Advertisement
E-Paper

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর প্যাঁচে ভোটবাজারে সিপিএম যে কুপোকাত, স্বীকার করা হচ্ছে সম্মেলনের দলিলেই

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ রাজ্যে রাজ্যে কার্যত মডেলে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডের ভোটে বিজেপি জোট এবং হেমন্ত সোরেনের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছে মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রকল্প।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ভোটবাজারে জমি পেতে সমস্যা সিপিএমের!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ভোটবাজারে জমি পেতে সমস্যা সিপিএমের! গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:০১
Share
Save

সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। নিজেদের ‘হাঁটুর জোর’ না বাড়িয়ে কংগ্রেস-আইএসএফের মতো দলের সঙ্গে কখনও ঘনিষ্ঠতা, কখনও দূরত্বের কারণে জনমানসে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশাও। কিন্তু পাশাপাশিই,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘ লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য গরিব মানুষের মধ্যে জমি তৈরি করতে পারছে না সিপিএম। দলের এরিয়া স্তরের সম্মেলনের প্রতিবেদনে প্রায় সর্বত্র মমতা সরকারের প্রকল্পের ‘প্রভাব’ উল্লিখিত হচ্ছে। তা নিয়ে সম্মেলনে আলোচনাও করছেন সিপিএমের সদস্যরা।

কোথাও সরাসরি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর কথাই লেখা হচ্ছে। আবার কোথাও সব প্রকল্প একত্রে করে বলা হচ্ছে ‘মমতার জনমোহিনী প্রকল্প’-এর জন্য মানুষের সমর্থন তৃণমূলের দিকে থেকে যাচ্ছে। গরিব মানুষের মধ্যে যে সমর্থন এক সময়ে ছিল, তা পুনরুদ্ধার না করতে পারার নেপথ্যে রয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ— প্রায় সর্বত্র এরিয়া স্তরের সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে থাকছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার শুরু করা বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, রিপোর্টে ভোট পর্যালোচনার অংশে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-সহ প্রকল্পগুলির উল্লেখ থাকছে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক এরিয়া সম্মেলনের রিপোর্টে (যার বেশ কিছু নমুনা আনন্দবাজার অনলাইনের হেফাজতে রয়েছে) এমনও লেখা হয়েছে যে, ‘পার্টির মিছিলে আসা মহিলারাও বুথে গিয়ে আমাদের ভোট দিচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।’ দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার গ্রামাঞ্চলের সিপিএমের এরিয়া কমিটির রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘যে বুথে আমরা ওই এলাকারই ১৫০ জন নিয়ে ভোটের সময়ে মিছিল করেছি, সেখানে ফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছে পার্টির প্রার্থী ৬৫টি ভোট পেয়েছেন।’ পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলার একটি এরিয়া সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে এমনও লেখা হয়েছে যে, মমতার প্রকল্প আর বিজেপির আগ্রাসী রাজনীতির সামনে দল দাঁড়াতে পারছে না। সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা অনেকেই একান্ত আলোচনায় মানছেন, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো প্রকল্প যেমন মমতার ভোটকে সংহত করে বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তেমনই বামেদের পথে বসার উপক্রম হচ্ছে।

মমতার প্রকল্প নিয়ে সিপিএমের একাংশের কর্মীদের নাক সিঁটকোনোর অভ্যেসেরও ‘সমালোচনা’ উল্লিখিত হয়েছে কোনও কোনও এরিয়া সম্মেলনের প্রতিবেদনে। উল্লেখ্য, সিপিএমের একটি অংশ রয়েছে, যারা ভোটে হারার পরেই মমতার প্রকল্পকে আক্রমণ করে থাকে সমাজমাধ্যমে। এমনও ‘বিপ্লবী’ রয়েছেন, যাঁরা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’কে ‘ভিক্ষা’ বলতেও কুণ্ঠা করেন না। যদিও সিপিএম দলগত ভাবে স্পষ্ট করেই বলেছে, কোনও সামাজিক প্রকল্পকেই তারা ‘ভিক্ষা’ বলে মনে করে না। দলের তরফে এ-ও বলা হয়েছে যে, সামাজিক প্রকল্পকে ভিক্ষা বলা আসলে মানুষকেই অপমান। এই মনোভাব আখেরে দলের ক্ষতি করছে বলেই অভিমত প্রথম সারির নেতাদের অনেকের।

এরিয়া স্তরের সম্মেলনে যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-সহ মমতা সরকারের প্রকল্পের উল্লেখ থাকছে, আলোচনাও হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দলের সম্মেলনে সদস্যরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, সেই পরিসর পার্টিতে রয়েছে। এটা অন্য দলের মতো নয়। সেখানে নানাবিধ বিষয় রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে নাগরিককে প্রজা বানিয়ে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি তৃণমূল যে মৌলিক অধিকার না দিয়ে কেবল ভোটের জন্য কিছু প্রকল্পকে ব্যবহার করছে, সেই মতও আসছে।’’ সুজনের এ-ও বক্তব্য যে, ‘‘দেশে বিজেপির লুট চলছে, আর রাজ্যে তৃণমূলের। এখান থেকে মানুষকে মুক্ত করার লড়াই জারি রাখতে হবে।’’

মমতার অন্যান্য ‘জনকল্যাণমূলক’ প্রকল্প তো রয়েইছে, তবে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ রাজ্যে রাজ্যে কার্যত মডেলে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডের ভোটে বিজেপি জোট এবং হেমন্ত সোরেনের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাসে নগদ অর্থ পাঠানোর প্রকল্প। তার আগে কর্নাটক এবং তেলঙ্গনার ভোটে একই কৌশলে সুফল পেয়েছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিংহ চৌহানও হেঁটেছিলেন সেই পথেই। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা উড়িয়ে বিধানসভা ভোটে সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। উল্লেখ্য, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ধরনের প্রকল্পকে একটা সময়ে ‘রেউড়ি পলিটিক্স’ (পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি) বলে কটাক্ষ করতেন। কিন্তু ভোটের জন্য তাঁর দলও সেই প্রকল্পের পথেই হেঁটেছে বিভিন্ন রাজ্যে। নাম আলাদা হলেও সর্বত্রই ‘জাদুদণ্ডের’ কাজ করছে ‘মমতার মডেল’। সিপিএমের এক তরুণ নেতার কথায়, ‘‘যে ভাবে দিদির মডেল সর্বত্র অনুসৃত হচ্ছে, তাতে ২০২৬-এর আগে কেরলে আমাদের সরকারকেও না এই পথে হাঁটতে হয়!’’

একাধিক রাজ্যের ভোটের ফলাফল বলছে, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে ম্লান করে দিচ্ছে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে মাসে নগদ দেওয়ার প্রকল্প। উল্লেখ্য, কেরলেও পর পর দু’বার সরকারে এসেছে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। সেখানেও যে বামেদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা মাথাচাড়া দিচ্ছে, তা প্রতিফলিত হয়েছে গত লোকসভা এবং সদ্যসমাপ্ত ওয়েনাড় লোকসভা ও দু’টি বিধানসভার উপনির্বাচনে। সেখানে বাম-কংগ্রেসের দ্বিমেরু রাজনীতির মধ্যেই মাথা তুলছে বিজেপি।

বাংলায় যে প্রকল্প তৃণমূলের ভোটের ভান্ডারে লক্ষ্মীকে ‘অচলা’ রাখছে, সেই প্রকল্পের প্যাঁচেই সিপিএম ভোটের ময়দানে কুপোকাত!

CPM Lakshmir Bhandar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।