, টোটো যাত্রীদের পৌঁছে দেয়। শিকড় সমেত মুখ থুবড়ে এখন উল্টে পড়ে রয়েছে সেই সব বট, বেল, আম, জাম, লিচু, অশ্বত্থ গাছ। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে এ ভাবেই রাজ্যের বহু জায়গাতেই গাছ উপড়ে পড়ে নিজেদের নাম জুড়ে থাকা এলাকাগুলিকে ‘অনাথ’ করে দিয়ে গিয়েছে।

বামনগাছি স্টেশনে নেমে ‘বটতলা’ যেতে চাইলে রিকশা বা অটোর চালকেরা জানতে চান, কোন বটতলা? বামনগাছির দু’প্রান্তে দু’টি বটতলা আছে। বড় বটতলা ও ছোট বটতলা। আমপানের শিকার হয়েছে বড় বটতলার প্রাচীন বটগাছটি। স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন দে-র কথায়, ‘‘অত বড় গাছটা কী ভাবে যে উপড়ে পড়ল! এলাকাটাই যেন অভিভাবকহীন হয়ে গিয়েছে। এখন বড় বটতলায় লোকজন এলেও গাছটা দেখা যাবে না।’’

শাসন থানার খড়িবাড়ির চৌমাহার অশ্বত্থতলার বাসিন্দারা কাজকর্ম সেরে সন্ধ্যায় দু’শো বছরের পুরনো অশ্বত্থ গাছের নীচে আড্ডা দিতেন। সালিশি সভা থেকে শুরু করে দুর্যোগের মোকাবিলা— কত কিছুর পরিকল্পনা হত সেখানে। সেটিও শিকড় সমেত উপড়ে পড়েছে। চাপা পড়েছে আশপাশের দোকান। দত্তপুকুরের জামতলায় প্রাচীন একটি বিরাট জাম বাগানের ভিতরে গড়ে উঠেছিল শনিমন্দির। ঘূর্ণিঝড়ে অনেকগুলি জামগাছ পড়ে মন্দিরটিও ভেঙে কার্যত গুঁড়িয়ে গিয়েছে।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বারাসতের তিন মাথা মোড়ে হেলা বটতলায় তিনটি বটগাছ ছিল। কয়েক বছর আগেই একটি বটগাছ উপড়ে পড়ে। দ্বিতীয় গাছটির ডাল একটি-দু’টি করে ভেঙে পড়ছিল। বটতলা নামটি ধরে রাখতে আর পুজোয় পাতা লাগে বলে সেখানেই আর একটি বটগাছ লাগান স্থানীয় মানুষ। এই ক’বছরে সেটি বেশ বড়সড়ও হয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি বিশাল মেহগনি গাছকে জড়িয়ে শেষ বটগাছটিও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। পানের দোকানি গোপাল অধিকারী বলেন, ‘‘হেলা বটতলায় আর একটিও বট রইল না।’’ এমন হাল বারাসতের শালবাগান এলাকারও।

বামনগাছি, দত্তপুকুরে বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক মানুষের বাস। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শেখর দাস বলেন, ‘‘যশোর থেকে ছিন্নমূল হয়ে সাকিন-জামতলায় ঘর বেঁধেছিলাম। আমপান যেন ঠিকানাহীন করে দিয়ে গেল।’’

তবে হাল ছাড়ছেন না স্থানীয় মানুষ। বারাসতের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী গৌতম দে বলেন, ‘‘আমপান, করোনা সামলে আমরা আবারও ওখানে বটগাছ বসাব। হেলা বটতলা নামটা হারাতে দেব না।’’

Cyclone Amphan Cyclone Amphan in West Bengal Banyan Tree

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy