সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
‘অ্যাকশন’ দেখার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই ‘অ্যাকশন’ কি তিনি নিলেন? কী সেই ‘অ্যাকশন’? তা নিয়ে রহস্য এবং জল্পনা তৈরি হল। মধ্যরাতের কিছু আগেই শনিবার রাত ১১টা ৪২ মিনিটে রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল একটি বার্তা পাঠিয়েছেন নবান্নে। সেই বার্তা গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও। মুখবন্ধ খামে গোপনীয় বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে কী রয়েছে তার কোনও ইঙ্গিতও দেয়নি রাজভবন।
সম্প্রতি যাদবপুর-সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদলের জন্য মধ্যরাতকেই বেছে নিয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। এ নিয়ে শাসক তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের পক্ষে প্রশ্নও তোলা হয়। রাজ্যপাল কেন রাতেই বড় বড় সিদ্ধান্ত নেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শনিবারও ‘বড়’ সিদ্ধান্ত জানানোর ইঙ্গিত দিয়ে মধ্যরাতের কথা বলেছিলেন বোস। শনিবার সকালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘আজ মধ্যরাতের জন্য অপেক্ষা করুন। অ্যাকশন কাকে বলে দেখতে পাবেন।’’ এর পর থেকেই অপেক্ষা ছিল, কী সিদ্ধান্ত জানাতে চলেছেন তিনি? শনিবার মুখবন্ধ খামে কী লিখে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে বোস পাঠিয়েছেন তা নিয়ে মুখে কুলুপ রাজভবনের। ফলে আপাতত রাজভবন, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কিছু না জানানো পর্যন্ত জল্পনাই ভরসা। তবে এটা ঠিক যে, রাজ্যপাল এমন কিছুই জানিয়েছেন যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় উঠতে পারে। সেই কারণেই এত গোপনীয়তা।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। সম্প্রতি যা আরও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একের পর এক অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসানো হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক গৌতম মজুমদারকে উপাচার্য করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরে আবার শুভ্রকমলকে রবীন্দ্রভারতীর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে, গত মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারির সুরেই জানিয়েছিলেন, কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজভবনের কথা মতো চললে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে রাজ্য। সেই হুঁশিয়ারিতেও অবশ্য তেমন লাভ হয়নি। সে দিন রাতেই কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসাবে অধ্যাপক কাজল দে-কে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রেও রাজ্যের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করেননি বলে অভিযোগ।
রাজ্যপালের এ হেন আচরণ নিয়ে সরকারের পক্ষে সব চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি একের পর এক উপমা দিয়ে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করতে থাকেন। এমনই আবহে গত শুক্রবার ব্রাত্য রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে তলব করেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর ডাকও ১৭ জন রেজিস্ট্রার উপেক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অনুপস্থিত ওই ১৭ জন রেজিস্ট্রারকে শুক্রবার শোকজ়ের হুঁশিয়ারিও দেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে অবশ্য তিনি জানান, অনুপস্থিতির কারণ তিনি জানেন। রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘তা হলে হুমকির বাতাবরণ তৈরি করছে কে? হাড় হিম করার ঠান্ডা সন্ত্রাস তৈরি করছে কে? কে তবে ভয় দেখাচ্ছে? রাজার বাড়ি না বিকাশ ভবন?’’
শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রসঙ্গে শনিবার রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘মধ্যরাতের অ্যাকশনের’ কথা বলেন। এর পর থেকেই রাজ্যপাল কী ‘অ্যাকশন’ নিতে পারেন তা নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়। সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গেও বৈঠক করেন বোস। এর পরে মধ্যরাতের খানিক আগেই তিনি গোপন ‘অ্যাকশন’ নিলেন।
রাজ্য ও কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানোর কথা রাজভবন প্রকাশ্যে আনার পরে পরেই শিক্ষামন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্যপাল মধ্যরাতে ‘অ্যাকশন’ নেবেন বলার পরেই টুইট করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন ব্রাত্য। লিখেছিলেন, ‘‘মধ্যরাত পর্যন্ত দেখুন, অ্যাকশন দেখুন।’’ তার পরেই ব্রাত্যের টুইটে বলা হয়েছে, ‘‘সাবধান! সাবধান! সাবধান! শহরে নতুন রক্তচোষা (ভ্যাম্পায়ার) এসেছে। নাগরিকেরা দয়া করে সতর্ক থাকুন। ভারতীয় পুরাণ অনুযায়ী, ‘রাক্ষস প্রহরের’ জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy