অস্থায়ী আস্তানায় রান্নার আয়োজন। নিজস্ব চিত্র।
বানভাসি চতুর্দিক। ঠাঁইনাড়া মানুষজন বাঁধের উপরে ত্রিপল খাটিয়ে দিন গুজরান করছেন। শুকনো খাবার ফুরিয়েছে। খিদে মেটাতে ভাত আর আলু সেদ্ধটুকু তো করতে হবে! সেই চাহিদার সুযোগ নিয়েই প্লাবিত এলাকায় শুরু হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের কালোবাজারি। ন’শো টাকার সিলিন্ডার এক হাজার, বারোশোতেও বিকোচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে পটাশপুরের তালছিটকিনি, তালাডিহা-সহ একাধিক গ্রামে বহু ঘরদোর ভেসে গিয়েছে। যে সব বাড়ি আস্ত রয়েছে, তার একতলা এখনও ডুবে। প্রাণে বাঁচতে শুকনো খাবার, চাল-আলু আর মাথা গোঁজার মতো কিছু সরঞ্জাম নিয়ে বানভাসিরা ঘর ছেড়েছেন। আপাতত রয়েছেন নদীবাঁধের উপরে ত্রিপলের তাঁবুতে। দুর্গত পরিবারগুলির কেউ কেউ উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস সঙ্গে নিয়েই ঘর ছেড়েছিলেন। কিন্তু গত আট দিনে তাঁদের অনেকেরই সিলিন্ডার ফুরিয়েছে। অনেকে আবার অন্যের গ্যাসে রান্না করে দু’মুঠোর বন্দোবস্ত করছেন।
জলভাসি মানুষজনের এই দুর্দশার সুযোগ নিয়েই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। অনেকে টাকা ধার নিয়ে জল ভেঙে এসে মংলামাড়ো, অমর্ষি, পটাশপুর থেকেও গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় শঙ্কর পড়িয়া বলছিলেন, ‘‘গত রবিবার রান্না করার সময় সিলিন্ডার ফুরিয়ে গিয়েছিল। আমগেছিয়া বাঁধের উপর দোকানে কোথাও সিলিন্ডার নেই। শেষে নৌকা ভাড়া করে মংলামাড়ো থেকে বারোশো টাকা দিয়ে সিলিন্ডার এনেছি।’’ কেলেঘাইয়ের বাঁধে আশ্রয় নেওয়া সবিতা গুছাইত আবার বলেন, ‘‘এখন গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় অন্যের উনুনে গিয়ে রান্না করে আনতে হচ্ছে।’’ স্থানীয় শঙ্কর ভক্তারও বক্তব্য, ‘‘সিলিন্ডারের এত দাম চাইছে যে কাঠে রান্না হচ্ছে।’’
দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রান্না করা খাবার বিলি করছে। চড়া দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে তাদেরও। এলাকায় রামকৃষ্ণ মিশনের ত্রাণের কাজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অমিত জানা বলেন, ‘‘এখানে গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়াই যাচ্ছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’’ জানা যাচ্ছে, জলবন্দি পটাশপুরের বিভিন্ন গ্যাস সেন্টারে পর্যাপ্ত সিলিন্ডার নেই। বেশিরভাগটাই খুচরো বিক্রেতারা আগাম মজুত করে রেখেছেন। এখন তা চড়া দামে বাজারে ছাড়ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অমর্ষির এক গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর মানছেন, ‘‘জল বাড়ছে বুঝেই অনেক ছোট দোকানি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে রেখেছিল। জলবন্দি এলাকায় গ্যাসের গাড়ি আসছে না। সুযোগ বুঝে কিছু দোকানি বেশি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করছে বলে শুনেছি।’’
এগরার মহকুমাশাসক সম্রাট মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘গ্যাসের কালোবাজারি বিষয়টি জানা নেই। জানতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy