বেনজির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সিপিএমে। দলের অন্দরে ভোটাভুটিতে হেরে জেলা কমিটি থেকে বাদ চলে গিয়েছেন স্বয়ং জেলা সম্পাদক! সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে পরবর্তী জেলা সম্পাদক নিয়ে জট ছাড়াতে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে রাজ্য কমিটির সদস্যদের আলাদা করে মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সিপিএম।
জেলা সম্মেলন থেকে গঠিত হয় নতুন জেলা কমিটি। সেই কমিটির প্রথম বৈঠক থেকে বেছে নেওয়া হয় জেলা সম্পাদক। সিপিএমের এই সাংগঠনিক নিয়মের বড়সড় ব্যতিক্রম ঘটে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। জেলা কমিটির প্যানেল ঘিরে বিতর্কের জেরে কমিটি গঠন না-করেই শেষ করে দিতে হয়েছিল জেলা সম্মেলন। তার পরে সম্মেলনের প্রতিনিধিদের ফের ডেকে পাঠিয়ে ভোটাভুটির পরে তৈরি হয়েছে ৭৪ জনের নতুন জেলা কমিটি। একটি পদ এখনও শূন্য। তবে ভোটাভুটিতে হেরে সেই কমিটিতে জায়গা পাননি দলের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। পরিবর্তে কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন মধ্যমগ্রামের সনৎ বিশ্বাস, যাঁর নাম দলের পেশ করা প্যানেলে ছিল না। নতুন জেলা কমিটিকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে বৈঠকে ডাকা হয়েছে কাল, বুধবার। সূত্রের খবর, জেলা কমিটির ওই বৈঠকের আগে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে রাজ্য কমিটির ৭ জন সদস্যের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলবেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁদের আগাম মতামত নিয়ে জেলা সম্পাদক বাছাইয়ে জটিলতা এড়াতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সিপিএম সূত্রের খবর, পরবর্তী জেলা সম্পাদক হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচ নেতা-নেত্রী। তবে তার মধ্যে অন্তত দু’জন আছেন, যাঁরা এই জটিল পরিস্থিতিতে জেলার দায়িত্ব কাঁধে নিতে আগ্রহী নন। এই মুহূর্তে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে যে ৭ জন রাজ্য কমিটিতে আছেন, তাঁদের মধ্যে পলাশ দাস দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার রাজ্যে খেতমজুর সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন। মৃণালের অসুস্থতাজনিত ছুটির সময়ে পলাশ অতীতে জেলার ভার সামলেছেন। জেলা সম্পাদক ঠিক না-হওয়ায় আপাতত পলাশকে আহ্বায়ক করেই জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, পরিস্থিতির নিরিখে মৃণালের উত্তরসূরি হিসেবে পলাশের দিকেই পাল্লা ভারী। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আর কোনও বিতর্ক চাই না। যথাসম্ভব সহমতের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।’’
উত্তর ২৪ পরগনা এমন এক জেলা, যেখানে বসিরহাট থেকে ব্যারাকপুর বা বনগাঁ থেকে নৈহাটি— নানা এলাকায় নানা সমীকরণ বহমান। যিনি জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পাবেন, তাঁকে ‘ভারসাম্যে’র কৌশল রাখতে হবে, এই ‘বাস্তব’ মাথায় রাখতে হচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে। ভারসাম্যের স্বার্থেই মৃণালকে রেখে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন প্রাক্তন জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। বিকল্প ঠিক করার আগে তাঁর মতও নেওয়া হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)